পৃথক বরাকের দাবী : রাজ্যের রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ

গুয়াহাটি : ৬০-৭০ দশক থেকে বরাক উপত্যকায় ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতা লক্ষ্য ডিমান্ড কমিটি গড়ে উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল তার প্রতিটি ভাষণেই বরাক ব্ৰহ্মপুত্রের সম্প্রীতির কথা বলে আসছেন। কিন্তু নাগরিকত্বর প্রশ্নকে কেন্দ্র করে রাজ্যের একাংশ বুদ্ধিজীবী, সংবাদ মাধ্যম, বরাক উপত্যকার ধর্ম ভাষা নিয়ে ক্ষুরধার আক্রমণ করে চলেছে। ঠিক এই মুহুর্তে বরাকে নতুন করে ইউনিয়ন টেরিটরি ডিমান্ড কমিটি গঠন করা হলো। 
শনিবার বরাকে এই কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সঞ্জীত দেবনাথের পৌরহিত্যে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, পৃথক বরাকের দাবীতে আগামী ১৬ জানুয়ারি শিলচরে এক মিছিলের ডাক দেওয়া হবে। তার পরই দিল্লীতে অবস্থান ধর্মঘট করা হবে। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি প্রমূখদের স্মারক পত্র প্রদান করা হবে। বরাকের বিশিষ্ট কবি-সাংবাদিক অতীন দাশ, হাইলাকান্দির বিশিষ্ট নাগরিক আলতাফ হােসেন লস্কর, মনিপুরি নেতা ডঃ এম, শান্তিকুমার সিংহ, কিশোর কুমার ভট্টাচার্য, শুভদ্বীপ দত্ত, আইনুল হক চৌধুরী, সরব হয়েছেন। 
বরাক উপত্যকার অগ্রণী:সমাজ সাংস্কৃতিক সংগঠন বরাক উপত্যক বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন’ পৃথক বরাকের দাবী সমর্থন করে না। 
রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পীকার দিলীপ পাল এই দাবির বিরোধিতা করে বলেন, যে সময় নাগরিকত্বের প্রশ্নে রাজ্য এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে চলছে, তখন এইদাবি সময়োচিত নয়। কেবল সময়ের অপচয় মাত্র। 
নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির অন্যতম উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরীও এই দাবীর বিরোধিতা করে বলেন, বরাক উপত্যকার বাঙালিরা যদি পৃথক কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের দাবী করেন, তবে ব্ৰহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসবে। তিনি বলেন, এখন মুসলিমদের বলা হচ্ছে তোমরা পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যাও। বরাক পৃথক হয়ে গেলে ব্ৰহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিকে বলা হবে তােমরা বরাকে চলে যাও। এই নিয়ে অন্য এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। বরাকের আদি বাসিন্দা চৌধুরী অভিযোগ করেন, বরাকের প্রতি চরম অন্যায় হচ্ছে। সেখানকার পরিকাঠামোর প্রতি সরকারের কোনও নজর নেই। সেখানে যদি আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হয়, তবে লাভবান হবে। বরাকে পৃথক সচিবালয় স্থাপনের কথা বলা হচ্ছে। যা আজও বাস্তবায়িত হলো না। 
টেরিটরিয়াল ডিমান্ড কমিটির প্রাক্তন সদস্য তথা বরিষ্ঠ সাংবাদিক মনীন্দ্র রায় পৃথক বরাকের দাবীকে সমর্থন করে বলেন, বরাকের প্রতি চরম বঞ্চনা করা হচ্ছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্ৰসাহ চালিহা বরাক থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। কিন্তু বরাকের প্রতি কোনও দায়িত্ব পালন করেননি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ অসম বিধানসভায় বলেছিলেন, “সিলেট চলে গেল। কিন্তু সিলেটি মানুষরা গেল না”। তাঁর এই বিদ্বেষমূলক মন্তব্যর কথা উল্লেখ করে বরাকের বাসিন্দা তথা পরিতােষ পাল চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মনীন্দ্র রায় বলেন, যারা পূর্ব পাকিস্তানে গোল না, আজ ৫০ বছর পরও এন আর সির খাতায় তাদেরকেইবাংলাদেশী হিসেবে তকমা দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। বরাকের মানুষ তা কখনও মেনে নেবে না। 
বরাক উপত্যক বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সন্মিলনের প্রাক্তন সভাপতি নীতিশ ভট্টাচার্য বলেন, তারা পৃথক বরাক নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন মোহন দেবের সাহায্য নিয়ে বরাকেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিষদ গঠন করে ‘মাইক্রেগ ডেভেলপমেন্ট’এর মাধ্যমে বরাকের তিন জেলার দারিদ্র পীড়িত মানুষদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় প্ল্যানিং কমিশনের অর্থনীতিবিদ মন্টেক সিং আলুয়ালিয়া পরিষদ গঠনের প্রস্তাব শুনে প্রশংসা করে বলেছিলেন, তা যদি বাস্তবায়িত হয়, তা হবে দেশের মধ্যে এক উজ্জ্বল উদাহরণ। ভট্টাচার্য জানান, বরাকে বরাক নদীর মতো নদীকে সদ্ব্যবহার করে জল পরিবহনের ব্যবস্থা করা যায়। সেখানে দেড়শোরও বেশি ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছ-গাছরা আছে। তাকে কাজে লাগিয়ে প্রায় ২০ টি মেডিকেল ইউনিট স্থাপন করা যায়। বরাকে প্রচুর পরিমান সুপারি গাছ আছে। সেই সুপারির খোলা-খোসা, পাতাকে কাজে লাগিয়ে বাসন-পত্র ও অন্যান্য সামগ্ৰী প্রস্তুত করা যায়। সূতারকন্দিকে আন্তঃজাতিক বণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে বরাককে আর্থিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। সদ্য অনুষ্ঠিত নমামি বরাক উৎসবে এইসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা নিয়ে তারা বরাক উপত্যকায় এক সমীক্ষা চালিয়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করেছে। তার জন্য পৃথক বরাকের কোনও প্রয়ােজন আছে বলে মনে করি না। 
সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত একই অভিমত পোষণ করে বলেন, পৃথক রােজ্যর অর্থ ক্ষমতা হস্তান্তর মাত্র। যার ফলে বরাকের জটিল বেকার সমস্যা, শিল্পায়ন প্রভৃতির কোনও সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় না। তাই উন্নয়ন পরিষদের পক্ষে আমরা আছি।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: