তরুণ-রিপুণ-দেবব্রত-রকিবুল সহ শতাধিক কংগ্রেসি গ্রেপ্তার
গুয়াহাটি : আজ থেকে গুয়াহাটিতে জি এস টি কাউন্সিলের ২৩তম বৈঠক শুরু হলো। এই বৈঠকে আম জনতাকে স্বস্তি দিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সারা দেশের দৃষ্টি গুয়াহাটির দিকে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ রাতে গুয়াহাটি পৌছলেন। অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পণ্ডিচেরীর মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণ স্বামী, পঞ্জাবের মনগ্ৰীত সিং বাদলসহ দেশের প্রায় ২০ টি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে হাজির হয়েছেন গুয়াহাটিতে। হিমাচল প্রদেশ এবং গুজরাটের নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই দুই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী উপস্থিত হন নি। ত্রিপুরার অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা এবং পশ্চিম বঙ্গর অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র আগেই জানিয়ে দিয়েছেন তারা উপস্থিত থাকবেন না। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের সমস্ত পদস্থ অফিসার আজকের প্রাথমিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এই সব কিছুর তদারক এবং ব্যবস্থাপনায় আছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা। মালিগাঁও অঞ্চলের পঞ্চতারকা হােটেল রেডিশন ব্লতে এই বৈঠক চলছে।
আজকের বৈঠকের শুরুতে পুলিশের কোনও অনুমতি না নিয়েই কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, অসম কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরা, পরিষদীয় প্রধান দেবব্রত শইকীয়া, প্রাক্তন মন্ত্রী রকিবুল হুসেইন প্রমুখ শতাধিক কংগ্রেস নেতা-নেত্রীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বশিষ্ঠ থানায় নিয়ে যায়। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ রেখে পরে ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন— আমরা জি এস টি বৈঠকের বিরোধী নয়। আমরা বাইরের অতিথিদের স্বাগত জানাচ্ছি। তবে আমাদের জি এস টি জনবিরোধী, মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে পারছে না। বেশ কিছু সংশোধনের দাবীতে আমরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছি।
দলের সভাপতি রিপুণ বরা দাবী করেন, রাজ্যের নিজস্ব শিল্প কাঁসা, বাঁশ, মুগা, চাপাতি প্রভৃতির ক্ষেত্রেও ১২ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। জি এস টির উৰ্দ্ধসীমা ২৮ শতাংশ থেকে হ্রাস করার দাবী জানান।
পণ্ডিচেরির অর্থ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণ স্বামী সাংবাদিক সন্মেলন ডেকে অভিযোগ করেন, জি এস টি লাগু হওয়ার ফলে দেশের শিল্প উদ্যোগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। দেশের বস্ত্ৰ শিল্প ধ্বংসের মুখে। বেকার সমস্যা হাজার গুণ বেড়ে গেছে।
অসম তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাঁশ-বেতের ওপরও ১৮ শতাংশ জি এস টি লাগু হয়েছে। অসমে প্রায় ৬ লক্ষ ক্ষুদ্র শিল্প আছে। তার মধ্যে প্রায় তিন লক্ষ বিক্ৰী কর দেয়। এই বিক্ৰী কর দেওয়া ব্যবসায়ীরা জি এস টিতে নাম নথিভুক্ত করেছে।
সারা অসম ব্যবসায়ী সমিতির মুখ্য আহবায়ক প্রাণতোষ রায় আজ অভিযোগ করেন, সরকারের আনুগত্যে থাকা আমাদের প্রতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রতি জি এস টি কাউন্সিল চরম বৈষম্য করছে। জি এস টি নথিভুক্ত বা রেজিট্রেশনের ক্ষেত্রে সারা দেশে বাৎসরিক লেনে-দেনের সীমা ধার্যকরা হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। অথচ অসম তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দুই-তিনটি রাজ্যে এই সীমা ধার্যকরা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। আহ্বায়ক রায় এই কথা জানিয়ে বলেন, ছোট-খাট পান, বিড়ি, চায়ের দোকানেও বছরে ১০ লক্ষ টাকা লেন-দেন হয়। তাদেরকেও জি এস টি নথিভুক্ত করতে হবে। যা বড় অন্যায় ও চরম বৈষম্য। এছাড়াও দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী, যাদের বাৎসরিক লেন-দেন ১,২৫ লক্ষ টাকার ওপর। তাদেরকে ত্রৈমাসিক ১ শতাংশ কর দিতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যাদেব ৫০ লক্ষ টাকা লেন-দেন তাদেরকেও এক শতাংশ কর দিতে হবে। ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক জানান, তারা দাবী-দাওয়া জানিয়ে প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্ৰ মোদীর কাছে স্মারক পত্র পাঠিয়েছে। রাজ্যের অর্থ মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কাছেও স্মারক পত্র পাঠিয়েছে। আগামী কালের জি এস টি বৈঠকে তাদের দাবী-দাওয়াগুলি বিবেচনা করা হবে বলে তারা আশাবাদী।
0 comments: