বিদেশি ট্রাইবুনালের নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন

স্বদেশি হয়েও ডিটেনশন ক্যাম্পে দুই শিশুর মা ছন্ধা পাল 

গুয়াহাটি : দিশানুর বয়স আর কতই বা হবে। ৪-৫ বছর। আর অভিনন্দার বয়স তার থেকে কিছু কম। এই দুই শিশুকে কোল থেকে কেড়ে নিয়ে মাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। মানবতার এই চূড়ান্ত অবমাননার খবর পাওয়া গেছে হােজাই থেকে। হােজাই-এর বিধায়ক শিলাদিত্য দেব কথায় কথায় বাঙালি বাঙালি করে হুংকার ছাড়েন। তারই নির্বাচন কেন্দ্রের অন্তৰ্গত ডবকার বিদেশি ট্রাইবুনাল ভারতীয় বৈধ নথি-পত্র থাকা সত্বেও এই দুই শিশুর মা ছন্ধা পালকে মাস চারেক আগে তেজপুর ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠায়। ছান্ধা পালের স্বামী দুলাল পাল ছােট-খাট দোকানদার। ডবকায় তাদের বাড়ি। ছন্ধার বাবা সুকুমার পাল দেশ বিভাজনের সময় বরাক উপত্যকার কাটিগড়া থানার অন্তর্গত বিহারা অঞ্চলের স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। সুকুমার পালের বাবা রাধাবল্লভ, মা কিরণবালা। দীর্ঘ ৬০-৭০ বছরের আদি বাসিন্দা। পর লামডিঙে এক সোণাৰ দোকান দিয়ে সুকুমার পালের ব্যবসা শুরু। তার কন্যা ছন্ধার লামডিঙেই জন্ম-কৰ্ম-পড়াশুনা। তার বিয়ে হয় ডবকার দুলাল পালের সঙ্গে। তখনই তার বিরুদ্ধে ডবকা বিদেশি ট্রাইবুনাল থেকে বিদেশি নোটিশ ইস্যু করা হয়। ১৯৬৪ সালের ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে তার আগের ভারতীয় নাগরিকত্বের সব ধরণের নথিপত্র দাখিল করা সত্বেও ট্রাইবুনাল কোনাে কিছুই গ্রাহ্য করেনি বলে বহু অভিযোগ করলেন, লামডিঙের বিশিষ্ট সমাজকর্মী তাপস দাস। তিনি ইতিমধ্যে বিদেশির নোটিশ পাওয়া ১০-১৫জন ব্যক্তির পক্ষে লড়ে সফলতা পেয়েছেন। তাকে সাহায্য করে যাচ্ছে নারায়ন সেন, আলি তালুকদার প্রমুখ আইনজীবীরা। কিন্তু ছন্ধ পালের ক্ষেত্রে সফল হতে পারেননি। কারণ হিসেবে ট্রাইবুন্যালের নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমাজকর্মী দাস। বিষয়টি তিনি উদ্ধতন কর্তৃপক্ষরে গোচরে এনেছেন। 
এদিকে এই অভিযোগ সম্পর্কে রাজ্যের বিশিষ্ট আইনজীবী তথা নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, যখন রাজ্যে অসম চুক্তির আধারে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এন আর সি)র কাজ চলছে। এর মধ্যেও বিদেশি ট্রাইবুনালগুলি একপক্ষীয়ভাবে ১৯৭১ সালের বহু আগে আসা হিন্দু-মুসলিমদের নানাভাবে হেনস্তা করছে। তিনি অভিযোগ করেন, বরাক উপত্যকায় এই ধরণের অভিযোগ বহু বেশি। সেই বরাকের বিজেপি নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, বিধানসভার উপাধ্যক্ষ দিলীপ পাল, মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, হােজাইয়ের বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের কড়া সমালোচনা করে বলেন— এইসব বিজেপি নেতারা বাঙালি হিন্দুদের পক্ষে ওকালতি করছেন। সংসদে বিল পাশ না হওয়া সত্বেও নাগরিকত্ব বিল নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। অথচ সেই বাঙালি জনগোষ্ঠীর মানুষদের যখন বৈধ নথি-পত্র থাকা সত্বেও এবং ১৯৭১ সালের বহু আগে আসা বাঙালি হিন্দুদের কেন হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। কেন পাঠানো হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। তার জবাব দিতে হবে ঐসব বাঙালি নেতাদের। তিনি দাবি করেন, যতদিন পর্যন্ত নাগরিকত্ব বিল সংসদে পাশ না হচ্ছে, ততদিন ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো মানুষদের আইনী সাহায্য দেওয়ার জন্য কিছু ব্যবস্থা করা উচিত ঐ বিজেপি নেতাদের।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: