এন আর সি নিয়ে শুরু হয়েছে কাউন্ট-ডাউন : সংশোধনের বদ্ধিত সময়ের দাবি জমিয়তের

বরাক উপত্যকার তিনটি জেলাতেই ৩০-৩৫ শতাংশর বেশি মানুষের নাম প্রথম তালিকায় প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই : হাফিজ রশিদ চৌধুরী 

গুয়াহাটি : রাজনীতির বৃত্তে ঘূৰপাক খাচ্ছে একটাই শব্দ এন আর সি। এন আর সি নবায়নকে কেন্দ্র করে শদিয়া থেকে ধুবড়ি রাজ্যের ৩৩ টি জেলার মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন তাদের একটিই প্রশ্ন এন আর সির খসড়া তালিকায় তাদের নাম থাকবে তো ? এই প্রশ্নকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিও ক্রমশঃ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এন আর সি কর্তৃপক্ষ বার বার আশ্বস্ত করে বলছেন, যাদের নাম এন আর সি তালিকায় উঠবে না, তাদের আতঙ্কগ্ৰস্ত হওয়ার কোনও কারণ নেই। নাম অন্তর্ভুক্তের যথেষ্ট সময় দেওয়া হবে। দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশের পরও সুযোগ দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকার আশংকা প্রকাশ করেছে। কোনও মৌলবাদী শক্তি এন আর সির তালিকাকে ঘিরে তাণ্ডব চালাতে পারে। রােজ্যর আইন শৃংখলার পরিস্থিতি অবনতি ঘটার সম্ভাবনা আছে। তার জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যৱস্থা করা হয়েছে। বরাকসহ রাজ্যের সংখ্যালঘু আধুষিত ১৩টি স্পর্শকাতর জেলাকে চিহ্নিত করে এই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। 
এদিকে মঙ্গলবার অসম রাজ্যিক জমিয়ত উলেমা রাজ্যের শান্তি শৃংখলা অক্ষুন্ন রাখার ওপর জোর দিয়ে রাজ্যবাসীকে শান্তি-সম্প্রীতি রক্ষাৰ আহবান জানিয়েছেন। অসম রাজ্যিক জমিয়ত উলেমার সাধারণ সম্পাদক বসির আহমেদ কাসিমী গুয়াহাটির এআইইউডিএফের মুখ্য কাৰ্য্যালয়ে এক সাংবাদিক সন্মেলন ডেকে এই আহবান জানিয়ে বলেন, এন আর সিতে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে না, তাদেরকে এন আর সি কর্তৃপক্ষ ৬০ দিন সময় দিয়েছে। কিন্তু জমিয়ত উলেমা ৯০ দিনের সময় দাবী করেছে। এন আর সি প্রস্তুতের সময় অনেকের নাম, বয়স প্রভৃতির ক্ষেত্রে যে সব ভুল-ভ্ৰান্তির সম্ভাবনা আছে, সেই ক্ষেত্রে সংশোধনের সময় বাড়ানোর দাবি করেছে জমিয়ত উলেমা। এন আর সি নিয়ে রাজ্যজুড়ে সজাগতা সভা ব্যবস্থা করার জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কাসিমী। 
বরাক উপত্যকা থেকে নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির উপদেষ্ট তথা গুয়াহাটি হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী টেলিফোনে ‘সংবাদ প্ৰহরী’কে জানান, বরাক উপত্যকার তিনটি জেলাতেই ৩০-৩৫ শতাংশর বেশি মানুষের নাম প্রথম তালিকায় প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এন আর সি কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সময় দিচ্ছে নাম অন্তৰ্ভুক্তির জন্য। তাই কোনও কারণে আতংকগ্ৰস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। বিশিষ্ট আইনজ্ঞ বলেন, যাদের নাম দ্বিতীয় তালিকাতেও উঠবে না, তাদের ক্ষেত্রেও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করার ব্যৱস্থাও রাখা হয়েছে। 
এই বরাক উপত্যকারই সংখ্যালঘু নেতা তথা নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক প্রধান সাধন পুরকায়স্থ কয়েকদিন আগেই আশংকা প্রকাশ করেছেন, বরাক-ব্ৰহ্মপুত্র উপত্যকার প্রায় ৫০ লক্ষ হিন্দু-মুসলিম মানুষের নাম এন আর সি তালিকা খেকে বাদ পড়বে। এন আর সির চূড়ান্ত খসড়ার প্রথম তালিকা প্রকাশের আর এক সপ্তাহও নেই। 
৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার মধ্যে অনলাইনে প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। সকাল ৮ থেকে প্রতিটি এন আর সি সেবা কেন্দ্ৰে ছাপা তালিকা পাওয়া যাবে। এস এম এস-এর মাধ্যমেও নাম প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এন আর সি কর্তৃপক্ষ প্রতিটি গ্রামে তালিকা নিয়ে গ্রামবাসীদের কাছে গিয়ে পৌঁছবে। এন আর সির নােডেল অফিসার প্রতীক হাজেলা ভিডিও কনফারেন্স-এর মাধ্যমে প্ৰতিজন ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপারদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সম্পর্ক রেখে এন আর সি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে চলেছেন। তার পাশাপাশি রাজ্যে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়েও ঘন ঘন বৈঠক হচ্ছে। রাজ্যের পুলিশ প্রধান মুকেশ সহায়, এডিজিপি পল্লব ভট্টাচার্য, মুখ্য সচিব বিনােদ পিপারসেনিয়া প্রমূখদের মধ্যে বৈঠক হচ্ছে। এমনকি সেনা-বাহিনীকেও সজাগ করে রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর শপতগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য আহমেদাবাদ গিয়েছেন। সেখান থেকেও তিনি রাজ্যের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখছেন বলে সচিবালয় সূত্রে জানা গেল।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: