এন আর সি কোনও সমস্যা নয়, একটি সমাধান সূত্রঃ বিধায়ক কমলাক্ষ দে” পুরকায়স্থ

অমল গুপ্ত :
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট গত ২০১৫র ২১ শে জুলাই এক রায় দিয়ে এন আর সি কর্তৃপক্ষকে বলেছিলেন, চা জনগোষ্ঠীর মানুষকে ওরিজিনাল ইনহেবিট্যান্ট হিসেবে গণ্য করা উচিত। সে কথা উল্লেখ করে বরাক উপত্যকার সামাজিক সংগঠন ‘বরাক উপত্যক বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন’ মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনােয়াল, এন আর সি নােডাল অফিসার প্রতীক হাজেলা প্রমুখদের স্মারক পত্র দিয়ে দাবী করেছিলেন, প্রায় ২৫০ বছর আগে থেকে বরাক উপত্যকার হিন্দু-মুসলিম মানুষ একসঙ্গে বসবাস করছে। ১৮৩২ সালে ব্রিটিশ জমানায় কাছাড় নামের ছোট্ট গ্রামে বসবাস করতেন। ১৮৭৪ সালে অসমের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮০০ শতাব্দীতে ডিমাসা রাজের অধীনে ছিল। শ্ৰীহট্ট (সিলেট) অখণ্ড ভারতের অংশ ছিল। সিলেট ভাগ হওয়ার পরও অধিকাংশ অংশ ভারতের দিকে পড়েছে। সেই অবিভক্ত ভারত সিলেটের আদি বাসিন্দা বরাক উপত্যকার হিন্দু-মুছলমান বাঙালি মানুষ। তারা “বােনাফাইড’ আদি বাসিন্দা। তাদেরকে আজ বলা হচ্ছে ওরিজিনাল ইনহেবিটেন্ট নয়। 
আজ বরাকের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ সেই ঐতিহাসিক কারণ তুলে ধরে বলেন—আজি বরাকের মানুষকে বিদেশি সাজাবার চক্রান্ত চলছে। প্রকৃতার্থে তারাই অসমের ওরিজিনাল বাসিন্দা। ইতিমধ্যে আমার নেতৃত্বে কংগ্রেস বিধায়ক ইমানুল হুদা, রসিদ আলম, শুকুর আলি, রূপজ্যোতি কুমী এবং রাজদ্বীপ গোয়ালা সুপ্রিম কোর্টে ওরিজিনাল ইনহেবিটেন্টএর নানা ব্যখ্যা ও স্পষ্টীকরণ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি। আমরা জানতে চেয়েছি, কিসের ভিত্তিতে ও, আই চিহ্নিত করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীৱি সলমান খুরশিদ, গৌরব আগরওয়ালা, সৈয়দ বি, রহমান এবং প্রদীপ সিং আমাদের পক্ষে ওকালতি করেছেন। বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নোটিস পাঠিয়ে জানতে চেয়েছে, কিসের ভিত্তিতে ও আইচিহ্নিত করণের কাজ চলছে। আগামী ২৯-৩০ নভেম্বর পরবর্তী শুনানি দিন ধার্য কৰা হয়েছে। এই কথা জানিয়ে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের ডেপুটি চীফ হুইপ কমলাক্ষ দে” পুরকায়স্থ আজ দিশপুরে এই প্রতিবেদককে বলেন— আমরা সুপ্রিম কোর্টে প্রতি শ্রদ্ধাশীল, পূর্ণ আস্থা আছে। আশা করি সুপ্রিম কোর্ট আমাদের পক্ষেই রায়দান করবেন। 
তিনি অভিযোগ করেন, এন আর সি নিয়ে রাজ্যে এক অসুস্থ বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি রাজনৈতিক দল-সংগঠনের দাবি শুদ্ধ এন আর সি তালিকা প্রস্তুত হােক। এন আর সি কোনও সমস্যা নয়, একটি সমাধান সূত্র। সরকারই বরঞ্চ আশংকা প্রকাশ করছে, এন আর সি-র খসড়া তালিকা প্রকাশের আগে আইন-শৃংখলা অৱনতি হতে পারে। আমরা কিন্তু তার কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছিনা। এদিকে এন আর সি-র খসড়া তালিকা প্রকাশে ৭মাস বিলম্ব ঘটার সম্ভবনা এবং রি-ভেরিফিকেশন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের সময়সীমা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। আমরা চায়, শুদ্ধ এন আর সি তালিকা প্রকাশ হােক। একইভাবে একবার নয়, অনেকবার রি-ভেরিফিকেশন হােক, এক্ষেত্রে কংগ্রেসের কোনও আপত্তি নেই। এক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। কারণ প্রত্যেকের কাছে যদি বৈধ ভারতীয় নথি-পত্র থাকে। তবে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। আমার বিশ্বাস প্রতিজন ভারতীয় নাগরিকের বৈধ নথি-পত্ৰ আছে। এই তালিকা প্রকাশের ব্যাপারে বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের যেমন কোনও ক্ষমতা নেই, আমাদেরও এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। সুপ্রিম কোিটই সর্বে-সর্বা। আর সে কোর্টের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। 
রাজ্যে এন আর সি প্রস্তুতের কাজ প্রায় চূড়ান্ত। অথচ অসম-বাংলাদেশ সীমান্তের ২৬৩ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৬১ কিলোমিটার জল ও স্থল সীমান্ত উন্মুক্ত হয়ে পড়ে আছে। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ চলছেই। অথচ ৩০ বছর। আগে অসম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল অসম বাংলাদেশ সীমান্ত সীল করা এবং অসমীয়া জনগোষ্ঠীর প্রকৃত সংজ্ঞা নির্ণয় করা। দুৰ্ভাগ্যজনক আজও তা বাস্তবায়িত হল না।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: