অসম বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের প্ৰথম দিন : গেরুয়া করণের প্রতিবাদ ফটোসেশন ও চা-চক্র বয়কট করল কংগ্রেস


বিধানসভায় বিরােধীদের বাধায় রাজ্যপালের ভাষণ সম্পূর্ণ হলাে না 
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি: 
অসম বিধান সভার বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনেই প্রত্যাশামতই বিরােধীরা রাজ্যপালের ভাষণে হস্তক্ষেপ করে হুলস্থূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখী দাবী করার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান বিরােধী দল কংগ্রেস এবং এ আই ইউ ডি এফ হাতে হাতে বিভিন্ন দাবী সম্বলিত প্লে কার্ড হাতে নিয়ে ওয়েলের কাছে ছুটে যান। রাজ্যপালের ভাষণে বাধা আরােপ করেন, আইন শৃংখলার পরিস্থিতির অবনতি এবং নাগালিম চুক্তির প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেন বিরােধীরা। বিরােধী দলপতি দেবব্রত শইকীয়া, রকিবুল হুসেইন, রেকিবুদ্দিন আহমেদ, অজন্তা নেওগ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ এ আই ইউ ডি এফ সদস্যদের বাধাদানের ফলে রাজ্যপাল মাত্ৰ সাত মিনিট ভাষণ পাঠ করেই তার ভাষণ বিধান সভায় উপস্থাপনা করা হয়েছে বলে আসন ছেড়ে চলে যান। 
বিধানসভার সেন্ট্রাল হ’লে এবং বাইরের লনে গেরুয়া কাপরের সাজ সজ্জার প্রতিবাদে ফটোসেশনে যােগ দেয়নি, এবং চা-চক্রেও অংশ গ্রহণ করেননি বিরােধীরা। রাজ্যপাল তার ভাষণে ‘এ্যডভান্টেজ অসম’ শীর্ষক বিশ্ব বিনিয়ােগকারী সম্মেলনের সফলতা নিয়ে বিশদ বক্তব্য রাখার ক্ষেত্রে বাধা পাওয়ায় রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখী পরিষদীয় পৰম্পরার বাইরে গিয়ে বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিকদের কাছে পুনরায় ‘এ্যডভান্টেজ অসমে’র সাফল্য নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন বলে অভিযােগ উঠেছে। তিনি বলেন, ‘আসিয়ান দেশসমূহর সঙ্গে এই অঞ্চলের যােগাযােগ ব্যৱস্থা ত্বরান্বিত হবে, কলকাতা মুখীনতা হ্রাস পাবে। তিনি নমামি ব্ৰহ্মপুত্র এবং নমামি বরাকের সফলতা নিয়েও কথা বলেন৷ 
রাজ্যপাল তার লিখিত ভাষণে ‘এ্যডভান্টেজ অসম’ শীর্ষক বিশ্ব বিনিয়ােগকারী সম্মেলনে রাজ্যের সঙ্গে সমঝােতা চুক্তিতে আবদ্ধ দেশগুলির বিনিয়ােগের যাতে কোনও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয়। সে ব্যাপারে ভারত সরকারের বিনিয়ােগ ভারত’ এর সঙ্গে সাযুজ্য রক্ষা করে বিনিয়ােগ অসম’ নামে এক অভিকরণ গড়ে তােলার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের অধীনে এই অভিকরণটি থাকবে। 
জাতীয় নাগরিকল্পঞ্জী রূপায়ন নিয়ে তিনি বলেন সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশমৰ্মে এ কাজ চলছে। তিনি স্বীকার করেন আংশিক তালিকায় অনেক প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকের নাম বাদ পরতে পারে, যথাশীঘ্র এক শুদ্ধ এবং সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ পাবে। অসম বাংলাদেশ সীমান্তে ২৬৩ কিমিঃ এলেকার মধ্যে জল ও স্থল সীমান্তের প্রায় ৬১ কিমিঃ আজও উন্মুক্ত হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু রাজ্যপাল দাবী করলেন অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরােধে নদী সীমান্ত এবং স্থল সীমান্ত সীল করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অসম চুক্তি রূপায়নের ক্ষেত্রে সরকার তার প্রতিশ্রুতি মতাে কাজ করছে। 
অসম চুক্তির ৬নম্বর দফার বিষয়গুলি পরীক্ষা করার জন্য কেবিনেট সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজ্যে রাষ্ট্যায়ত্ব সংস্থা হিন্দুস্তান পেপার করপােরেশনর দুটি পেপার মিল জাগিরােড এবং কাছার পেপার মিল গত ১৬ মাস থেকে বন্ধ আছে। কয়েক হাজার কর্মচারী বেতনহীন অনিশ্চিত জীৱন যাপন করছেন। রাজ্যপাল তার ভাষণে যােগীঘােপার অশােক পেপার মিল খােলার ব্যাপারে ভারত সরকার বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু বন্ধ পেপার মিল দুটি সম্পর্কে কোনও আশার বাণী শােনাননি। 
কেন্দ্রীয় সরকারের সুরে রাজ্যপাল বলেন- ২০২২ সালের মধ্যে রাজ্যের কৃষকদের আয় দুগুণ হবে, ইতিমধ্যে ২ লক্ষ সয়েল হেলথ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। আর আই ডি এফ এর অধীনে ১ লক্ষ অগভীর নলকূপ এবং ১০ হাজার সৌর শক্তি চালিত পাম্প কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা সম্পর্কে বলেন ২০১৭-১৮ সালে রাজ্যে ৩.১৯ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্য ধার্য করা হয়েছে। নাবাৰ্ড এবং গ্রাম্য আন্তঃগাথনি উন্নয়ন তহবিলের সহযােগিতায় রাজ্যে ১০০০ হেক্টর ব্যক্তিগত পুখুর খননের ব্যৱস্থা হয়েছে। কাজিরঙ্গা রাষ্ট্ৰীয় উদ্যাণে এবং অন্যান্য বনাঞ্চলে জন্তুদের রক্ষার জন্য সরকার এস এল আর, ইনসার্স রাইফেল, এ কে সিরিজের রাইফেল প্রভৃতি মারানাস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে। রাজ্যে ৪ কোটি বৃক্ষ রােপনের সঙ্গে প্রায় ১৯০০ হেক্টর জমিতে বৃক্ষ রােপনের কাজ করা হয়েছে। 
রাজ্যের মানুষের মদের প্রতি আসক্ত বেড়েছে, রাজ্যপালের ভাষণে তা প্রতীয়মান হয়েছে। ২০১৬ ১৭ সালে রাজ্যের আবকারী বিভাগে রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৯৬৬ কোটি টাকা, যা পূৰ্বৱৰ্ত্তী বছরের তুলনায় ১৬৬ কোটি টাকা বেশি, প্রায় বিশ শতাংশ বেশি হয়েছে। সরকার উপজাতিদের ঘরে ঘরে প্রস্তুত করা পরম্পরাগত মদকে বিজ্ঞান সন্মতভাৱে প্ৰস্তুত করার উপর জোর দিয়েছেন। এ প্রথম চলিত বিধানসভাই ই-বাজেট’ প্রবর্তন করবে, ছাপা বাজেট পুস্তিকার বদলে বাজেট তথ্য সম্বলিত টেবলেট প্রদান করা হবে। 
রাজ্যপাল বলেন প্রধানমন্ত্রী জন ধন যােজনার’ অধীনে ২০১৭ সালের সেপ্তেম্বর মাস পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লক্ষ ব্যাঙ্ক একাউন্ট খােলা হয়েছে। ব্যাঙ্ক একাউন্ট খােলা চা শ্রমিকদের প্রত্যেকের একাউন্টে সরকার ২৫০০ টাকা করে জমা দেওয়া হবে। সরকার ৩৮টি শহরের জন্য ২৮টি চুড়ান্ত মাষ্টার প্ল্যন এবং ১০টি খসড়া মাষ্টার প্ল্যান প্রকাশ করেছে। অটল মিশন ফর রিজুভিনেশন অ্যান্ড আর্বান ট্রান্সফরমেশন প্রকল্প অনুযায়ী ভারত সরকার শিলচর, ডিব্ৰুগড়, নগাঁও এবং গুয়াহাটীকে বেছে কাজ শুরু করেছে। রাজ্যপাল সাংবাদিকদের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প উল্লেখ করে জানিয়েছেন, সাংবাদিকদেরবীমা প্রকল্পের এক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। রাজ্যে যােগাযােগ ব্যৱস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় সড়কের দৈর্ঘ ৩৯০০কিমিঃ থেকে বৃদ্ধি করে ৭০০০ করা হবে । বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জে এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খােলার কথাও রাজ্যপাল বলেছেন। রাজ্যপাল তার ভাষণে রাজ্যের সরকারী কাজকর্মে স্বচ্ছতা আনা, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার লক্ষ্যে জনতা ভবনে ২৮টি বিভাগে ই-অফিস খােলা হয়েছেবলে জানিয়েছেন। রাজ্যে আজও ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন বাের্ড ঘােষণা করা হলেও তা আজও গঠন হয়নি। কিন্তু রাজ্যপাল রাজ্যের স্বীকৃতি প্রাপ্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ভাষিক সংখ্যালঘু, চর অঞ্চলে বহু সংখ্যক কল্যাণমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: