রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করল বন বিভাগ
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি :
হাতি, গন্ডার, বাঘ প্রভৃতি বন্য জন্তুর জন্য বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে অসমের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যে ২৬,৮৩২ বৰ্গকিলোমিটারের বনাঞ্চলে সংরক্ষিত অঞ্চল ৬৬,৫৮ শতাংশ। কাগজে-কলমে ৩৪.২১ শতাংশ হলেও বাস্তবে বনাঞ্চল ক্রমশঃ সংকুচিত হয়ে আসছে, ২০ শতাংশের বেশি হবে না। বন কেটে বসতি স্থাপনের ধুম পড়ে গেছে। ব্যাপকহারে জঙ্গল কাটা হচ্ছে, যা প্রতিরোধ করতে পারছে না বন বিভাগ। ১৯১১ সালের গণনা অনুযায়ী রাজ্যে ৫,৬২০ টি হাতি আছে। হাতিদের যাতায়াতের করিডরগুলি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চলে রেল লাইন গেছে করিডর এলেকাগুলি দিয়ে। ব্যাপকহারে খাদ্য সংকটের ফলে বনের হাতিরা দলে দলে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। মানুষের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।
রবিবার গভীর রাতে শোণিতপুর জেলার তেজপুর-বালিপারায় রেল লাইন অতিক্রম করতে গিয়ে একটি গাভিনী হাতিসহ ৬টি হাতির করুণ মৃত্যু ঘটেছে। রাত ১ টা নাগাদ গুয়াহাটি-নাহারলাগুন এক্সপ্রেস দ্রুত গতিতে যাওয়ার সময় রেলগাড়ীর চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে করুণভাবে মৃত্যু ঘটে এই ছয়টি হাতির।
শুধু মাত্র আমাকে দোষারোপ করলে হবে না : বন মন্ত্রী প্রমীলা রাণী ব্ৰহ্ম
রাজ্যের বনমন্ত্রী প্রমীলা রাণী ব্ৰহ্ম এই প্রতিবেদককে বিস্তারিত জানিয়ে বলেন, ২ ঝাঁক হাতি রবিবার গভীর রাতে এক চা-বাগান অঞ্চলে প্রবেশ করতে গিয়ে বাধা পায়। রেলওয়ের গেটম্যানের ঘর ভেঙে দেয়। সেইসময় গেটম্যান যদি সবুজ সংকেত না দিয়ে সংশ্লিষ্ট ষ্টেশনকে হাতিদের অস্তিত্বর কথা জানাতো, তবে হয়তো হাতিগুলির মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটতো না। বনমন্ত্রী অভিযোগ করেন, প্রচন্ড গতিতে এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাচ্ছিল। চা-বাগানে বেড়া থাকার জন্য হাতিগুলি বাধা পেয়ে রেললাইনের দিকে ঘুরে যায়। তিনি বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বে-আইনীভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জায়গায় চা-বাগান গড়ে উঠেছে। তা উচ্ছেদ করা ছাড়া বনাঞ্চলকে রক্ষা করা যাবে না। এ্যালিফেন্ট প্রজেক্ট সম্পর্কে বনমন্ত্রী বলেন, এই ব্যাপারে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে না। জনগণের মধ্যে বন্য প্রাণী সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে না। উঠলে মানুষের সঙ্গে হাতির সংঘাত অব্যাহত থাকবে। শুধু মাত্র বন মন্ত্রীকে দোষারোপ করে লাভ নেই। সবাই আমার দিকেই আঙুল তুলছে।
রাজ্যের চীফ কনজারভেটার অফ ফরেষ্ট (বন্যপ্রাণী) এন কে বাসু বলেন, হাতিগুলি বালিপারা ষ্টেশনের কাছে যখন পৌছিয়ে যায়, তখন রেলওয়ে গেটম্যান গেট বন্ধ করে সবুজ সংকেত দেখানোর জন্য বাইরে বেড়িয়ে পড়েন। গেটম্যান যদি ষ্টেশন মাষ্টারকে হাতি আসা সম্পর্কে আগে জানাতো, তবে হয়তো এই মর্মান্তিক ঘটনা পরিহার করা যেতো। সি সি এফ বাসু বলেন, ফসলের মরশুমে হাতিদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পায়। ধান খেতে হানা দেয়। রাজ্যের বন বিভাগ হাতিদের প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এইবার হাতিদের দৌরাত্ম বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জঙ্গল ধ্বংসের ফলে হাতিদের খাবারে টান পড়ছে।
বন দপ্তরের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১২-১৬ সালের মধ্যে রাজ্যে ১৪০ টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে গহপুর, হােজাই, লামডিং, নুমুলিগড়, তিতাবর প্রভৃতি জায়গায় হাতিদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে। নুমুলিগড়ে হাতিদের হানায় এক ব্যক্তি মারাও গেছে। এদিকে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের সিনিয়র পাব্লিক রিলেশন অফিসার নৃপেন ভট্টাচার্য দাবী করেন, বালিপারা অঞ্চল, যেখানে হাতিরা হানা দেয়, অঞ্চলটি হাতিদের করিডর ছিল না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হাতিদের প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।
বন দপ্তরের উচ্চস্তরীয় এক সূত্র দাবী করেন বালিপারা-তেজপুর অঞ্চলের ৭০ শতাংশ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গেছে। অধিকাংশ অঞ্চলই হাতিদের যাতায়াতের প্রধান করিডর। শিবসাগরের প্রকৃতিপ্ৰেমী আমিনুদ্দিন আহমেদ হাতিদের ভয় দেখিয়ে রেললাইন অতিক্রমে বাধা দেওয়ার জন্য এক প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন। মৌ-মাছির গুণগুণ শব্দ লাউড স্পীকারে শুনিয়ে এবং লেজার রশ্মির মাধ্যমে হাতিদের ভয় দেখানোর এক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কথা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। রঙিয়া রেলওয়ে ডিভিশন মৌ-মাছির গুণগুণ শব্দ লাউড স্পীকারের মাধ্যমে হাতিদের শুনিয়ে ভয় দেখাবার এক প্রয়াস গ্রহণ করেছে। গুয়াহাটি মহানগরের উপকণ্ঠে হাতিদের করিডর দীপার বিলে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে। রাজ্যের বিশিষ্ট প্রকৃতি প্ৰেমী ডঃ আনােয়ার উদ্দিন চৌধুরী কিন্তু বলেছেন, হাতিদের করিডরের ওপর দিয়ে অধিকাংশ রেললাইন গেছে। করিডরগুলির অধিকাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। মৌ-মাছির হাজার গুণগুণ শব্দ শুনালেও হাতিরা তা শুনবে না৷
0 comments: