অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি :
রাজ্যের বন বিভাগ শেষ পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল করল। শোণিতপুর জেলার তেজপুর-বালিপারায় রেল লাইনে গুয়াহাটি-নাহারলাগুন ট্রেনে ধাক্কা খেয়ে এক গাভিনীসহ ছয়টি হাতির করুণ মৃত্যুর জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছে বন বিভাগ। বন মন্ত্রী প্রমীলা রাণীব্ৰহ্ম বলেছেন, রেলওয়ে গেটম্যান যদি সতর্ক হয়ে ষ্টেশন মাষ্টারকে আগাম খবরটি জানাতো, তবে ছয়টি হাতির প্রাণ বাঁচানো যেত।
রাজ্যের বনমন্ত্রী ব্ৰহ্ম বর্তমানে বিশ্বের সব থেকে বেশি হাতির রাষ্ট্র কাম্বোডিয়া সফরে ব্যস্ত। হাতি-মানুষের সংঘাতের প্রকৃত কারণ জানার জন্য বনমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেছেন বলে জানা গেছে।
আজও সামাগুড়ির গোন্ধালি কাছাড়িতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক তাঁরের স্পর্শে দুই হাতির করুণ মৃত্যু ঘটেছে। আজ গোয়ালপাড়া জেলার ধুপধারায় বহু ঘর-বাড়ী হাতি ভাংচুড় করেছে। বাক্সা, বিহালী, নুমুলিগড়, হােজাই প্রভৃতি জায়গা থেকেও হাতিদের ফসল খেতে হানা এবং ঘর-বাড়ী ভাঙার খবর এসেছে।
গত তিন মাস ৪০ টি হাতির মৃত্যু ঘটলো। গত ১২ বছরে ৮৫৩ টি হাতির মৃত্যু ঘটেছে এবং হাতী-মানুষের সংঘাতে ৮৫৭ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যে দ্রুত গতিতে বনাঞ্চল সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি বুনো হাতির সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। ২০১১ পশু গণণা অনুযায়ী রাজ্যে ৫,৬২০ টি হাতি আছে। সাড়া দেশের মধ্যে অসমের স্থান শীর্ষে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যে ব্যাপক হারে বন ধ্বংস হচ্ছে। রাজ্যের ২৯৬টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১.৯৭লাখ হেক্টর বনভূমি বেদখল হয়েছে। ২৩টি জাতীয় উদ্যানের ১৪১লাখ হেক্টর জমি বেদখল হয়েছে। ঢেকিয়াজুলির কাছে সোনাই-রূপাই অভয়ারণ্যের ৯০ শতাংশ জমি বেদখল হয়েছে। মজার কথা এই বেদখলকৃত বনাঞ্চলে কয়েকটি সরকারি বিদ্যালয়, এমন কি ভোট কেন্দ্রও স্থাপন করা হয়েছে।
রাজ্যের বিশিষ্ট হস্তী প্ৰেমীক জয়নাল আবেদিন অভিযোগ করেছেন, ব্যাপক হারে বন ধ্বংসের ফলে হাতিদের খাদ্য সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। দিহিং-পাটকাই অঞ্চলে লবন মিশ্রিত মাটি খাবার জন্য হাতিরা নিয়মিত আসতাে। সেই অঞ্চলে নিমাণ কার্য চলার ফলে খাদ্যের জন্য হাতিরা অন্যান্য লোকালয়ে হামলা করছে। হাতিদের প্রিয় বাঁশ, কলাগাছ প্রভৃতি। ধান ফলনের সময় হাতিদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। তিনি পরামর্শ দিলেন, পরিত্যক্ত সরকারি জলাজমিগুলিতে বছরে দুবার ধান রোপন করার সঙ্গে ব্যাপক হারে বাঁশ এবং কালাগাছ রোপন করা হােক। তা বাস্তবায়িত হলে হাতিরা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দেবেন। তিনি বলেন, ডিব্ৰু-সাইখোয়া বনাঞ্চলে বহু হাতি আছে। সেখানে যথেষ্ট গাছ-গাছরা আছে। যা হাতিদের খাবারের উপযুক্ত। যার ফলে একটি হাতিও বাইরের জনপথে আসে না। তিনি এবং রাজ্যের বিশিষ্ট প্রকৃতি প্রেমী সৌম্যদ্বীপ দত্ত আশংকা ব্যক্তি করেন, হাতিসহ অন্যান্য বন জন্তুর প্রতি মানুষের সহমর্মিতা ও ভালবাসা যদি বজায় না থাকে, তবে এক-ডের দশকের মধ্যে অসমের হাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
বনবিভাগের এক মুখপাত্র জানান, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনােয়াল উত্তর-পূর্বসীমান্ত রেলওয়ের অফিসারদের সঙ্গে এক বৈঠকে হাতিদের রেল লাইনে মৃত্যু প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আজি জানিয়েছিলেন। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থায় গ্রহণ করে নি।
কিন্তু উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দাবী করেছেন, হাতিদের কোনও করিডরে রেল লাইন বসানো হয়নি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুরোধ মেনে বন বিভাগ হাতি সংরক্ষণে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। গত দশ বছরে ৮৫৩টি হাতির মধ্যে অধিকাংশ হাতি রেল লাইন পার হতে গিয়ে মারা গেছে। বাকীরা চােরা চিকারি, বিদ্যুৎ স্পর্শ, বিষক্রিয়া প্রভৃতির ফলে প্রাণ হারিয়েছে।
0 comments: