গুয়াহাটি : একটি গোপন চিঠি নিয়ে গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে রােজ্যর রাজনীতি উত্তাল। কি সেই চিঠি ! দু-দুবারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত তার জন্মদিন থেকেই রহস্যজনক সেই চিঠির কথা বলেই চলেছেন। বলছেন, সেই চিঠির কথা কাউকে বলা যাবে না, টপ সিক্রেট। সাংবাদিকদের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত আজ তিনি নিজেই সেই চিঠির রহস্য উদঘাটন করলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই গোপনীয় চিঠির কথা উল্লেখ করে বলেন, “যারা ৬ বছর ধরে এক নাগাড়ে এ রাজ্যে বাস করবে তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে”। কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্ত কোনওভাবেই তারা মানবেন না। সেই কথাও স্পষ্ট জানিয়ে বলেন, বাঙালি হিন্দুদের প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতাও করে যাবেন। তাতে বিজেপির সঙ্গে অগপর মিত্ৰতা না থাকলেও ক্ষতি নেই। কারণ রাজ্যে খিলঞ্জীয়া মানুষের স্বাৰ্থ আগে দেখতে হবে।
মহন্তের এই সিদ্ধান্তের প্রতি আগপর অধিকাংশ সদস্য এমনকি দুই মন্ত্রীও সমর্থন করেছেন। এদিকে অগপ বিধায়ক পবিন্দ্ৰ ডেকা হুংকার দিয়ে বলেছেন, কেন্দ্ৰ যদি নাগরিকত্ব বিল পাশ করে, তবে তারা রাজ্যে দ্বিতীয়বার বিদেশি বিতাড়ন আন্দোলনের ডাক দেবে। বিজেপির রাজ্যিক সভাপতি ৰঞ্জিৎ দাস অগপকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেছেন, বিজেপি নির্বাচনী ইস্তােহারে বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব প্রদানের ইস্যু উল্লেখ ছিল। তখনতো অগপ আপত্তি করেনি।
চিঠি সম্পর্কে মহন্তের মন্তব্য শুনে কেন্দ্রের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপির কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে রাজ্যের বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ভাবছেন। কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে শিলচর থেকে টেলিফোনে একথা জানিয়ে বলেন, ২০১৫ সালের নোটিফিকেশনে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এদেশে আসা বাঙালি হিন্দুসহ পার্সি, খ্ৰীষ্টান, জৈন প্রভৃতি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত সম্ভবতঃ সেই চিঠির কথা উল্লেখ করে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের ভিত্তিবর্ষের কথাই বলতে চাইছেন।
উল্লেখ্য ২০১৪ সালের ভোটার তালিকার ওপর ভিত্তি করেই পর পর দুটি নিবাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পুরকায়স্থ আরও বলেন, স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নাগরিকত্বের বৈধ নথি থাকুক বা না থাকুক, তাদের এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হবে। বিতাড়নের কোনও প্রশ্নই উঠছে না। এই নোটিফিকেশনটি দেশের অন্যান্য রাজ্যে কার্যকরী হয়েছে। অসমে কার্যকরী করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নাগরিকত্ব বিল সম্পর্কে বলেন, বিলটি এখনও সংসদীয় যৌথ কমিটির বিবেচনাধীন। কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সত্যপাল সিং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় স্থান পেয়েছেন। তাই যৌথ কমিটির প্রতিবেদন ছাড়া সংসদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। তা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই তিনি নােটিফিকেশনের ওপর জোর দিয়েছেন।
ওরিজিনাল ইনহ্যাবিটেন্ট বা ভূমিপত্র খিলঞ্জীয়া সম্পর্কে বলেন, কে ও আই, কে নয়। সেই বিচার কে করবে। কারণ রাজ্যে এখনো ও আইর সংজ্ঞা নির্ণয় হয়নি। বরাক-ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকায় ৬০-৭০ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ হিন্দু মুসলিম মানুষ যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রেখে পাশাপাশি বসবাস করছে। তাদেরকে হঠাৎই ও আই নয় বলে অবজ্ঞা করে বিতাড়ণ করা হলে বিজেপি তা মানবে না। প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক যাদের বৈধ নথিপত্র আছে, তাদেরকে কোনও ভাবে বিদেশি বলা যাবে না। বরাক উপত্যকার হিন্দু-মুসলিম মানুষ অখণ্ড ভারতবর্ষের আদি বাসিন্দা। ফলে তাদেরকে কোনও ভাবে ও আই নয় বলে বলা ঠিক হবে না।
0 comments: