সংসদে বিলটি উত্থাপনের পূর্ণ চেষ্টা করা হবে : পরিমল শুক্লবৈদ্য
বিলটি কোন্ড ষ্টোরেজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে : ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে
গুয়াহাটি : বিজেপি তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে অসমের বাঙালি হিন্দুদের রক্ষাকবচের লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রস্তাব সন্নিবিষ্ট করেছিল। তার মধ্যে অন্যতম— বাংলাদেশে নিযাতিত বাঙালি হিন্দুদের এই রাজ্যে স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। আবার সেই কেন্দ্রীয় সরকারই একই লক্ষ্যে ২০১৫ সালের দুইটি নোটিফিকেশন জারি করেছিল। বাংলাদেশে নির্যাতিত হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু লোকদের ১৯৪৬ সালের বিদেশি আইনে এবং ১৯৫০ সালের পার্সপোর্ট আইনের আওতার বাইরে নিয়ে আসা হবে। অর্থাৎ যে কোনও সময় বাংলাদেশে নির্যাতিত বাঙালি হিন্দুরা এই দেশে আশ্রয় নিতে পারবে। দেশের সব রাজ্যে এই নোটিফিকেশন দুটি কার্যকরী হয়েছে। কিন্তু অসমের ক্ষেত্রে কেন হলো না, সেই প্রশ্নে রাজ্যের বিজেপি সরকার বিস্ময়করভাবে নীরব। জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি)র নবায়নের কাজ চলছে। অসম চুক্তির ৬ নং ধারার গাইড মেনে। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে ভিত্তিবর্ষ হিসেবে গণ্য করে এন আর সির কাজ চলছে। কিন্তু এর পর যে সব সংখ্যালঘু মানুষ এরাজ্যে প্রবেশ করেছে, তাদের ভাগ্যে কি ঘটবে?
আজ এই প্রশ্ন করা হয়েছিল রাজ্যের পূৰ্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যকে। তিনি তাৎক্ষণিক জবাব দিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালের পরে আসা বাঙালি হিন্দুদের স্বাৰ্থ সুরক্ষার লক্ষ্যে আগামি লোকসভা অধিবেশনে বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি উত্থাপনের চেষ্টা করা হবে। তিনি স্বীকার করেন, তা যদি করা না হয়, তবে বাঙালি হিন্দুদের বিপদে পরতে হতে পারে। তাদের রক্ষাকবচের জন্য সরকারের সদিচ্ছার কোনও অভাব নেই। আগামীতে তারা নতুন দিল্লীতে গিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে বিলটি পাশ করার সব চেষ্টা চালানো হবে। তাই রাজ্যের বাঙালি হিন্দুদের আতংকগ্ৰস্থ হওয়ার কিছু নেই।
শুধুমাত্র নির্যাতিত বাঙালিদের এদেশে আশ্রয়ের প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশে নির্যাতিত হওয়ার প্রমাণ ছাড়া একজন বাঙালি হিন্দুকেও এরাজ্যে গ্রহণ করা হবে না। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারবার-বার বলছে, তাদের দেশে বাঙালি হিন্দুদের ওপরে কোনও নির্যাতন চালানো হচ্ছেনা। অসমে কোনও বাংলাদেশী নেই। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী গুয়াহটিতে স্পষ্টস্পষ্টী জানালেন, ভারত সরকার আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারকে অসমের বাংলাদেশীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে একটি শব্দও বলেনি। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের পরে আসা বাঙালি হিন্দুদের এরাজ্যে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা হােজাই জেলার কংগ্রেস সভাপতি ডাঃ অর্ধেন্দুকুমার দে নানা যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ১৯৯৭ সালের ভোটার তালিকার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা প্ৰস্তুত হয়েছিল। সেই ভোটার তালিকার ওপর ভিত্তি করে বাঙালি হিন্দুরা বিশেষ করে বিজেপি দলকে হাত খুলে ভোট দিয়েছিল। তাই তাদেরকে বিতাড়ণ করার প্রশ্নই উঠতে পারে না। মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যর মতো ডাঃ দেও স্বীকার করেন, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠীর বহু মানুষ এরাজ্যে প্রবেশ করেছে। শুধুবাঙালি হিন্দুই নয়, বাংলাদেশ থেকে বহু মুসলিম মানুষও এরাজে এসেছিল। তিনি বলেন বাংলাদেশ থেকে বহু বাঙালি ত্রিপুরা প্রবেশ করেছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিল, যখন তাকে বােঝানো হলো ১৯৯৭ সালের ভোটার তালিকার ওপর ভিত্তি করে ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা প্ৰস্তুত করা হয়েছিল, এবং সেই ভোটাররা লোকসভা নির্বাচনে ভোটদান করে রাজ্যের ১৪ সদস্যকে সাংসদে পাঠালেন, তখনতো প্রশ্ন উঠেনি। কে বৈধ, কে অবৈধ ভোটার। রাজ্যে বাঙালি ভোটারদের নানাভাবে প্রশাসনিক হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে। বৈধ নথি-পত্র থাকা সত্বেও তাদেরকে ডি ভোটার সাজিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের ভাষিক সংখ্যালঘু পরিষদের প্রতিনিধিরা এন আর সি প্রধান প্রতীক হাজেলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই হেনস্তা বন্ধের দাবী জানাবে। সংখ্যালঘু পরিষদের রাজ্যিক সভাপতি হিসেবে ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে বলেন, বিজেপি নেতারা নাগরিকত্ব সংশোধনের বিল নিয়ে যতই চিৎকার করুক না কেন, তা সংসদে কোনও দিন পাশ হবে না। এইবিলটি ইতিমধ্যে যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে বিবেচনার জন্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডঃ দে মন্তব্য করেন, সেখানে পাঠিয়ে দেওয়ার অর্থ বিলটি কোন্ড ক্টোরেজে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। তার অপমৃত্যু ঘটেছে। বাস্তবায়নের আর সম্ভাবনা নেই।
অগপ, আসু এবং এমনকি বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশসহ রাজ্যের জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো নাগরিকত্ব বিলের ঘোর বিরোধী। রাজ্যের বুদ্ধিজীবীরা আশংকা ব্যক্ত করেছেন, সংশোধনী বিলটি পাশ হলে রাজ্যে লক্ষ লক্ষ বাংলাভাষী হিন্দুর অনুপ্রবেশ ঘটবে। অসমীয়া ভাষা-সংস্কৃতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। একমাত্র বিজেপির মুষ্টিমেয় বাঙালি নেতৃত্ব বিশেষ করে বরাক উপত্যকার বিজেপি নেতারা বাঙালি হিন্দুদের স্বার্থে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে জোরদার সওয়াল করে চলেছেন। অসমের আবেগ, স্বাভিমান বিরোধী এইবিল যে পাশ হবে না, বাস্তব ছবি এই কথায় বলছে।
0 comments: