হাতিরা তাদের করিডরে মৌমাছির গুঞ্জন গ্রাহ্য করবে না : ডঃ আনোয়ার উদ্দিন চৌধুরী


অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : 
অসমে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম হাতি। সারা দেশের মধ্যে এক বৃহৎ সংখ্যক হাতির আবাসস্থল অসম। রাজ্যে ৫ হাজারেরও বেশি হাতি আছে। ক্রমবদ্ধমান জঙ্গল ধ্বংসের ফলে হাতিদের যাতায়াতের করিডরগুলি নিশ্চিন্ন হয়ে যাচ্ছে। হাতিদের দৈনন্দিন খাবার এক-ডের কুইণ্টল সবুজ ডাল-পাত, সেই খাদ্যের অভাবের ফলে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতি। মানুষ হাতিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই হাতিদের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। 
রাজ্যের চীফ কনজারভেটর অফ ফরেষ্ট এন, কে, বাসু আজ জানান— গত এক সপ্তাহে শিবসাগরে দুটি এবং লামডিঙে দুটি হাতির মৃত্যু হয়েছে। সবগুলি বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে মারা গেছে। তিনি বলেন, মৌমাছির গুঞ্জন শুনিয়ে হাতি তাড়ানাের খবর তার জানা নেই। কিন্তু কাৰ্যকরী হবে কি না, সন্দেহ আছে্৷ 
উল্লেখ্য ২০১২ সালের পশুগণনা অনুযায়ী রাজ্যে ৫,৬২০ হাতি আছে। রাজের বিভিন্ন বনাঞ্চলে হাতিদের যাতায়াতের জন্য ১০,৯৬৭ বর্গ কিলোমিটার সংরক্ষিত। মানুষকে সচেতন করে বিপন্ন হাতিগুলোকে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার পরও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রেল লাইনে হাতিদের চাপা পড়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। গুয়াহাটি মহানগরীর উপকণ্ঠে দীপার বিল পক্ষী অভয়ারণ্যের পাশে রাণী বনাঞ্চলে হাতিদের রেললাইনে পৃষ্ঠ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য উত্তর-পূর্বসীমান্ত রেলওয়ে এক অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করতে চলেছে। 
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের বরিষ্ঠ জনসংযোগ অফিসার নৃপেন ভট্টাচার্য জানান, মৌমাছির গুঞ্জন শুনিয়ে হাতি তাড়ানোর অভিনব পদ্ধতি রঙিয়া রেলওয়ে ডিভিশন গ্রহণ করেছে। 
এই সম্পর্কে আজ রাজ্যের বিশিষ্ট প্রকৃতিপ্রেমী, পক্ষী বিশেষজ্ঞ ডঃ আনােয়ার উদ্দিন চৌধুরী জানান, এই পদ্ধতি ঠিকমতো কাজ করবে কি না, সন্দেহ আছে। কারণ, রাজ্যে ক্রমগতভাবে বন ধ্বংসের ফলে হাতিদের চলা-ফেরার রাস্তা করিডরগুলি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে হাতিদের দৌরাত্মা বেড়েই চলেছে। রাজ্যের অধিকাংশ রেলওয়ে লাইন করিডরের আশ-পাশ দিয়েই গিয়েছে। তাই মৌ-মাছির হাজার গুঞ্জন শুনালেও হাতিরা শুনবেনা। হাতিদের নিজস্ব রাস্তায় কেউ বাধা দিতে পারবে না। তিনি অভিযোগ করেন, কাজিরঙার বিরল প্রজাতির এক শৃংগবিশিষ্ট গন্ডারসহ হাতিদের হত্যার ক্ষেত্রে আজকাল অত্যাধুনিক মারনাস্ত্র নিয়ে উগ্ৰপন্থীরা এগিয়ে এসেছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করা যায়, কিন্তু জঙ্গি গোষ্ঠীকে করায়ত্ব করা সহজ কথা নয়। তাই অত্যাধুনিক মারনাস্ত্র ব্যবহারকারী চােরা চিকারিদের অন্য কোনও অত্যাধুনিক কৌশল সরকারকে ব্যবহার করতে হবে। প্রকৃতিপ্ৰেমী ডঃ চৌধুরী আরও বলেন, আজকাল গন্ডারের খড়গ কাটা, হাতিদের দাঁত কাঁটার সঙ্গে এমন কি হাতিদের মাংস খাওয়া শুরু হয়েছে। যা অত্যন্ত মারাত্মক। হাতিদের সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন সংঘাতের উপরে গবেষণা করা ডঃ চৌধুরী বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি মানুষের সহানুভূতি হ্রাস পাচ্ছে। তারই চরম পরিণতি হচ্ছে এই সংঘাত। 
তিনি জনগণকে আবেদন করেন, নিজেদের ফসল রক্ষার তাগিদে মারাত্মক বিদ্যুৎবাহী তাঁর এবং কোনও ধরণের বিষ ব্যবহার করবেন না, করিডরগুলির মধ্যে কোনও ধরণের হস্তক্ষেপ করবেন না। অসমের বৃহত্তর স্বার্থে পরিবেশ-প্রকৃতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসুন।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: