নাগরিকত্বের জটিল প্রক্রিয়া পৃথিৱীর ইতিহাসে নেই, সরকারকে সতর্ক থাকতে হবেঃ হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী

বংশবৃক্ষ নয় বংশবিষে পরিণত হতে চলেছেঃ নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতি 

গুয়াহাটি : সুপ্রিমকোর্ট জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর (এন আর সি) দ্বিতীয় চুড়ান্ত তালিকা ৩১ মে’র মধ্যে প্রকাশের সময় সীমা ঘােষণা করেছে। ঘােষণার পর থেকেই রাজ্যের ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগােষ্ঠীর মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের জনসংখ্যা ৩ কোটি ২৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে এন আর সিনবায়নের কাজ শুরু হয়েছিল। গত ৩১ডিসেম্বৰ রাত ১২টায় প্রথম তালিকায় ১কোটি ৯০লক্ষ মানুষের প্রকাশ পেয়েছে। বাকী ১ কোটি ৩৯লক্ষ মানুষের নাম আগামি ৩১ মে’র মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। হাতে থাকছে মাত্র ২মাস ১০দিন। এখনও ৪৭ লক্ষ বংশ তালিকার পরীক্ষার কাজ বাকী আছে। নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির উপদেষ্টা তথা রাজ্যের বিশিষ্ট আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এই অল্প সময়ের মধ্যে ৪৭ লক্ষ। বংশ তালিকা পরীক্ষা সম্ভৱ নয়, বছর পার হয়ে যাবে, তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে নাগরিকত্ব পরীক্ষার এমন জটিল প্রক্রিয়া নেই, প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদেরও সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে এবং বিদেশী নােটিশ দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ অশিক্ষিত মানুষ এন আর সির এই জটিল প্রক্রিয়াই বিপৰ্য্যস্ত হয়ে পড়েছে, যে কোনও ঘটনা ঘটে যেতে পারে সরকারে এ ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত নির্বাচনের কারণে চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সময়সীমা বৃদ্ধি করতে বলেছিল, কিন্তু সুপ্রীমকোর্ট তা গ্রাহ্য করেনি। নিম্ন অসম থেকে ব্যপক হারে বংশ তালিকায় ভুল ভ্রান্তির খবর আসছে, ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য আইনজীৱিসহ বেশ কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  নেলী থানার পুলিশ তিন জন বাঙালি হিন্দু প্রতিনিধিকে গ্রেপ্তার করে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়েছে। এ ব্যপারে বিশিষ্ট আইনজীবি চৌধুরী বলেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধির বিরুদ্ধে ভুল নথি-পত্র জমা দেওয়ার জন্য ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয় তবে তাদের গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। 
নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির (সি আর পি সি) সম্পাদক প্রধান সাধন পুরকায়স্থ অভিযােগ করেছেন বংশবৃক্ষ নয়, বংশবিষে পরিণত হতে । চলেছে। ব্যপক হারে অশান্তি সৃষ্টি হওয়ার আশংস্থা আছে। সি আর পি সির সম্পাদক প্রধান সাধন পুরকায়স্থ অভিযােগ করে বলেন, কাছাড় জেলার জয়পুর অঞ্চলের দুইজন মহিলার বংশ তালিকা খুঁজে পাওয়া গেছে ওদালগুড়ি জেলায়, এখন প্রশ্ন হচ্ছে অসহায় দুই মহিলাকে কে নিয়ে যাবে ওলাদগুড়ি। কাছাড় জেলার ডেপুটি কমিশ্যনার এস বিশ্বনাথনের কাছে অভিযােগ দায়ের করা হয়। পুরকায়স্থ বলেন, বংশ বৃক্ষ নিয়ে বহু অভিযােগ আছে। খবরে প্রকাশ মরিগাঁও জেলার নেলী থানার অন্তর্গত গ্রামে সুমিতা দাস, রতীন্দ্র দাস এবং রবীন্দ্র দাস নামে বাঙালী হিন্দু প্রতিনিধি বংশতালিকায় ভুল তথ্য দাখিল করায় গ্রেপ্তার করে তেজপুর ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানাে হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৫ সালে ৭ সেপ্তেম্বর জোরা নােটিফিকেশন জারি করেছিল। সেই নােটিফিকেশন আজও কার্যকরী করা হয়নি। তা কার্যকরী হলে ওই ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভৱ হতাে না। নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতি সম্পাদক। প্রধান সাধন পুরকায়স্থ এ কথা জানিয়ে বলেন, বাঙালী হিন্দুদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকত্ব বিল পাশের সদৃচ্ছা কেন্দ্রীয় সরকারের নেই, কেন্দ্রীয় সরকার তিন তালাক বিলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংসদে পাশ করিয়ে নিল, নাগরিকত্ব বিলটিও পাশ করিয়ে নিয়ে পারতাে। 
আমসুর সভাপতি আজিজুর রহমান সুপ্রিমকোর্টের ওপর আস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, হিন্দু-মুসলিম প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের নাম যাতে চুড়ান্ত তালিকায় প্রকাশ পায়, বৈধ নাগরিকদের সঙ্গে কোনও অন্যায় না হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে। 
এদিকে আলফার পক্ষ থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করে ১৮২৬ সালের ইয়াণ্ডাবু চুক্তির শর্ত মেনে সেই সময় পর্যন্ত এই রাজ্যে আসা মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবী জানানাে হয়েছে। সেই সময় রাজ্যে চা জনগােষ্ঠী এবং গাের্খা জনগােষ্ঠীর মানুষের অস্তিত্ব ছিলেন না বলে আলফার অভিমত। খিলঞ্জীয়া রক্ষা মঞ্চের প্রধান অনুপ চেতীয়াও একই অভিমত পােষণ করে ইয়াণ্ডাবু চুক্তির আধারে নাগরিকত্ব প্রদানের দাবী জানিয়েছে।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: