গুয়াহাটি : সর্বানন্দ সােনােয়াল নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোট সরকারের অন্যতম শরিক দল অসম গণ পরিষদ এবং বিপিএফ। এই শরিক দল দুটি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উত্থাপিত নাগরিকত্ব সংশােধনী বিলের বিরােধিতা করেছে। বিপিএফ দলের প্রধান হাগ্রামা মহিলারীনা বিরােধিতানা সমর্থন করে এ দুইয়ের মাঝে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন। প্রধান শরিক অগপ তাদের ক্যাবিনেট পৰ্য্যায়ের দুইজন মন্ত্রী মন্ত্রীসভায় আছেন। এর পরেও দলের সভাপতি তথা কৃষিমন্ত্রী অতুলরা এবং দলের অন্যতম সদস্য জলসম্পদমন্ত্রী কেশবমহন্ত থাকার পরেও বিজেপিসরকারের আনা বিলটির ঘােরতরভাবে বিরােধিতা করে অগপ রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দলের বিধায়ক রমেন্দ্র নারায়ণ কলিতা বলেছেন, সরকারের মধ্য থেকেই অগপ বিলটির বিরােধিতা করে যাবে। সরকার থেকে সরে না আসায় অগপর সমর্থকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। আজ দলের প্রাক্তন সভাপতি তথা দু'দুবারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্তকে সরকার থেকে সরে আসা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, জবাবে জানান, তিনি অগপ দলের এক সাধারণ সদস্য এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। প্রসঙ্গত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত প্রথম থেকেই সংশােধনী বিলটির তীব্র বিরােধিতা করে আসছেন।
দিল্লীতে গিয়ে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিলটি বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন। গত ৭তারিখে তাঁরই নেতৃত্বে অপর এক প্রতিনিধি দল যৌথ সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র আগরওয়ালার কাছে এক স্মারক পত্র প্রদান করে। আজ মহন্ত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ধর্ম ও ভাষার ভিত্তিতে দেশে কোনও আইন হতে পারে না। তিনি বলেন, অরুণাচল প্রদেশ এবং নাগাল্যাণ্ডে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সমস্যা নেই, কারণ সেখানে ‘ইনার লাইন পারমিট আছে। বাইরের কোনও মানুষ প্রবেশ করতে পারে না। মেঘালয়, অসমে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সমস্যা আছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চেয়ারম্যানকে স্মারক পত্র দিয়ে অসমকে বাদ দিয়ে সংশােধনী বিলটি বাস্তবায়িত করার দাবি জানালে চেয়ারম্যান জানান, সারা দেশের জন্য এই বিল, অসমকে বাদ দিতে হলে সংবিধান সংশােধন করতে হবে। আসুর সভাপতি হিসাবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত এবং অল আসাম গণ সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে প্রাক্তন মন্ত্রী বিরাজ কুমার শর্মা অসম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।
তাঁদের দুইজনের পক্ষ থেকে যৌথ সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানকে স্মারক পত্র দিয়ে বলা হয়েছে, অসম চুক্তির আধারে অসম চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে ভিত্তি বছর হিসাবে গণ্য করে নাগরিকত্ব সংশােধনের দাবি জানান হয়েছিল। অসম চুক্তির ৬ এবং ৭ নম্বর ধারায় অসমের ভাষা-সংস্কৃতি এবং পরম্পরাগত ঐতিহ্য এবং আইনী রক্ষাকবজের দাবি অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নাগরিকত্ব বিল কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই বিলটি পাশ হলে বাংলাদেশের ১ কোটি ৭০ লক্ষ বাংলাদেশী হিন্দুর দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে, যার ফলে অসমের খিলঞ্জীয়া ভূমিপুত্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর মতাে বিলটি প্রত্যাখ্যানের দাবি জানিয়েছেন মহন্ত। যৌথ সংসদীয় কমিটি আজ শিলংয়ে গণ শুনানি গ্রহণ করেন। বিজেপির শরিক দলের মুখ্যমন্ত্রী করনাড সাংমা ইতিমধ্যে ক্যাবিনেট কমিটিতে বিলটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে আসুর প্রতিনিধি দল এবং আত্মসমর্পণকারী আলােচনাপন্থী আলফা নেতা অনুপ চেতিয়ার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র আগরওয়ালার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রস্তাবিত বিলটির তীব্র বিরােধিতা করেছেন।
0 comments: