গুয়াহাটি : প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবংগের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অসমের ধর্মীয়, ভাষিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের লক্ষে গৰ্জিয়ে উঠলেন কেন? কেন তাকে অসমের কথা বলতে হ’ল। এন আর সির প্রথম খসড়া তালিকায় রাজ্যের বরাক উপত্যকার তিনটি জেলাসহ নিম্ন অসমের সংখ্যালঘু আধ্যুষিত জেলাগুলিতে মাত্র ৫০ শতাংশ মানুষের নাম অন্তৰ্ভুক্ত হয়েছে। এই দুই জনগোষ্ঠী কংগ্রেস দলের প্রধান ভোট ব্যাংক৷ তাই অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির এই ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করা উচিত ছিলো। কিন্তু তা করা হলো না। মমতা ব্যানার্জিকে এন আর সির বৈষম্যের বিৰুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে হলো। শুক্ৰবার রাজীব ভবনে অসম প্রদেশ কংগ্রেস কোর কমিটির বৈঠকে বরাকের প্রতিনিধিরা এই প্রশ্ন উত্থাপন করেন।
অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি রিপুন বরার পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত সভায় বরাকের প্রতিনিধিরা রাজ্যের ১৩ টি সংখ্যালঘু আধ্যুষিত জেলায় এন আর সিতে খুবই কম সংখ্যক মাত্র ৩৫-৪০ শতাংশ মানুষের নাম অন্তৰ্ভুক্ত হয়েছে অথচ উজান অসমে ৮০-৯০ শতাংশ মানুষের নাম অন্তৰ্ভুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জোরদার আৰ্জি জানান। বরাক উপত্যকার বাঙালিদের দাবি দাওয়ার কথা উল্লেখ না করে কংগ্রেস নেতা বলিন কুলি আপত্তিকর মন্তব্য করে ত্রিপুরার মতো বাঙালি আগ্রাসনের কথা বলেন। এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন উত্তর করিমগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। তিনি প্রতিবাদ করে বলেন এই ধরনের কথা বলবেন না। তিনি বলেন কংগ্রেস দল ধর্মনিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী৷ এই দলের কোনো জাত-পাত নেই।
কংগ্রেস দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ নাজমুদ্দিন বরাকের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন বরাক উপত্যকার ৯০ শতাংশ হিন্দু-মুসলিম মানুষ বরাকের আদি বাসিন্দা, খিলঞ্জীয়া হিসাবেই তাদের গণ্য করতে হবে৷ কারণ বরাক অবিভক্ত ভারতের অংশ। তাদের নাম এন আর সির তালিকায় যথাযথ স্থান পায়নি। প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায় অভিযোগ করেন তার পত্নীর নামও তালিকায় আসেনি। এই ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেসকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। প্রাক্তন মন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ বলেন, ব0রাকের লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ায় খুব আতংকের মধ্যে আছে। প্রাক্তন মন্ত্রী অর্ধেন্দু কুমার দে বলেন এন আর সির বৈষম্য নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে যাবে।
অর্ধেন্দু কুমার দে এবং বরাকের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকে ২০১৪ সালকে ভিত্তি বছর হিসাবে গণ্য করার দাবি জানিয়ে বলেন, ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকার উপর ভিত্তি করে ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয়। সেই তালিকার অন্তৰ্ভুক্ত ভোটাররা লোকসভায় ভোট দিয়েছে। তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে হবে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও তা সমর্থন করেছিলেন৷ পর সেই সিদ্ধান্ত বদল করেন। আজ কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ২০১৪ সালকে নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন বলে কমলাক্ষ দে পুৰাকায়স্থ এবং ডাঃ দে জানান।
কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা দেবব্রত শইকীয়া, প্ৰদ্যুৎ বরদলৈ, শরৎ বরকটকী, রকিবুল হুসেন, অজিত সিং প্রমুখদের উপস্থিতিতে তরুণ গগৈ নীতিগত সমর্থনের কথা জানান। তরুণ গগৈ অবশ্য ১৯৭১ সালের ২৫ য়ে মার্চের আগে আসা কারও নাম যাতে এন আর সি থেকে বাদ না পরে তা সুনিশ্চিত করারও দাবি জানান। প্ৰদ্যুৎ বরদলৈ বলেন, অসম চুক্তি আমাদের বাইবেল৷ তা থেকে কক্ষচ্যুত হওয়া চলবে না। তিনি অভিযোগ করেন বিজেপি সরকার উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বরাক উপত্যকার বহু মানুষের নাম বাদ দিয়েছে। কংগ্রেস দলের কাছে বরাক-ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
0 comments: