ত্রিপুরার বামপন্থী সরকারকে হটাতে বিজেপি সর্ব শক্তি নিয়ােগ করেছে
- অমল গুপ্ত, গুয়াহাটিঃ
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ক্ষুদ্রতম রাজ্য ত্রিপুরা, মাত্র ৩৮ লক্ষ জনসংখ্যার রাজ্য, অসমের ধুবরী এবং বরপেটার এই দুই জেলার জনসংখ্যার থেকেও কম, ত্রিপুরার স্বাক্ষরতার হার কিন্তু দেশবাসীকে টেক্কা দেবে। ৯৬.৯৭ শতাংশ সাক্ষর। বিস্ময়ের কথা অসমে ২৬৩ কিঃমিঃ সীমান্ত বাংলাদেশকে ছুঁয়েছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী’ আছে বলে অসমের রাজনৈতিক দলগুলির অভিযােগ। পক্ষান্তরে ত্রিপুরা বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৮৫৬ কিঃমিঃ। সেইরাজ্যে একজন বাংলাদেশী নেই। এমনই দাবী ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্ৰী মানিক সরকারের। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের গরীব শ্রমজীবি মানুষ কাজ করতে ত্রিপুরায় আসে এবং দিনভর পরিশ্রম করে বাংলাদেশে ফিরে যায়। সহজলােভ্য শ্ৰমিককে কাজে লাগানাের ফলে ত্রিপুরার অর্থনীতি চাঙা হয়। তাই ত্রিপুরায় বাংলাদেশী নেই। যত বাংলাদেশী আপনাদের অসমে।’ ১৯৯৮ সাল থেকে এক নাগাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা অত্যন্ত সাধারণ আটপৌড়ে মানিক সরকার জানেন শ্রমজীবি মানুষকে মৰ্য্যাদা দিয়ে। তাদেরকে কিভাবে কাজে লাগানাে যায়। এই বামপন্থী সরকারকে হটাতে হলে বিজেপি-কংগ্রেস দলকে একবার নয় দুবার ভাবতে হবে। ৫২ শতাংশ অরণ্যবেষ্টিত আঠারমুড়া, জাই, লংতরাই প্রভৃতি সুউচ্চ সবুজ পাহাড় ঘেরা অনন্য মনােরম প্রকৃতির সীমান্ত রাজ্যের ৬৯ শতাংশ মানুষ বাঙালি এবং ৩১ শতাংশ ককবরক উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ।
অতীতের তুইল্যণ্ড আজকের ত্রিপুরা, অধিষ্ঠাত্রী দেবী ত্রিপুরা সুন্দরীর নামে ত্রিপুরার নামকরণ করা হয়েছে বলে প্রচলিত বিশ্বাস। ত্রিপুরার জাতীয় গাছ আগর। এই আগর গাছের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র কিন্তু মধ্য অসমের হােজাই শহর। প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এক ধরণের পােকায় (ইনসেক্ট) আক্রান্ত আগর গাছগুলির খণ্ড করে তা জলে সেদ্ধ করে আগর তেল নিষ্কাশন করে বহুমূল্যবান সুগন্ধী পাওয়া যায় বিশ্বব্যাপী যা সমাদৃত। ত্রিপুরার দীর্ঘতম নদী গােমতী তীরবর্তী অঞ্চলে বাঁশ, বেত, রবার, আনারস, কমলা প্রভৃতি ক্ষেত, প্রায় ৫৮ টি চা বাগান। তাই ত্রিপুরা সিংহভাগ মানুষ কৃষিজীবি, এক বৃহৎ সংখ্যক গরিব মানুষ হস্তশিল্পকে পেষা হিসাবে গ্রহণ করেছে। তাই ত্রিপুরা গরিব শ্রমজীবি মানুষের রাজ্য। এই রাজ্যে বিলাসিতা বা বৈভবের চিহ্নমাত্র নেই, সহজসরল শ্রমজীবি মানুষ অত্যন্ত সচেতন। তাই সচেতন মানুষগুলির কাছে ভােট চাইতে গেলে টাকার বা অন্যান্য কোনাে কিছুর টোপ কাজে আসবে না। আগামি ১৮ ই ফেব্রুয়ারীর বিধানসভায় ৬০ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্ৰ মােদী, অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সােনােয়াল, অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী তরুণ গগৈ প্রমুখ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ত্রিপুরাকে গেরুয়াকরণ করার দায়িত্ব নিয়েছে অসমের অর্থ-শিক্ষা-স্বাস্থ্যমন্ত্ৰী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা। নর্থইষ্ট ডেমক্রেটিক আ্যলায়েন্সের প্রধান হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা। বিজেপি হাইকামাণ্ডকে কথা দিয়েছেন ত্রিপুরায় বিজেপিকে এনে দেবে।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এমনই একজন ব্যক্তিত্ব যার সততা কর্মনিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তােলা যায়না। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই তা আমি জেনেছি। সেই মানিক সরকারকে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুংকার দিয়েছেন হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা। অসমের জাঁদরেল মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা জানেন না এই মন্তব্য করে বিজেপির কত ক্ষতি করলেন। এই মন্তব্যের প্রতিবাদ উঠেছে বিজেপির মধ্য থেকেই। ত্রিপুরায় বর্তমানে ৫১ টি আসনে বামপন্থীরা আছে, কংগ্রেস দুটি আসনে। আগে ছয়টি আসনে ছিল কংগ্রেস পরে তৃণমূল কংগ্রেসে যােগ দেয়। পরে নানা প্রলােভনের হাতছানিতে বিজেপির যােগ দেয়। বিজেপি ৫১ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। নয়টি আসনে ইণ্ডিজিনিয়াস পিপল ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (আইপিএফটি) ছেড়ে দিয়েছে। আইপিএফটি নামে উপজাতি সংগঠনটি পৃথক রাজ্যের দাবিতে সােচ্চার। এই সংগঠিটর সঙ্গে কয়েকটি জঙ্গীে গোষ্ঠীর সম্পৰ্ক আছে বলে অভিযোগ৷ সেই সংগঠনের সঙ্গেই বিজেপি গাঁটছাড়া বেঁধেছে। তা নিয়ে বিজেপি দলের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মানিককে সরকারকে বিঁধলেন। তিনি মানিকের বদলে রাজ্যকে হীরা বানাবার অঙ্গিকার করেছেন। ত্রিপুরাতে হীরা’ থাকবে না মানিক’ থাকবে তা ১৮ ই ফেব্রুয়ারীতে আভাস পাওয়া যাবে। ত্রিপুরাবাসী হীরার বৈভবে থাকতে চান না, মানিকের সহজ-সরল জীবনে।
0 comments: