ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দিদের আর কতদিন দুসহ জীবন কাটাতে হবে

দুই প্রধান মন্ত্ৰীর মত সুষমা স্বরাজও বাংলাদেশে গিয়ে প্রত্যৰ্পণ চুক্তির কথা উত্থাপন করলেন না 

গুয়াহাটি : সন্দেহজনক নাগরিক। কিন্তু তারা ভোটার। তাদেরকে অসমে বলা হচ্ছে ‘ডি’ ভোটার। ভারতের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন সেশন ১৯৯৭ সালে রাজ্যের আসু সহ বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী সংগঠনের চাপে পড়ে তখন কার ভোটার তালিকা বিশেষভাবে পুংখানুপুংখভাবে সংশোধনের নির্দেশ দেন। সেই সংশোধনের নির্দেশ পেয়ে নির্বাচনী কৰ্মীরা তড়িঘড়ি করে ভোটার তালিকায় যাদের পদবী আলী, হুসেন, বন্দােপাধ্যায়, চক্ৰবৰ্ত্তী, মুখাজী, দাস প্রভৃতি ধমীয় এবং ভাষিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নামের পাশে রুল দিয়ে ‘ডি’ কথাটি লিখে দেন। যাদের কে সন্দেহজনক অথবা বিতর্কিত (ডাউটফুল অথবা ডিসপিউটেড) ভোটার বলে চিহ্নিত করা হল। সেই ১৯৯৭ সাল থেকে রাজ্যের লক্ষাধিক ডি ভোটাৰ ভোটদানের মতো সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। বিদেশী শনাক্তকরণ ট্রাইবুনালগুলি যাদের কে বিদেশী বলে রায় দিয়েছে তাদেরকে রাজ্যের ছয়টি ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। 
রাজ্যের বিশিষ্ট আইনজীবি এ এস তপাদার আজ জানান, ক্যাম্পে আটকাধীনদের চার্জশীট না দেওয়া পৰ্য্যন্ত আটকে রাখা যায়। কিন্তু রাজ্যের মানবাধিকার সংগঠনগুলি সরকারে দিকে আঙুল তুলে বলছে সরকার যখন জানছে আটকাধীনরা তখন বাংলাদেশের নাগরিক তখন তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে না কেন? দীর্ঘদিন আটকে রেখে সরকার মানবাধিকার লংঘন করছেন। গুয়াহাটি হাইকোৰ্টের আইনজীবি তাপদারও প্রশ্ন তোলেন বিদেশী ট্রাইবুনালগুলি যখন বিদেশী বলে চুড়ান্ত রায় দিয়েছে, তখন সরকারের দায়িত্ব ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকাধীনদের যথাসত্তর সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠিয়ে দেওয়া। অন্যান্যদের মত তিনিও প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত বন্দি বিনিময় বা প্রত্যাৰ্পণ চুক্তি করছে না কেন? প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তৰুণ গগৈকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে জমি বন্টন চুক্তি সহ একাধিক সমঝোতা চুক্তি করে এলেন। 
তারপর ভারতের বর্তমান প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ গেলেন, এবং গত ২৩ ও ২৪ অক্টোবর দেশের বিদেশী মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকায় গিয়ে বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে ভারত-বাংলাদেশ পারস্পরিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে এলেন। সুষমা স্বরাজ অসমের সঙ্গে সম্পর্কিত একাধিক সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর কবেছেন। বাংলাদেশকে অসমের বিদ্যুৎ সরবরাহ, অসমের মধ্য দিয়ে ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ইত্যাদি। কিন্তু স্বাক্ষরিত ১৫ টি প্রকল্পের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যপর্ণ চুক্তি করা হল না। সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের আগে অগপর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত এবং অন্যান্য অগপ নেতারা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংএর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাজ্যের এন আর সি উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বুঝিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যাৰ্পণ চুক্তি করার আর্জি জানিয়ে ছিলেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। রাজ্যের ছয়টি জেলের ডিটেনশন ক্যাম্পে প্রায় সােতশ বন্দিকে আটকে রাখা হয়েছে। বিদেশী ট্রাইবুনালগুলিতে লক্ষ লক্ষ মামলা ঝুলে আছে। বছরের পর বছর ধরে মামলাগুলি চলছে। ডি ভোটারের সংখ্যা যেমন বেড়ে চলেছে সেই সঙ্গে ডিটেনশন ক্যাম্পে সংখ্যাও বাড়ছে। 
কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ ভূমিধর বর্মন আশঙ্খা প্রকাশ করে বলে ছিলেন, “যে হারে রাজ্যে ডি ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে, বাংলাদেশ সরকার দাবি করছে। ভারতে একজনও বাংলাদেশী নেই, তখন এই রাজ্যের ক্রমবদ্ধমান ডি ভোটারদের রাষ্ট্রহীন নাগরিক ঘোষণা করার ছাড়া গত্যন্তর নেই, রাজ্য আর কত বাংলাদেশীদের বোঝা নেবে’। শেষ পৰ্য্যন্ত কি রাজ্যের ক্রমর্বদ্ধমান ডি ভোটারদের আশ্রয় হবে নো ম্যানস ল্যাণ্ডে ? এই প্রশ্নের কোনও জবাব নেই।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: