অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি :
জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এন আর সি) চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশের কাজ যুদ্ধ গতিতে চলছে। বংশপঞ্জী, এবং পঞ্চায়েত সচিবদের তালিকা পরীক্ষার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। একজনের লিগ্যাসি ডাটা বহু মানুষ ব্যবহার করার বহু অভিযােগ আসছে। ভুল নথি দাখিল করার অভিযােগে অনেক মানুষকে এই ব্যাপারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রাজ্যের সংখ্যালঘু সংগঠনগুলাে অভিযােগ করেছে, নাগরিকপঞ্জি পরীক্ষার নামে রাজ্যের গরীব সংখ্যালঘু মানুষগুলিকে হেনস্তা করা হচ্ছে। রাজ্যের ৩ কোটি ২৯ লক্ষ মানুষ এন আর সি নবীকরণের জন্য আবেদন করেছিল। তার মধ্যে ১ কোটি ৯০লক্ষ মানুষের। নাম গত ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে রাতে প্রকাশ পেয়েছে।
রাজ্যের মানুষ ৬ কোটি ৫০ লক্ষ নথি জমা দিয়েছিল। তার মধ্যে প্রায় ৯৭-৯৮ শতাংশ নথি পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে, এন আর সি সূত্রে জানা গেছে। প্রায় ৫ লক্ষ ৫০ হাজার নথি বহ্রািজ্যে পাঠনাে হয়েছিল পরীক্ষার জন্য কিন্তু মাত্র ২ লক্ষ নথি ফিরে এসেছে। বিদেশেও কয়েক হাজার নথি পাঠানাে হয়েছিল। বহিরাজ্যের সরকারগুলির মুখ্য সচিবদের কাছে কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্ৰালয় থেকে চিঠি পাঠিয়ে যথাসত্তর নথিগুলি পরীক্ষার পাঠিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছিল। কিন্তু অধিকাংশ রাজ্য কোনও গুরুত্ব দেয় নি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির কাজ চলছে। আগামি ৩১ মে’র মধ্যে খসড়া তালিকা এবং ৩০ জুনের মধ্যে চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে হবে। হাতে আছে মাত্র দু'মাস।
বহিঃরাজ্যের নথির ওপর ভরসা না করে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি কর্তৃপক্ষ ৪ মে থেকে বহিরাজ্যের মানুষদের এন আর সি কেন্দ্রে ডেকে এনে আগে দাখিল করা নথি পত্র পুনরায় পরীক্ষা করবে সংশ্লিষ্ট জেলার ডেপুটি কমিশনারের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে এই পুনরীক্ষণ চলবে, সেই সঙ্গে বাকী থাকা ১ কোটি ৩৯ লক্ষ মানুষের নথি পত্রগুলিও পুনরায় পরীক্ষা করা হবে। এর মধ্যে পঞ্চায়েত সচিবদের ইস্যু করা ৪৮ লক্ষ মহিলাদের নথি পত্রগুলি পরীক্ষার কাজ ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২৯লক্ষ বংশপঞ্জির পরীক্ষার কাজও এগিয়ে চলছে। এই কাজে নানা বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, এন আর সি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও নির্দিষ্ট সময়ে চুড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ পাবে। রাজ্যের বরাক উপত্যকা এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলির মানুষ ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে আছে। তাদের প্রশ্ন এন আর সি তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত হবে তাে? বরাক উপত্যকা অখণ্ড ভারতের অংশ, সিলেট জেলার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ছিল করিমগঞ্জ জেলা, সেই জেলার আদি বাসিন্দাদেরও খিলঞ্জিয়া হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে না।
দেশ বিভাজনের পর তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ বরাকের বিভিন্ন স্থানে এসে স্থায়ী পুনরবাসনের। ব্যবস্থা করে নিয়েছে। তাদের অধিকাংশের হাতে বৈধ নথিপত্র নেই, আজ তাদেরকে বিপদের মুখে পড়তে হচ্ছে! নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতি আশঙ্খ ব্যক্ত করেছে বরাক উপত্যকায় বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে কয়েক লক্ষ মানুষের নাম জাতীয় নাগরিকপঞ্জির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে না।
এ প্রেক্ষাপটে খিলঞ্জিয়া সুরক্ষা মঞ্চের চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার হরি শঙ্কর ব্রহ্ম যে গােপন প্রতিবেদন পেশ করেছেন তাতে রাজ্যের এক ভয়াবহ ছবি প্রকাশ পেয়েছে। তিনি তার ১৪৭ পৃষ্ঠা প্রতিবেদনে অভিযােগ করেছেন রাজ্যের অধিকাংশ সত্র, সরকারি জমি, বনাঞ্চল, চরাঞ্চল প্রভৃতি জায়গা সন্দেহজনক নাগরিকদের কবলে চলে গেছে। তিনি নতুন করে ভূমি নীতি দাবি করে বলেছেন— ১৯৬৫ থেকে রাজ্যে কোনও জমির সমীক্ষা হয় নি। রাজ্যের জাতীয়তাবাদী মহলের দাবি হরি শঙ্কর ব্রহ্মের প্রতিবেদনকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
0 comments: