গুয়াহাটি : কেন্দ্রের যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) অসম সফরের প্রাক্ মুহূর্ত থেকে রাজ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী মহল মানুষের ভাবাবেগকে পুঁজি করে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা শুরু করেছে। বিলটি পাশ হলে ১কোটি ৪০ লক্ষ বাংলাদেশী হিন্দু অসমের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলবে, এই ধরণের মন গড়া ভয় দেখিয়ে অসমের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইছে।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সােনােয়াল যেখানে বার বার বরাক ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকার মধ্যে সম্প্রীতি, সদ্ভাব গড়ে তােলার উপর জোর দিচ্ছেন সেখানে জেপিসির বরাক সফরের অব্যবহিত পর থেকেই বরাক বিরােধী হাওয়া চরমে পৌঁছিয়েছে। নাগরিকত্ব সংশােধনী বিলকে অধিকাংশ মানুষ সমর্থন করার অপরাধে উগ্রজাতীয়তাবাদী মহল রাতারাতি বরাকবাসীকে কাঠগড়ায় তুলেছে। হােজাইয়ের প্রাক্তন মন্ত্রী ডাঃ অর্ধেন্দুকুমার দে, বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব, কৃষকমুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈ এবং নিষিদ্ধ সংগঠন আলফার কয়েকজনের মন্তব্যই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য ইন্ধন যুগিয়েছে বলে অভিযােগ উঠেছে।
এ আই ইউ ডি এফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমল আজ এক বিবৃতিতে ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দেকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বিবৃতিতে বলেছেন, কারাে সাহস থাকলে বাঙালিদের গায়ে হাত দিক’ এমন সব সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের জন্য প্রাক্তন মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা উচিত। প্রাক্তন মন্ত্রী অর্ধেন্দু কুমার দে আজ বলেছেন, তিনি কোনও জাতি বিদ্বেষী মন্তব্য করেন নি। তার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
তিনি অভিযােগ করেন, আলফার স্বঘােষিত কমাণ্ডার ইন চিফ পরেশ বরুয়া তাকে টেলিফোনে হুমকি দিয়েছে। তিনি বলেন, আলফার হাতে এক পুলিশ অফিসার খুন হলাে সে ব্যাপারে কেও আলফার নিন্দা না করে তাকেই অপবাদ দিচ্ছে। ২০১৪ সালের ভােটার তালিকাকে ভিত্তি বর্ষ হিসাবে গণ্য করে নাগরিকত্ব সংশােধনের দাবি জানিয়েছে, ডাঃ দে সেই অপরাধে তাকে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি থেকে শােকজ করা হয়েছে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী করনাড সাংমা, বিজেপির শরিক দল হয়েও ক্যাবিনেট কমিটিতে নাগরিকত্ব সংশােধনী বিলকে প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজ্যে বিজেপি বিধায়ক অতুল বরা এবং কৃষকমুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈ আজ মুখ্যমন্ত্রী সর্বনন্দ সােনােয়ালের কাছে দাবি জানিয়েছে মেঘালয়ের সরকারের মতাে বিলটিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য। রাজ্যিক জমিয়ত উলামার নেতৃবৃন্দ আজ দিশপুর প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বলেন, বিলটির বিরুদ্ধে জেপিসির কাছে স্মারক পত্র দিয়ে অভিযােগ করা হয়েছে, অসমবাসী ইতিমধ্যে ২৫লক্ষ শরনার্থীর বােঝা গ্রহণ করেছে।
আর বাঙালি হিন্দুদের বােঝা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এ আই ইউ ডি এফের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আজ এক বিবৃতিতে জানান, তাদের সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাস সংশােধনী বিলটি সমর্থন করেন নি, কেবল ব্যক্তিগত অভিমত পােষণ করেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এই বিলটিকে অসম বিরােধী বলে উল্লেখ করে গণভােটের দাবি জানিয়েছেন।
নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতি সহ ১৬টি সংগঠনের সভাপতি তথা সারা আসাম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের উপদেষ্টা সুকুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখর দে এবং চন্দন মজুমদার হুসিয়ারি করেছেন। গতকাল সুকুমার বিশ্বাস কারাের সঙ্গে আলােচনা না করে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈকে কথা দিয়েছেন।
তাদের ১৬টি সংগঠন সংশােধনী বিলটির বিরােধী। কিন্তু এ ১৬টি সংগঠনের স্থিতি হচ্ছে বিলটিকে সমর্থন করা। এদিকে রাজ্যের সেকেন্ড ইন কমান্ড অর্থ মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সংবাদ মাধ্যমের কাছে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, অসম চুক্তি কোনও বেদ বাক্য নয় যে মানতে হবেই। কংগ্রেসের দুমুখাে নীতির সমালােচনার কথা বলেছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাজ্যে আসা বাঙালি হিন্দুদের রক্ষা কবচ দেওয়া হবে বলে কেবিনেট কমিটিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আজ তিনি উল্টো কথা বলছেন।
তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জী চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরই যৌথ সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ পাবে তখনি প্রমাণ হয়ে যাবে রাজ্যে কত লক্ষ বাংলাদেশী হিন্দু এবং বাংলাদেশী মুসলিম আছে। তাই নিজেদের মধ্যে কাজিয়া করার কোনও মানে হয় না। রাজ্যে ভাবাবেগ সৃষ্টি করে বামপন্থী নেতারা রাজ্যের সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চাইছে।
0 comments: