গুয়াহাটিকে এশিয়ার হাব হিসেবে গণ্য করে পূর্ণ পর্যায়ে পররাষ্ট্র বিভাগের দপ্তর খোলার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি :
দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার প্রায় ৮০ কোটি মানুষের বিপনন বাজারে বিনিময় করার লক্ষ্য নিয়ে আগামী ৩-৪ ফেব্রুয়ারি গুয়াহাটিতে দুদিন ব্যাপী ‘গ্লোবাল সামিট’ শুরু হচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এই সর্বপ্রথম এত বড় মাপের বিশ্ব শিল্প বিনিয়োগ সন্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্ৰ মোদী। রতন টাটা, মুকেশ আম্বানির মতো শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় দুহাজার দেশ-বিদেশের শিল্পপতিরা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। কেন্দ্রীয় সরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে এই অঞ্চলের সু-সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে গুয়াহাটি মহানগরকে এশিয়ার হাব হিসেবে গণ্য করে পূর্ণ পর্যায়ে পররাষ্ট্র বিভাগের দপ্তর খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক সুবিধার লক্ষ্যে গুয়াহাটি বড়ঝাড়স্থিত লোকপ্রিয় গোপীনাথ আন্তঃর্জাতিক বিমান বন্দরকে অত্যাধুনিক বিশ্ব পর্যায়ের টার্মিন্যাল গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ১২০০ কোটি মঞ্জর করেছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের যে কোনও জায়গায় সফর করতে হলে বিমান ভাড়া ২৫০০ টাকার চেয়ে যাতে বেশি না হয়, তারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
শিল্প-বাণিজ্য ও পরিবহন বিভাগের মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটােয়ারি শনিবার অনুষ্ঠিতব্য গ্লোবাল সামিট সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে এই কথা বলেন। তিনি বলেন, সর্বানন্দ সনােয়াল নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে রাজ্যে প্রায় ৭হাজার কোটি টাকা শিল্প বিনিয়োগ হয়েছে। যার ফলে ৪৪ হাজার কর্ম-সংস্থানের সুবিধা হয়েছে। পরোক্ষভাবে প্রায় ১লক্ষ মানুষ উপকৃত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এক্ট-ইষ্ট পলিসিকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে রাজ্যে এই নামে বিভাগও খোলা হয়েছে। দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ২৫০ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। তার মধ্যে ৬টি ব্ৰহ্মপুত্রের উপর সেতুও আছে। বরাক উপত্যকার প্রধান নদী বরাক নদীর খনন কাজ চলছে। এই বছরের মার্চ-এপ্রিলে খনন কাজ শেষ হবে। এর পর ব্ৰহ্মপুত্র নদে খনন কাজ চালানো হবে। বাংলাদেশের নদীতে খনন কাৰ্য চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ২৫০ কোটি টাকা সাহায্য করবে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অসমের যোগাযোগ গড়ে উঠবে। বাংলাদেশের আখেৌড়া রেল লাইন ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। গুয়াহাটি থেকে নলবাড়ী-টিহু পৰ্য্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার ‘ইন্ডাসট্রিয়াল করিডর’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় সড়কের দুই পাশে ৫০০ মিটার ছেড়ে দিয়ে শিল্প স্থাপনের জন্য রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কামরূপ মেট্রো এবং গ্রাম্য, নলবাড়ি জেলায় ব্যাপক শিল্প বিকাশ ঘটবে। বিদ্যুতের কোনও অভাব নেই। প্রায় ৬০০০ একর জমি ব্যাঙ্ক তৈরি হয়ে আছে। তবে গ্যাসের সমস্যা আছে। তার অভাবে চা উদ্যোগ এবং শোধানাগার, সার কারখানায় যাতে অচলাবস্থার সৃষ্টি না হয়, তার জন্য নেশনেল গ্ৰীডের সাহায্য নিয়ে বিহারের বারোওনি গ্যাসের পাইপ লাইন বসানো হবে। প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।
আসন্ন গ্লোবাল সামিটে ১২ টি ক্ষেত্ৰকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে শিল্প ও পর্যটন বিকাশ অন্যতম। এ কে তেওয়ারি, আশুতোষ অগ্নিহােত্রী, কে কে দ্বিবেদী প্রমুখ শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের পদস্থ অফিসারদের উপস্থিতিতে শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রী পাটােয়ারি বলেন, বাঙ্গালুরু, কলকাতা, দিল্লী প্রভৃতি জায়গায় রোড শ্বো করে প্রচুর সাড়া পাওয়া গেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে আগে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। আইন-শৃংখলার পরিস্থিতি অবনতির কথা বলে নানাভাবে এই অঞ্চলকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এই অনগ্রসর অঞ্চলকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়। তিনিই প্রথম উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন দপ্তর খোলেন। বাইরের শিল্পপতিরা এখন এই অঞ্চলের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছে। যা আগে দেখা যায়নি। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা বড় মাপের শিল্প উদ্যোগের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের জন্যে ২০০ শতাংশ পৰ্য্যন্ত টেক্স ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, এর ফলে বাইরের শিল্পপতিদের আগ্রহ বাড়বে। দুদিনের গ্লোবাল সামিট সম্পর্কে বলেন, দুদিন পাঁচটি জায়গাতে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক, আলোচনা চলবে এবং তার তাৎক্ষনিক বিবরণ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হবে। সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। বাংলা, অসমীয়া, হিন্দী, ইংরেজি এই চারটি ভাষাতেই শিল্প সন্মেলনের খবরা-খবর পরিবেশন করা হবে।
0 comments: