মাণিক যখন অপরাধী... ভাঙা হলাে লেলিন মূর্তি

গুয়াহাটি : ৩ মার্চ ত্রিপুরায় ফল প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিজেপির কর্মী এবং সমর্থকরা দক্ষিণ ত্রিপুরার বেলােনিয়ায় লেনিনের প্রতিমূর্তি গুড়িয়ে দিলেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই নিজের মায়ের নামে পাওয়া বাড়িটি পার্টীর নামে দান করার পর সরকারী আবাসনে থাকতেন তিনি। ধনপুরের বিধায়ক আবাস গ্রহণ না করে স্ত্রী পাঞ্চালির বােনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মাণিক সরকার। এই সময়ের মধ্যেই বিজেপির শরিক দল ইন্ডিজিনিয়াছ পিপলস ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (আই পি এফ টি) প্রধান নরেন্দ্র চন্দ্র দেব বর্মা ঠারেঠোরে জানিয়ে দিলেন। তারা পৃথক রাজ্য তুইল্যান্ডের দাবী ছাড়বে না। তা ছাড়া উপমুখ্যমন্ত্রীর পদতাে লাগবেই। বিজেপি পর্যবেক্ষক সুনীল দেওধর অবশ্য জানিয়ে দেন, আলাদা রাজ্যের দাবি সরিয়ে রাখার পরই আইপিএফটির সঙ্গে তাদের সমঝােতা হয়েছে। আবার এই সময়ের মধ্যেই ত্রিপুরার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর অভিযােগ করলেন, তাদের ৫১৪ জন দলীয় কর্মীকে শারিরীকভাবে আক্রমণ করেছে এবং ১৫৩৯ টি ঘর-বাড়ি আক্রমণ করেছে বিজেপি। 
অপরদিকে বিজেপির সহ-সভাপতি সুবল ভৌমিক অভিযােগ করেন সিপিএম কেডাররা শতাধিক বিজেপি সমর্থকদের ওপর আক্রমণ করেছে। লেলিনের মূর্তি ভাংচুড়ের পরই শুধু দেশই নয়, বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। 
রাজ্যের কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি নেতা অখিল গগৈ অভিযােগ করেছেন, তালিবানরা যেমন আফগানিস্থানের বামিহয়ান প্রদেশে বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করে বিশ্বজুড়ে আলােড়ন ফেলে দিয়েছিলেন, ত্রিপুরায় লেলিনের প্রতিমূর্তি | ভেঙে ফেলায় সেইরকমই প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীর ছাত্ররা জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামপ্রসাদ মুখার্জির প্রতিমূর্তি ভেঙে ফেলে। এই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। ত্রিপুরার লেলিন মূর্তির ধ্বংসসাব শেষের ছবিটি ভাইরেল হয়ে গেছে। 
বাংলাদেশের বৃহত্তর কুমিল্লার চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার মেঘদাইর গ্রামে আদিবাসিন্দা হিরুধন দেব এবং মীনারাণী দেবীর একমাত্র ছেলে বিপ্লব কুমার দেব মুক্তি যুদ্ধের সময় ত্রিপুরা চলে আসেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে শপতগ্রহণ করবেন। অসমে ২০-৩০ বছর বা তারও বহু বছর ধরে বেশি বসবাসকারী হিন্দু-মুসলিম সংখ্যালঘু মানুষগুলিকে বাংলাদেশি তকমা সেটে ডি ভােটার বানানাে হচ্ছে বা ডিটেনশন ক্যাম্পে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আজ সেই বিজেপি সরকারই বাংলাদেশি নাগরিককে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসাতে যাচ্ছেন। রাজ্যের জাতীয়তা মহলে এই প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্যের বিশিষ্ট সাংবাদিক অজিত ভূইয়া বুধবার এই প্রশ্ন তুলে বলেন, বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্বের প্রশ্নে বিজেপি যে কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে বিপ্লব কুমাৰ দেব। যিনি বাংলাদেশি হয়েও মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে যাচ্ছেন। 
ত্রিপুরা সরকারের পতন নিয়ে বিভিন্ন কাটা-ছেড়া চলছে। ত্রিপুরায় জ্বলন্ত বেকার সমস্যা, তৃণমূল পর্যায়ে দুর্নীতি ছেয়ে গেছে. সুপ্রিম কোর্ট প্রাথমিক পর্যায়ের ১০,৩২৩ শিক্ষকের নিয়ােগ বাতিল করেছে, সারদা-রােজভ্যালি প্রভৃতি চীট ফ্যান্ড কেলেংকারিতে জড়িয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি অভিযােগ করা হচ্ছে। কিন্তু উত্তরপূর্বাঞ্চলের ছােট্ট একটি রাজ্যে স্বাক্ষরতার হার ৯৬ শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে। সে কথা কেউ বলছেন না। দীর্ঘ ২৫ বছরে বামপন্থী সরকারের আমলে বড় ধরণের কোনও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি। শান্তি-সম্প্রীতি বজায় আছে। সে কথাও কেউ বলছেন না। সব থেকে বিষ্ময়কর কথা হচ্ছে, মাণিক সরকারের মতাে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি থাকা এক মুখ্যমন্ত্রীকে অপরাধী সাজিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে। যেদিন সােনামুড়ায় গণনা চলছিলাে, গণনায় দেখা যায়, মাণিক সরকার মাত্র ৪ হাজার ভােটে এগিয়ে আছেন। তখন বিজেপি প্রার্থী প্রতীমা ভৌমিক নির্বাচন অফিসারের কাছে আঙুল তুলে দাবি জানান, তিনি জিতে গেছেন। এখনি সার্টিফিকেট ইস্যু করুন। নতুবা ফল ভুগতে হবে। সিপিএম এজেন্টদের বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয়। হুলুস্থল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মাণিক বাবু চুপচাপ বসে থেকে মাত্র একটি শব্দ উচ্চারণ করেন, এমন অসভ্যতা আর কতখন চলবে। তিনি টেবিলে বসে সরাসরি নির্বাচন কমিশনারকে এক চিঠি লিখে পাঠান। তার পরই গণনা বন্ধ হয়ে যায়। দিল্লীতে সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট প্রমুখ নেতৃস্থানীয় বামপন্থী নেতারা দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযােগ দাখিল করেন। তাৎক্ষনিকভাবে ধনপুর কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনের সঙ্গে থাকা ভিভিপ্যাটের ভােটগুলি গণনা শুরু করার সময় দেখা যায়, মাণিক সরকারের পক্ষেই সংখ্যাধিক ভােট পড়েছে। তাকে বিজয়ী বলে ঘােষণা কৰা হয়। এই ঘটনায় প্রমাণ করে ত্রিপুরায় কি ধরণের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: