প্রাকৃতিক মনােরম পরিবেশকে উত্তপ্ত করে মেঘালয় বিধানসভার ভােট : এবারও প্রার্থী মানস চৌধুরী


অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : 
বর্ণময় রঙীন পাহাড়ী ফুল রােডােড্রেনডন, সুস্বাদু ষ্টবেরি, নাসপতি, ঝাউ-পাইনের দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ পাহাড় থেকেনাকালিকাল, সেভেন সিষ্টার, এলিফেণ্ট প্ৰভৃতি অজস্ৰ নাম না জানা ঝর্নার ঝড় ঝড় শব্দ, জৈব বৈচিত্রে ভরপুর বুনােগন্ধমাখা, ফলমূল প্রজাতি, কীট-পতঙ্গ, গারাে, খাসিয়া, জয়ন্তীয়া পাহাড়ের বর্ণময় উপজাতি গােষ্ঠীকে সজীব করে রেখেছে। মন্দা, দামরিং, সিমসাং, উমিয়াম খয়াম, মিনতাং প্রভৃতি খরস্রোতা পাহাড়ী নদী সেহরা বা চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিস্নাত সবুজ পাহাড়গুলিকে করেছে আরও প্রাণবন্ত। এত ফল, ফুল বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড, মেঘলা চিতা (মেঘালয়ের জাতীয় পশু), পাহাড়ী ময়না (মেঘালয়ের জাতীয় পাখি), বর্ণ বৈচিত্র্যে সমাহার ঢেউ খেলানাে পাহাড়ে রােদ-বৃষ্টিছায়ার রহস্যময়তা, প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ, স্থানে স্থানে শ্বেত শুভ্র বরফের আস্তরণ, মাথায় মেঘের আলয়। এমন সুন্দর সজীব ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে মজুত আছে লক্ষ লক্ষ টি এন টি ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক, মনােরম প্রকৃতির গহ্বরে ধ্বংসের বিষ মেঘালয়কে অনন্য মাত্ৰা দিয়েছে। 
পশ্চিম খাসি জেলায় দুটি জায়গায় ১৩-১৪ মেট্রিকটন ইউরেণিয়াম জমা আছে। দেশের ঝাড়খণ্ড এবং অন্ধ্রপ্রদেশের পর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘালয়ে এত ইউরেনিয়ামের মজুত ভাণ্ডার, যা দেশের মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশ। বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যবান ইউরেনিয়াম ছাড়াও কয়লা, আকরিক লােহা,বক্সাইট, জিপসাম, চুণাপাথর, গ্র্যানাইট প্রভৃতি মূল্যবান খনিজ সম্পদ মেঘালয়কে সমৃদ্ধ করেছে। খাসি ছাত্র সংস্থা সহ অন্যান্য সংগঠন এ্যাটমিক এ্যানার্জির উৎস ইউরেনিয়াম ব্যবহারে আপত্তি জানিয়েছে, কারণ বিস্ফোরক পদার্থ এই বিষ বাইরে এলে মেঘালয়ের পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংস তাে হবেই তা মানুষের অস্থিত্বও বিপন্ন হয়ে পড়বে। 
কিন্তু দুঃখের বিষয় মেঘালয়ের সমৃদ্ধশালী খনিজ সম্পদ সদ্ব্যৱহার হচ্ছেনা।৩০ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার তলে বাস করেন। এবং একাংশের হাতে কোটি কোটি টাকা সম্পদ। মেঘালয়ের জনবিন্যাসে আছে বৈচিত্র্য, প্রায় ৭০ শতাংশ খ্রীষ্টান, ১৩ শতাংশ হিন্দু, ১১.৫ শতাংশ উপজাতি এবং ৪.৩ শতাংশ মুসলিম জনগােষ্ঠীর মানুষের বাস। খাসি, গারাে এবং ইংরেজী প্রধান ভাষা হলেও প্রায় ৩০ লক্ষ জনসংখ্য অধ্যুষিত মেঘালয়ে দুই লক্ষাধিক মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। ২২,৪২৯ বৰ্গ কিঃমি এলাকার ক্ষুদ্র রাজ্যে মেঘালয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ জনসংখ্যার মানুষ বসবাস করে, সে ক্ষেত্রে অসমের জনসংখ্যা ৩ কোটিরও বেশি। ১৯৭২ সালের রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি পায় মেঘালয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর মেঘ-বৃষ্টির আধিক্য দেখে মেঘালয়কে মেঘের-আলয় বলে অভিহিত করেছিলেন। সেই শৈল নগরী শিলং ছিলাে কবিগুরুর পছন্দের জায়গা। এখানে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থশেষের কবিতা’ জন্ম দিয়েছি। 
সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখদের স্মৃতিবিজড়িত শিলং শহরে সাহিত্য সংস্কৃতির অনেক ক্ষেত্রে বাঙালীরা অবদান রেখে গেছেন। শিলংয়ের প্রাক্তণ সাংসদ বি.বি.দত্ত পণ্ডিচেরী থেকে ঋষি অরবিন্দের ভষ্মধার এনে শিলং শহরের কেন্দ্র স্থলে অরবিন্দ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান। কায়েমী স্বার্থান্বেষী চক্রের ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে হাজার হাজার বাঙালী এক দিন মেঘালয় ছেড়ে প্রতিবেশী অসম, পশ্চিমবংগ সহ বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। বর্তমানে মেঘালয়ে পরিস্থিতি শান্ত, তবে নির্বাচনের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়েছে। 
মানস চৌধুরী
শিলং শহরের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম শহরের ৪টিনির্বাচন কেন্দ্রে বাঙালিরায় সংখ্যধিক্য, প্রায় লক্ষাধিক বাঙালি ভােটার। এই বাঙালি ভােটারদের মন জন করে শিলং টাইমস’র কর্ণধার মানস চৌধুরী একবার শিক্ষামন্ত্রী পদে বসেছিলেন। তিনি এবারও উত্তর শিলং কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শিক্ষমন্ত্রী থাকাকালে বাঙালিদের স্বার্থে অনেক উন্নয়ন মূলক কাজ করেছিলেন। রিলবং ক্লাবের সদস্যরা মানস চৌধুরীকে জেতানাের জন্য জোরদার প্রচার চালাচ্ছে। শিলং শহর সংলগ্ন কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী এল হেকের প্রচার অভিযান তুঙ্গে। 
মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা এবার দু জায়গা থেকে লড়ছেন। আমপাতি এবং সাংসেক কেন্দ্র থেকে। মেঘালয়ের রাজনৈতিক জগতের প্রতিষ্ঠান বলা যেতে পারে সাংমা পরিবারকে লােকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ পি. এ সাংমার জনপ্রিয়তা ছিলাে প্রশ্নাতীত তার পুত্র করনাড সাংমা ন্যাশন্যালিষ্ট পিপলস পার্টি (এন পিপি)কে ধরে রেখেছেন। অধিকাংশ কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছেন।তাদের সমর্থন নিয়ে বিজেপি ক্ষমতা দখল করতে পারে বলে পূর্বাবাস পাওয়া যাচ্ছে। 
উইলিয়ামনগরের এন সি পি প্রার্থী জোনাথন সাংমা জি এন এল-এ জঙ্গিদের হাতে ন্যসংশ ভাবে খুন হয়েছেন। সাংমার পত্নী ক্রিনিল্লা আর মারাককে প্রার্থী করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ফলে রাজ্যে জুড়ে সহানুভূতির হাওয়া এন সি পির পক্ষে যাচ্ছে। মুকুল সাংমা নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে স্বজন-পােষণ দুর্নীতির অভিযােগকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি এবং এন পি পি তাদের ব্যালট বাক্সো পূর্ণ করতে চাইছে। পশ্চিমবংগের মমতা ব্যনার্জি নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস ৫-৬টিকেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে। প্রাক্তন গারাে জঙ্গি নেতা বার্নাড সি মারাক মমতা ব্যনাজীৰ বিভিন্ন নীতির সমর্থক। তিনি তুরা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 
পি.এ সাংমার কন্যা তথা প্রাক্তন কেন্দ্ৰীয় মন্ত্রী আগাথা সাংমার বিরুদ্ধে। এন পি পির সঙ্গে বিজেপির অঘােষিত সমঝােতার কথা শােনা যাচ্ছে। রাজ্যে দ্বিতীয়জন বাঙালী প্রার্থী ফুলবাড়ীর বিনয় ঘােষ, তিনি বিজেপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্ৰ মােদি প্রচারাভিযানে এসে কংগ্রেস দলের অপশাসন ও দুর্নীতি নিয়ে আক্রমণ করে মেঘালয়ের সার্বিক উন্নয়নের এক গুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। ন্যাডা চেয়ারম্যান হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রপতি মন্ত্ৰী কিরেণ রিজেজু, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী তৰুণ গগৈ প্রমুখ দু ডজনের বেশি নেতা-মন্ত্রীরা মেঘালয়ের সুন্দর মনােরম পরিবেশ উত্তপ্ত করে গেছেন। আগামি কাল ২৭ ফেব্রুয়ারী, ৬০টি বিধানসভায় আসনে ভােটে কাদের পাল্লা ভারি হবে তা ৩ মার্চের আগে পূর্বাভাস দেওয়া যাবেনা।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: