গুয়াহাটি : অসমের কাজিরঙা রাষ্ট্ৰীয় উদ্যান সমগ্র বিশ্বের পয্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্ৰবিন্দু৷ কারণ এই রাষ্ট্ৰীয় উদ্যানেই বিশ্বের গরিষ্ঠ সংখ্যক এক শৃঙ্গবিশিষ্ট, বিপন্ন প্রজাতির গণ্ডারের আবাসস্থল। বিরল প্রজাতির গণ্ডার অসমের জাতীয় প্রতীকও, অসমের গর্ব এবং অসমের স্বাভিমানও। অথচ এই গণ্ডার রক্ষার ক্ষেত্রে সরকার কম বেশি ব্যর্থ, পুর্বতন কংগ্রেস সরকারের আমলে রাজ্যে এক বৃহৎ সংখ্যক গণ্ডার চােরা শিকারিদের হাতে নিহত হয়েছে।
গণ্ডারের শৃঙ্গ বিভিন্ন ঔষধি গুণ আছে, চীন, ম্যায়ানমার প্রভৃতি রাষ্ট্রে এই শৃঙ্গ ব্যাপক হারে চােরাপাচার হচ্ছে। স্রেফ অন্ধ বিশ্বাস এবং কুসংস্কারের বলি হচ্ছে বিরল প্রজাতির নিরিহ প্রাণী গণ্ডারগুলি। গত ৭২ ঘন্টায় কাজিরঙা রাষ্ট্ৰীয় উদ্যানে তিনটি গণ্ডারকে নৃশংসভাৱে হত্যা করে চোরা শিকারিরা খৰ্গ গুলি কেটে নিয়ে পালিয়েছে। রাজ্যের বনমন্ত্রী প্রমিলা রানী ব্ৰহ্মা দক্ষিণ ভারত টুরে ব্যস্ত। তিনি অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে গণ্ডার হত্যা প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে মারণাস্ত্র কিনতে গিয়েছেন বলে টেলিফোনে জানিয়েছেন। গত বছর একে সিরিজের অত্যাধুনিক বন্দুক কেনার জন্য রাজ্য সরকার দশ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। এখন পৰ্য্যন্ত বন্দুক কেনায় হয় নি। মানান্ধা আমলের বন্দুক দিয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্ৰ শস্ত্ৰে সজ্জিত চােরাশিকারিরা গণ্ডার হত্যা করছে। গত বৃহস্পতিবার, এবং শনিবার কাজিরঙার বুড়া পাহাড় অঞ্চলের টুনিকাটি বনশিবিরের কাছে চােরা শিকারিরা শাবক সহ মা গণ্ডারকে অত্যাধুনিক মরণাস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে। ঘটনাস্থলে এ কে ৪৭ বন্দুকের খালি কার্তুজ পাওয়া গেছে। একজনকেও গ্রেপ্তার করা যায় নি। এই তিনটি গণ্ডার হত্যার প্রতিবাদে রাজ্যে প্রতিবাদের ঢেও উঠেছে।
মুখ্যমন্ত্রী সৰ্বানন্দ সনােয়াল রাষ্ট্ৰীয় উদ্যান সংলগ্ন নগাওঁ, শোনিতপুর, গোলাঘাট প্রভৃতি পাঁচটি জেলাকে সতর্ক করে দিয়েছেন। চােরাশিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যৱস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার ডেপুটি কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমান কাজিরঙা রাষ্ট্ৰীয় উদ্যানের ৪৩০ বর্গ কিলোমিটার এবং ৬ টি অতিরিক্ত ষষ্ঠ এলাকাকে নিয়ে সর্বমোট ৮৫৮.৯৮বর্গকিলোমিটার এলাকায় নিরাপত্তা বিধানের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী নেই, গত বছর থেকে আকাশীযান ড্রোন চালু করা হয়েছে। এক বৃহৎ অংশ বেদখলকারীদের হাতে আছে। ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক কাজিরঙা রাষ্ট্ৰীয় উদ্যানের মাঝ দিয়ে গেছে। প্রতি বছর কয়েকশো বন্য প্রাণী গাড়ীর চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে মারা যায়। ব্ৰহ্মপুত্র নন্দ কাজিরঙাকে স্পর্শ করেছে।
প্রতিবছর বন্যায় শয়ে শয়ে বন্য প্রাণী জলে ডুবে মারা যায়। এই বছর ৩৫ টি গণ্ডার সহ প্রায় ৫০০ বন্য প্রাণী মারা গেছে। কাজিরঙার মধ্যে হাইল্যাণ্ড তৈরী করা হচ্ছে। বন্যার সময় বন্যাপীড়িত বন্য প্রাণীগুলি বাচার জন্য হাইল্যণ্ড গুলিতে আশ্রয় নিয়ে থাকে। হাইল্যণ্ড নির্মান নিয়েও ব্যাপক দুনীতির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল কংগ্রেস আমলে। বর্তমানে কাজিরঙাই ২৬২৪ টি গণ্ডার আছে। তাদের রক্ষা করতে না পারলে বিশ্বের পর্যটকদের চোখে অসমের গুরুত্ব বহুগুন কমে যাবে। অসমের গর্ব, অসমের স্বাভিমানও রক্ষা করা যাবে না।
0 comments: