# দাখিল করা নথি ভুল প্ৰমাণিত হলে পাবে শাস্তি : এডিজিপি পল্লব ভট্টাচাৰ্য
# ম্যাজিষ্ট্রেটদের তত্বাবধানে পঞ্চায়েত নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ৪৫ দিনের সময়সীমা
গুয়াহাটি : দীর্ঘ ৩৮ বছর পর এই দেশে সর্বপ্রথম তরুণ গগৈ নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের আমলে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী রূপায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। জাতীয় ছাত্র সংগঠন আসুর সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গগৈর দীর্ঘ আলোচনার ফলশ্রুতি আজকের জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর বাস্তবায়ন, প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশ। রাজ্যজুড়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, বাক-বিতণ্ডা চলছে। তবে সরকারের আশংকার মূলে ঠাণ্ডা জল ঢেলে দিয়ে রাজ্যে বিস্ময়করভাবে শান্তি-সম্প্রীতি বিরাজ করছে। এত ভুল-ভাল, এত জনপ্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম বাদ পরার পরও অসন্তোষ-অভিযোগের মাত্রা খুবই কম। বুধবার তৃতীয় দিনেও রাজ্যের সেবা কেন্দ্রগুলিতে যথারীতি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনােয়ালের বারংবার আবেদন— ‘খসড়া তালিকায় সবার নাম প্রকাশ পাবে, ভয় খাবেন না’। এই আপ্তবাক্য কার্যকরী হয়েছে। তাছাড়া জোরদার নিরাপত্তা বাহিনী-জওয়ান মোতায়েনের ফলে রাজ্যে কোনও ধরণের অগ্ৰীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য স্থানীয় এক টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেন, এন আর সির কাজ চলছে। এই সময় যদি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে উত্থাপনের চেষ্টা করা হয়, তবে তারা জোরদার আন্দোলন শুরু করবে। তাদের ৩৮ বছরের আন্দোলনের ফলশ্রুতি হচ্ছে এন আর সি। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের ফলে অতি আকাঙ্খিত এন আর সির কাজ ব্যাহত হবে। অসম চুক্তির ৬ নং ধারা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর একজন হিন্দু-মুসলিমকেও গ্রহণ করবে না। তিনি এক তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করে বলেন, চূড়ান্ত এন আর সির তালিকায় থাকা মানুষরা ভারতীয় নাগরিক, সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এন আর সির তালিকাভুক্ত সব লোককেই খিলঞ্জীয়া বলা যাবে না। খিলঞ্জীয়া অসমীয়া মানুষের নিজস্ব ভূমির অধিকার, ১০০ শতাংশ আসন সংরক্ষনের অধিকার দাবি করেন। বাংলাদেশী মুক্ত এন আর সির পোষকতা করে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ভারত সরকার ২২ টি চুক্তি করলো বাংলাদেশের সঙ্গে। কিন্তু আজ পর্যন্ত্য প্রত্যাৰ্পন চুক্তি করা হলো না। আজও বাংলাদেশ-অসম সীমান্তর ১০০ কিলোমিটার উন্মুক্ত হয়ে পরে আছে। অসম বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রণব গগৈ ২৮ টি দল-সংগঠনের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে খিলঞ্জিয়ার সংজ্ঞা প্ৰস্তুত করেছিলেন। কিন্তু তা গ্রহণ করা হলো না। অসমের খিলঞ্জিয়াদের অধিকার সুনিশ্চিত করা না হলে তাদের আন্দােলন চলবেই।
একই অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা দাবি করেছেন, প্রকাশিত তালিকার ১ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ ভারতীয় নাগরিক, তা সুনিশ্চিত। কোনও সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, তথ্য-পাতি পরীক্ষা করার সময় কোনও ব্যক্তির মুখ দেখা হয়নি। তা বাদ-বিচার না করে নথি-পত্রের ওপর ভিত্তি করে বৈধ প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যারা বাদ পড়েছেন, তাদের চিন্তার কোনও কারণ নেই। বাদ-বাকী ১ কোটি ২৯ লক্ষ মানুষের নথি-পত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত আছে। সেবা কেন্দ্রগুলির পক্ষ থেকে অভিযোগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যবস্থাও হয়েছে। তিনি বলেন, এন আর সি তালিকা চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরই ব্যক্তিগত পরিচয় পত্র দেওয়ার সম্ভবনা আছে। পঞ্চায়েত সচিবদের ইস্যু করা ২৯ লক্ষ মহিলার নথি-পত্ৰ সম্পর্কে হাজেলা বলেন, গত ৫ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির ম্যাজিষ্ট্রেটদের তত্বাবধানে নথি-পত্রগুলি ৪৫ দিনের মধ্যে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্রতীক হাজেলা জানান, আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। দ্বিতীয় তালিকা কবে প্রকাশ পাবে তা নির্ভর করছে, সুপ্রিম কোর্টের ওপর। কারণ সুপ্রিম কোর্টের তত্বাবধানে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী নবায়নের কাজ চলছে।
রাজ্যর এডিশনাল ডিজিপি পল্লব ভট্টাচাৰ্য বুধবার বলেছেন, এন আর সি নথি-পত্ৰে যারা ভুল তথ্য প্ৰদান করবে, প্ৰমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা হবে৷ অসমের এন আর সি তালিকায় বহু সংখ্যালঘু মানুষের নাম বাদ পড়েছে। তা নিয়ে প্রতিবেশি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানাৰ্জী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যদিও গুয়াহাটিস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার কাজী মুস্তাসির মুর্শেদ ফের বলেন, ভারতের আভ্যন্তরীণ কোনও ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কোনও মন্তব্য নেই।
0 comments: