পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে সরকারের দুই শরিক দল অগপ এবং বিজেপির মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ

গুয়াহাটি : সর্বানন্দ সনোয়াল নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোঁট সরকারের অন্যতম শরিক অগপ, এবং বিপিএফ, এই দুই শরিক দলের দুজন করে প্রতিনিধি মন্ত্রীসভায় স্থান পেয়েছেন। আরও দুজন করে প্রতিনিধিকে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা চলছে। আজ প্রায় দুবছরের মাথায় শরিক দলের সেই দাবি পূরণ হল না। তা নিয়ে শরিক দলের সঙ্গে শাসক দলের এক দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল দুৰ্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন, তা নিয়েও শরিকদের মধ্যে নানা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের প্রশাসনিক স্তরের কাজ-কর্মে মন্ত্রীদের অখুশি করছে বলে অভিযোগ আসছে। বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্নে অগপ, বিপিএফ নানা প্রশ্ন উত্থাপন করে হিন্দু নাগরিকত্বের তীব্র বিরোধীতা করছে। অগপর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্ৰফুল্ল কুমার মহন্ত প্রকাশ্যে হিন্দু নাগরিকত্ব নীতির প্রশ্নে নিজের দলের সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। 
রাজ্যের আর্থিক অবস্থা ভাল বলে দাবি করা হলেও গত ২৬ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী সনোয়াল অফিসারদের ডেকে রাজ্যে অধিকাংশ বিভাগে যথাযথ উন্নয়ন মূলক কাজকর্ম না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি যথাযথ ভাবে রূপায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা ক্যান্সার বিতর্ক তুলে জাপান সফরে বেরিয়েছেন, তার অনুপস্থিতিতে অর্থ বিভাগের পদস্থ অফিসাররা অভিযোগ নয়, অনুযোগ করেছেন অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করা হলেও প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ টাকা আজও রিলিজ করা হয়নি। ফলে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি সঠিক পথে এগোচ্ছে না। বিশেষ করে পঞ্চায়েত পর্যায়ের কাজকর্ম একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক রোজগার যোজনাও তথৈবৈচ। কিন্তু পূর্ত বিভাগের বেশ কিছু টাকা কেন্দ্র থেকে এসেছে রাজ্যের প্রধান সড়কগুলির কাজ-কর্ম চলছে। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে নানা ভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। রাজ্যের ২৬ হাজারের বেশি গ্রামে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অনুন্নয়ন, অনগ্রসরতা পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে সরকারী মহলেই আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। 
এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাজিমাত করার লক্ষ্যে শরিক দল অগপ আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। রাজ্যের অধিকাংশ জেলায় অগপর শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল কংগ্রস দলীয় সংগঠন মজবুত করতে চেষ্টার কোন কসুর বাকি রাখছে না। অগপ ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দল একক শক্তিতে লড়বে। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে সরকারের দুই শরিক দল অগপ এবং বিজেপির মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। 
বিজেপি সভাপতি রঞ্জিত দাস তিক্ত বিরক্ত হয়ে প্রকাশ্যে বলেই ফেললেন, অগপ-বিপিএফকে আমাদের সঙ্গে নেওয়াই ভুল হয়েছে। কেন্দ্রের এক মন্ত্রী বিপিএফের শক্ত ঘাঁটিতে গিয়ে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিটিসি থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করার কথা বলায় হাগ্রামারা ভিষণ চটেছেন। মন্ত্রী প্রমিলা রাণী ব্রহ্মের সঙ্গে বিজেপি সভাপতির মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ। প্রমিলা বলেছেন, রঞ্জিত দাসের দয়ায় আমরা সরকারে আসিনি। বিজেপিৰ সৰ্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের মধ্যস্থতায় এসেছি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। একক ভাবে লড়লে এবারও বিজেপির বিশেষ কোন লাভ হবে না। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সরকারের শরিকদের মধ্যে যে বিভাজন হতে চলেছে তা প্ৰায় স্পষ্ট৷

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: