এন আর সির তালিকায় লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নাম বাদ পড়ার আশঙ্খা, তার পর নাগরিকত্ব বিলের, প্ৰাসঙ্গিকতা থাকবেনা৷
গুয়াহাটি, ১৪ মে’ঃ নাগৰিকত্ব সংশোধনী বিলটিআদৌ লোকসভায় পাশ হবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল সন্দেহ প্ৰকাশ করেছে ৷ কারণ ৩০ জুন রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এন আর সি) চুড়ান্ত প্ৰতিবেদন প্ৰকাশের পরই যৌথ সংসদীয় কমিটির গণ শুনানির প্ৰতিবেদন পেশ হতে পারে৷ তার আগে রাজ্যের রাজনৈতিক ছবি সম্পূৰ্ণ পায়ে যাবে৷ কারণ সব মহলেই আশঙ্খা প্ৰকাশ করা হয়েছে এন আর সির তালিকা থেকে প্ৰায় ৪০-৪৫ লক্ষ বাঙালি হিন্দু ও মুসলিম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নাম বাদ পড়বে৷ এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যে কি হবে? ভোটাধিকার হরণ করে এই বৃহৎ সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে শুধু মাত্ৰ ‘ওয়াৰ্ক পারমিট’ দিয়ে বাকি সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে৷ এন আর সিকে ঘিরে এই ধ্বণের হিসাব নিকাশ চলছে, প্ৰায় রাষ্ট্ৰহীন নাগরিকদের সমস্যা নিয়ে দেশ জুড়ে তীব্ৰ ক্রিয়া-প্ৰতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে৷ বাংলাদেশ সরকার বলে দিয়েছে তাদের দেশ থেকে কোনও বাংলাদেশী অসমে প্ৰবেশ করে নি৷ ভারত-বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও প্ৰত্যপৰ্ণ চুক্তিও হয় নি৷ কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্ৰমন্ত্ৰকও জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে প্ৰত্যপৰ্ণ চুক্তির প্ৰয়োজন নেই৷ তাই এন আর সির চুড়ান্ত তালিকায় বাদ পরা লক্ষ লক্ষ ‘দেশহীন’ সংখ্যালঘু মানুষগুলিযাবে কোথায়? তাদের সমস্যা ক্রমশ জটিল ও গুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে৷ তখন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্ৰাসঙ্গিকতায় থাকবে না৷ অথচ অনিশ্চিত প্ৰস্তাবিত নাগরিকত্ব বিল নিয়ে রাজ্য জুড়ে যে ভাবে প্ৰতিবাদের ঢেউ উঠেছে সাম্প্ৰদায়িক সম্প্ৰীতির বিষ-বাষ্প ছড়াচ্ছে তাতে প্ৰতীয়মান হয় অসম আন্দোলনের মতো বাঁধন ছাড়া প্ৰতিবাদের ঢেউয়ের অন্তরালে অন্য কোনও রহস্য আছে৷ বিজেপি সভাপতি রঞ্জিত দাস, সরকারের সেকেণ্ড ইন কমাণ্ড অৰ্থমন্ত্ৰী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা প্ৰমুখ নেতারা বার-বার বলছেন, এন আর সির চুড়ান্ত প্ৰতিবেদন যাতে প্ৰকাশ না পায়, তাতে প্ৰতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের সূত্ৰপাত হয়েছে৷ প্ৰস্তাবিত সংশোধনী বিল যা এখনও সংসদীয় কমিটিতে পড়ে আছে, আদৌ লোকসভায় পেশ করা হবে কি না সন্দেহ আছে৷ এই প্ৰস্তাবিত বিলের বিরোধী অগপর খাদ্য সরবরাহ বিভাগের মন্ত্ৰী ফণী ভূষণ চৌধুরী আজ বিধানসভার অগপ কাৰ্যালয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্যক্তিগত অভিমত পোষণ করে বলেন, বিলটি আদৌ পাশ হবে কি না সন্দেহ আছে৷ কিন্তু বিলটির মতামত নেওয়ার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি পর-পর দুদিন বরাক উপত্যকায় গণ শুনানি নেওয়ার ফলে বরাক-ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকার মধ্যে ভূল বোঝা-বুঝির সৃষ্টি হয়েছে৷ তার প্ৰ ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকায় মাত্ৰ একদিন শুনানি হলো, বরাক উপত্যকায় কেন দুদিন শুনানি হলো? উজান অসমে কেন হলো না? অতীতে বিভিন্ন ভাষাগত সংঘৰ্ষ প্ৰভৃতির জন্য বরাক উপত্যকার মানুষের মধ্যে সন্দেহ অবিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছিল৷ অসমিয়া-বাঙালির মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল৷ অনেক স্বাভাবিক হয়ে আসছিল৷ পুনরায় যৌথ সংসদীয় কমিটির গণ-শুনানিকে কেন্দ্ৰ করে বরাকে ব্ৰহ্মপুত্ৰ বিরোধী এবং ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকায় বরাক বিরোধী মনোভাবের জন্ম হয়েছে৷ এই অগ্নিগৰ্ভ পরিস্থিতিতে যদি বরাক উপত্যকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী বা পৃথকতাবাদী আন্দোলন গড়ে উঠে তবে অসমের প্ৰবল ক্ষতি হবে৷ বিলটি আদৌ পাশ হবে কি না, কবে হবে তা অনিশ্চিত৷ তবুও বিলটি পাশ হলে বাংলাদেশর ১ কোটি ৭০ লক্ষ বাংলাদেশী হিন্দু অসমের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলবে৷ সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্ৰস্থ হবে অসমের বাঙালি হিন্দুদের৷ যারা দীৰ্ঘ বছর থেকে অসমিয়াদের পাশে থেকে রাজ্যের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করেছে৷ তাই রাজ্যের প্ৰতিটি জনগোষ্ঠীর উচিত বিলটির তীব্ৰ বিরোধীতা করা৷ এমন কোনও আন্দোলন করা উচিত নয়, যার ফলে বরাক-ব্ৰহ্মপুত্ৰ মাঝে সম্প্ৰীতি সম্পৰ্কে ফাটল সৃষ্টি হয়৷
0 comments: