প্ৰসঙ্গ : অাসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন-উৎকোচ!


এদেশের মধ্যবিত্ত সমাজ বা আধা-শিক্ষিত নাগরিকদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারনাটা অনেকটা এরকম; বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকটা মহলের অভ্যন্তরে থাকা রাজার বউয়ের মতো। তাকে নিয়ে টু শব্দটিও করা যাবে না। কারণ এখানে ‘ব্রাহ্মণ’রা বসবাস করেন।আসলে বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটার মধ্যেই যে ঔদার্যের গন্ধ অনুভব করা যায় তা এখন গত প্রায়। সম্ভবত এটা আড়াল করার জন্যই এই চেষ্টা।এই ভব্য জায়গায় এমন সব অভব্য কাণ্ড-কারখানা ঘটে তা মাঝে মাঝে বিস্ময়ের সীমা ছাড়িয়ে যায়। 
যতটুকু সংবাদ হয় ততটুকুর ভিত্তিতে এই ‘নিত্য’বলছি। সঙ্গত কারণেই, যৌন হয়রানি বা নির্যাতন সম্পর্কিত অধিকাংশ ঘটনাই মিডিয়ায় আসে না। তাই আমরা যেটাকে কুয়া হিসেবে দেখছি অন্তরালে সেটা আসলে মহাসাগর। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের ‘ব্রাহ্মণ’ভাবেন
বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন গবেষণা কতটা হয় সেটা একটা আলাদা গবেষণার বিষয়! কিন্তু মোটাদাগে যেটা বেশ ভালোভাবেই হয়, সেটা হল আনুগত্য চর্চা। এক্ষেত্রে ‘কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’। 
 সম্প্রতি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি ব্যাপারটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। অধ্যাপকরা সাধারণত এসব ঘটনাকে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এক্ষেত্ৰ উল্লেখ করা জরুরী যে, কয়েক বছর আগের বাংলাদেশের আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক স্বীকার করেছিলেন যে, ছাত্রীদের সম্মতিতেই তিনি এমনটা করতেন। অধ্যাপক ধূর্ত বটে! তিনি ঐ আমলার মতো, যারা বলে ঘুষটা দেয় বলেই তো নেই। কিন্তু ঐ আমলা যেটা বলেন না তা হল, টেবিলের নিচের ওই লেনদেন না হলে তিনি ফাইলটা জনম জনম আটকে রাখতেন।এই অধ্যাপকও ঐ অংশটুকু উহ্য রেখেছেন। এসব পশুশ্রেণীর অধ্যাপকদের কাছে টিউটোরিয়াল, ইনকোর্স, অ্যাসাইনমেন্ট ও এটেন্ডেনস একেকটা অস্ত্রমাত্র। ছাত্রীদের ওপর এগুলো তারা কড়ায়-গণ্ডায় ব্যবহার করেন। আমলারটা যেমন টাকার উৎকোচ, অধ্যাপকেরটা তেমনি যৌন-উৎকোচ। আমলার ফাইল আটকানোর মতো তিনি নম্বর আটকে রাখেন! এবার দুটি জরিপে চোখ বুলাই।


 ২০১০ সালে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউএনউইমেনের এক জরিপে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ৭৬ শতাংশ ছাত্রীই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আরো খারাপ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হার সবচেয়ে বেশি, ৮৭ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে ৭৬ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ এবং মেডিকেল কলেজে যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৪ শতাংশ ছাত্রী। জরিপে আরো দেখা যায়, বিভিন্ন অশালীন মন্তব্যের মাধ্যমেই ছাত্রীদের সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানি করা হয়। এ হার ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া তিন ভাগের এক ভাগ ছাত্রী মুঠোফোনে কল ও খুদে বার্তার মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হন, ১৫ শতাংশ বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিমার মাধ্যমে, শরীর স্পর্শ করে ১২ শতাংশ, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে ১১ শতাংশ, নজরদারিতে ৯ শতাংশ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ৬ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ ছাত্রী তাঁদের থাকার জায়গা বা পড়াশোনা করার স্থানে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, হয়রানির শিকার ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ করেন না, চুপ থাকেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৯০ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা যৌন হয়রানির বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেননি। এর মধ্যে অর্ধেক কিছুই করেননি এবং চুপ ছিলেন। ২৮ শতাংশ তাদের মেয়েবন্ধুদের বিষয়টি জানিয়েছেন কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না। শুধু ৭ শতাংশ ছাত্রী বিষয়টি তাদের পরিবারকে জানিয়েছেন। লজ্জা, সামাজিক অবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ করেন না। এবং এবিষয়টাকে মৌলিক সমস্যা মনে কৰে না যৌন হয়রানির ঘটনাকে ‘বড় ঘটনা’হিসেবে না দেখার প্রবণতা এখনও অনেকে নারীর যৌন হয়রানিকে উঠতি বালকের ‘দুষ্টুমি’বলতে দ্বিধাবোধ করেন না! এই ভয়ানক মানসিকতা দ্বারা নারী নির্যাতনকারীদের রীতিমতো ‘প্রমোট’করা হচ্ছে।
 বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর যৌন হয়রানিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত। কারন এটা বস্তি নয়, বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে সচেতনতার কিছু নেই, কারন সচেতন মানুষরাই এখানে বসবাস করে। অন্য আর যাই হোক, মানবিক ও সামাজিক প্রয়োজনের তাগিদেই এসব অপরাধের বিচার হওয়া উচিত। অন্তত এই একটি ব্যাপারে ‘রাজনৈতিক আনুগত্য’বিবেচনার বাইরে রাখলে সমাজ কিংবা রাষ্ট্রেরই উপকার। সেই সাথে, ভর্ৎসনা-অব্যাহতি কিংবা সাময়িক বহিষ্কার নামক এসব ‘মসৃণ’ শাস্তিতে দায় এড়ানো যাবে না।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

1 comment:

  1. ভাইজান আপনাকে অষেশ ধন্নবাদ | (এনেকুৱা লম্পটৰ ভণ্ডামিবোৰ সমাজৰ আগত তুলি দিয়াৰ বাবে প্রতিটো জনমতে যেন, আপোনাৰ নিচিনা মানুহৰ জন্ম হয় |

    ReplyDelete