দেবকিশোর চক্রবর্তী, কলকাতা :
কোথাও একটা সংশয় যে দানা বেঁধেছে সেটা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে কান পাতিলেই দিব্যি মালুম হচ্ছে। বুধবার সকালটা যাহােক তাহােক, প্রায় সারাটা দিনই তৃণমূল কংগ্রেসের সদর কাৰ্যালয় পূর্ব কলকাতার তপসিয়ার তৃণমূল ভবনের অন্দরে-বাইরে আলোচনার ভড়কেন্দ্রে ছিলেন দলের প্রাক্তন ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’ মুকুল রায়। এদিন রাজধানী কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলা জুড়ে ‘কালাদিবস’ কৰ্মসূচি পালন করে এ রাজ্যের শাসক দল। কেন্দ্ৰে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্ৰ মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখতে বুধবার দিনভর “নোটবন্দী’র বর্ষপূর্তি হিসেবে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আজ থেকে ঠিক এক বছর আগের এই দিনটিতেই, অর্থাৎ ৮ নভেম্বর দেশ থেকে পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। বিজেপি নেতৃত্বাধীন মোদি সরকার। বুধবার মূলতঃ সেই দিনটির কথা স্মরণ রেখেই দিনভর প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল। এদিন কার্যত মোদির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন রাজ্যের শাসকদলের নেতারা। তবে বক্তারা সদ্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায় প্রসঙ্গে ছিলেন মৌন। ৩০, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের নির্দেশেই এদিন দলের প্রায় সব নেতারাই ‘দলত্যাগী মুকুল” প্রসঙ্গে সামান্যতম শব্দটুকুও খরচ করেননি। সূত্রের খবর, নেত্রীর নির্দেশেই এহেন নীরবতা পালন করেছেন দলের বিভিন্ন সারির নেতারা। তবে এনিয়ে নিন্দুক সমালোচকদের একাংশের অভিমত, মুকুলে ত্ৰস্ত তৃণমূল। কারণ মুকুল রায়ের হাতে প্রচুর গোপন তথ্য আছে যা দলকে অস্বস্তিতে ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। এদিকে, সবে মাত্র সোমবারই দেশের রাজধানী দিল্লি থেকে বঙ্গের রাজধানী কলকাতায় ফিরেছেন মুকুলবাবু। আর তাঁর সে ফেরাও রীতিমতো নজরকাড়া। সংবাদ মাধ্যমের অগণিত ক্যামেরার উজ্জ্বল আলো গায়ে মেখে৷ যদিও অষ্টপ্রহর কাটতে না কাটতেই সেই আলোর তেজ অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে, রাজ্য বিজেপির প্রাচীন পন্থীদের একাংশের অনুমান।
তবে বাস্তব চিত্র বলছে, দল বদলে পেয়েছেন বীরের সম্মান। গত ৬ নভেম্বর, সোমবার কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্ৰ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পরই দলের নতুন সদস্য তৃণমূল ফেরৎ মুকুল রায়কে ফুলে মালায় উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে স্বাগত জানান বিজেপি’র রাজ্য নেতারা। তারপর বিমান বন্দর থেকে রাজ্য বিজেপি’র সদর দফতরে তাকে নিয়ে আসে একশো গাড়ির কনভয়৷ রাজ্য বিজেপির অন্দরে বইছে ফুরফুরে হাওয়া দলের নবীণদের মতে এটা অবশ্যই একটা বড়প্রাপ্তি, উনি অভিজ্ঞ নেতা। বাংলার মানুষের স্নায়ু চেনেন তিনি। অবশ্যই আমাদের বড় প্রাপ্তি মুকুলবাবু।” আর সে কথা মাথায় রেখেই বুধবার দিনভর মুকুলে ত্ৰস্তাতৃণমূল মোদির “নোটবন্দী’র সমালোচনা করেই বাড়তি অক্সিজেন দলের ফুসফুসে জোগান দিয়েছে।
0 comments: