এন আর সির তালিকায় লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু জনগােষ্ঠীর নাম বাদ পড়ার আশংকা

নাগরিকত্ব সংশােধনী বিলঃ যৌথ সংসদীয় কমিটির শুনানির ফলে বরাকব্রহ্মপুত্র, অসমিয়া বাঙালির মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছেঃ ফণী ভূষণ চৌধুরী


গুয়াহাটি : নাগৰিকত্ব সংশােধনী বিলটি আদৌ লােকসভায় পাশ হবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল সন্দেহ প্রকাশ করেছে। কারণ ৩০ জুন রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এন আর সি) চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পরই যৌথ সংসদীয় কমিটির গণ শুনানির প্রতিবেদন পেশ হতে পারে। তার আগে রাজ্যের রাজনৈতিক ছবি সম্পূর্ণ পাল্টিয়ে যাবে। কারণ সব মহলেই আশঙ্খ প্রকাশ করা হয়েছে এন আর সির তালিকা থেকে প্রায় ৪০-৪৫ লক্ষ বাঙালি হিন্দু ও মুসলিম সংখ্যালঘু জনগােষ্ঠীর নাম বাদ পড়বে। 
এই বৃহৎ জনগােষ্ঠীর ভাগ্যে কি হবে? ভােটাধিকার হরণ করে এই বৃহৎ সংখ্যক জনগােষ্ঠীকে শুধু মাত্র ‘ওয়ার্ক পারমিট’ দিয়ে বাকি সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে। এন আর সিকে ঘিরে এই ধরণের হিসাব নিকাশ চলছে, প্রায় রাষ্ট্রহীন নাগরিকদের সমস্যা নিয়ে দেশ জুড়ে তীব্র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ সরকার বলে দিয়েছে তাদের দেশ থেকে কোনও বাংলাদেশী অসমে প্রবেশ করে নি। ভারত-বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও প্রত্যপর্ণ চুক্তিও হয় নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যপর্ণ চুক্তির প্রয়ােজন নেই। 
তাই এন আর সির চুড়ান্ত তালিকায় বাদ পরা লক্ষ লক্ষ ‘দেশহীন’সংখ্যালঘু মানুষগুলি যাবে কোথায়? তাদের সমস্যা ক্রমশ জটিল ও গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তখন নাগরিকত্ব সংশােধনী বিলের প্রাসঙ্গিকতায় থাকবে না। অথচ অনিশ্চিত প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিল নিয়ে রাজ্য জুড়ে যে ভাবে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে তাতে প্রতীয়মান হয় অসম আন্দোলনের মতাে বাঁধন ছাড়া প্রতিবাদের ঢেউয়ের অন্তরালে অন্য কোনও রহস্য আছে। 
বিজেপি সভাপতি রঞ্জিত দাস, সরকারের সেকেণ্ড ইন কমাণ্ড অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা প্রমুখ নেতারা বারবার বলছেন, এন আর সির চুড়ান্ত প্রতিবেদন যাতে প্রকাশনা পায়, তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশােধনী বিল যা এখনও সংসদীয় কমিটিতে পড়ে আছে, আদৌ লােকসভায় পেশ করা হবে কি না সন্দেহ আছে। এই প্রস্তাবিত বিলের বিরােধী অগপর খাদ্য সরবরাহ বিভাগের মন্ত্রী ফণী ভূষণ চৌধুরী আজ বিধানসভার অগপ কার্যালয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্যক্তিগত অভিমত পােষণ করে বলেন, বিলটি আদৌ পাশ হবে কি না সন্দেহ আছে। কিন্তু বিলটির মতামত নেওয়ার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি পর-পর দুদিন বরাক উপত্যকায় গণ শুনানি নেওয়ার ফলে বরাক ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকার মধ্যে ভুল বােঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। 
তার প্রশ্ন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় মাত্র একদিন শুনানি হলাে, বরাক উপত্যকায় কেন দুদিন শুনানি হলাে? উজান অসমে কেন হলাে না? অতীতে বিভিন্ন ভাষাগত সংঘর্ষ প্রভৃতির জন্য বরাক উপত্যকার মানুষের মধ্যে সন্দেহ অবিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছিল। অসমিয়া বাঙালির মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। পুনরায় যৌথ সংসদীয় কমিটির গণশুনানিকে কেন্দ্র করে রাকে ব্রহ্মপুত্র বিরােধী এবং ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকায় বরাক বিরােধী মনােভাবের জন্ম হয়েছে। এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে যদি বরাক উপত্যকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী বা পৃথকতাবাদী আন্দোলন গড়ে উঠে তবে অসমের প্রবল ক্ষতি হবে। 
বিলটি আদৌ পাশ হবে কি না, কবে হবে তা অনিশ্চিত। তবুও বিলটি পাশ হলে বাংলাদেশর ১ কোটি ৭০ লক্ষ বাংলাদেশী হিন্দু অসমের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলবে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে অসমের বাঙালি হিন্দুদের। যারা দীর্ঘ বছর থেকে অসমিয়াদের পাশে থেকে রাজ্যের উন্নয়নে আত্মনিয়ােগ করেছে। তাই রাজ্যের প্রতিটি জনগােষ্ঠীর উচিত বিলটির তীব্র বিরােধীতা করা। এমন কোনও আন্দোলন করা উচিত নয়, যার ফলে বরাক-ব্রহ্মপুত্র মাঝে সম্প্রীতি সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হয়।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: