মমতার মন্তব্যকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ : থানায় এজাহার, কুশপুতুল দাহ

আপনাকে হুশিয়ার করে দিচ্ছি, অসমকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না : বিজেপি সভাপতি রঞ্জিৎ দাস 

গুয়াহাটি : বছরের শেষ রাতে অসমের বহু প্রতিক্ষিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এন আর সি)র প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশ পেল। ১কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের নাম প্রথম খসড়া তালিকায় অন্তৰ্ভুক্ত হয়েছে। ১কোটি ৩৯ লক্ষ মানুষের নাম এই তালিকায় প্রকাশ পায়নি। রাজ্যের বিশিষ্ট জননেতা থেকে শুরু করে বিশেষ করে ধর্মীয় এবং ভাষিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। বরাক উপত্যকার তিনটি জেলায় মাত্র ৩৫ শতাংশ মানুষের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বরাকের বৃহত্তম শহর শিলচরের মাত্র ২৯ শতাংশ মানুষের নাম এসেছে তালিকায়। অপরদিকে উজান অসমের ডিব্ৰুগড়, যোরহাট প্রভৃতি জেলায় ৭০-৮০ শতাংশ মানুষের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। নিন্ন অসমের ধুবড়ি জেলায় ১৭ লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র ৬ মানুষের নাম স্থান পেয়েছে। সারা রাজ্যে সংখ্যালঘু মানুষের নাম বেশি বাদ পড়েছে। তা নিয়ে রাজ্যের রাজনীতি ক্ৰমশঃ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। তাতে আগুনে ঘৃতাহুতি দিলেন প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানাৰ্জী। মমতা এন আর সির নামে ১কোটি ২৫লক্ষ বাংলাভাষী মানুষকে অসম থেকে বিতাড়ণ করতে চাইছে বলে করা মন্তব্য ঘিরে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে। 
অবশ্য রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষ অভিযোগ করেছে—তাদের লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। যা উদ্বেগের ব্যাপার। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ মমতার মন্তব্য সম্পর্কে বলেন, “তাকে কেউ হয়তো ভুল তথ্য দিয়েছেন। সেই জন্যেই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। হাজার হাজার মানুষের নাম বাদ পড়েছে। তারা কি অপমানিত হয়নি? তারা প্রতিবাদ করবে না? আমার যদি এন আর সিতে নাম না আসতো, আমি প্রতিবাদ করতাম।” 
কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, ‘বরাক উপত্যকায় মাত্র ১৮-২০ শতাংশ মানুষের নাম এন আর সির তালিকায় উঠেছে। উজান অসমসহ অন্যান্য জায়গায় ৯৯ শতাংশ উঠেছে। আলফার কমান্ডার-ইন-চিফ, বিদেশে ঘাটি গেড়েছে। সেই “দেশদ্রোহী'র নাম এন আর সিতে উঠলো, তখনতো কোনও প্রতিবাদ হলো না ? চিলাপথার কান্ডে আমরা চুপ করে ছিলাম। কিন্তু এইবার চুপ করে থাকবাে না।” 
কিন্তু রাজ্যের জাতীয়তাবাদী মহল থেকে শুরু করে সংবাদ পত্র এবং বিজেপি নেতৃত্ব মমতার মন্তব্যকে ঘিরে অসম বিরোধী এবং অসমের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বলে তীব্র সমালোচনা করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয়বাদী দল-সংগঠন মমতার কুশপুতুল দাহ করে তীব্র প্রতিবাদী কর্মসূচী রূপায়ন করেছে। পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানাজীর বিরুদ্ধে গুয়াহাটি মহানগরীর লতাশিল থানায় বিশিষ্ট আইনজীবী বিজন মহাজনসহ কয়েকজন আইনজীবী এজাহার দাখিল করেছেন। এদিকে কৃষক শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে দিশপুর থানায় আর এক এজাহার দাখিল করেছে। আসু, এ পি ডব্লিউসহ বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী সংগঠন মমতা ব্যানাৰ্জীর বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান গ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট যাতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্ৰহণ করে, তার আৰ্জি জানিয়েছেন। 
রাজ্যের বিজেপি সভাপতি রঞ্জিৎ দাস বলেছেন, বিজেপির উত্থানে শংকিত মমতা। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন—“আমরা আপনাকে হাঁশিয়ার করে দিচ্ছি, অসমকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশক্রমে এন আর সির কাজ চলছে। সুপ্রিম কোর্ট নিজস্বভাবে মমতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারে। এন আর সি কর্তৃপক্ষের উচিত, মমতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা।” 
অগপর প্রাক্তন সাংসদ কুমার দীপক দাস বলেছেন, এন আর সি কি, সেই বিষয় নিয়ে কোনও জ্ঞানই নেই মমতার। মমতার মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবিন্দ্র পুরকায়স্থ। তিনি বলেন—সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ক্রমে রাজ্যে এন আর সির কাজ চলছে। সেক্ষেত্রে মমতা আপত্তিজনক মন্তব্য করে অসমের বাঙালিদের ক্ষতি করছেন। অসমের বাঙালিদের বিপদের দিনে তিনি কোথায় ছিলেন ? 
বন মন্ত্রী প্রমীলা রাণী ব্ৰহ্ম মমতার সমালোচনা করে বলেছেন, কারো প্ররোচনায় মমতা ব্যানাৰ্জী এইধরণের মন্তব্য করেছেন। অগপ বিধায়ক সত্যব্ৰত কলিতা মমতার মন্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছেন, অসমের বাঙালিরা এন আর সিকে সাদরভাবে গ্রহণ করেছেন, তখন মমতার এতো মাথা ব্যাথা কেন ? গুয়াহাটির প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী পদ্মশ্ৰী অজয় দত্ত অভিযোগ করেন, ‘পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনাৰ্জী অসমের এন আর সি সম্পর্কে মন্তব্য করে অসমের বাঙালিদের বিরাট ক্ষতি করলেন। মমতা বিশেষভাবে তার রাজ্যের মুসলিম ভোটারদের তোষণ করার লক্ষ্যে অসমের বাংলাভাষীদের মানুষকে নিয়ে জঘন্য নোংরা রাজনীতি করতে চাইছেন। তিনি জানেন না, সুপ্রিম কোর্টে প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে এন আর সির কাজ চলছে। আমরা অসমের সাতপুরুষের বাসিন্দা। তার পরও এন আর সির খসড়া তালিকায় নাম নেই। সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আস্থা রেখেই আমি ধৈৰ্য্য ধরে আছি।” 
এদিকে এন আর সির সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা জানিয়েছেন, পশ্চিম বঙ্গের কয়েক লক্ষ মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে অসমে বসবাস করছে। তাদের এন আর সি সম্পর্কীয় নথি পত্রগুলি পরীক্ষার জন্য পশ্চিম বঙ্গ সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল। ১লক্ষ ২২ হাজার নথি পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র ৫ হাজার নথি পরীক্ষার পর ফিরে এসেছে। তাই স্বাভাবিকভাবে পশ্চিম বঙ্গের মানুষের নাম এন আর সি তালিকায় কম স্থান পেয়েছে।


SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: