নমামি উৎসবের নামে কোটি কোটি টাকা সরকারী টাকার অপচয় : বেড়েই চলেছে দূষণমাত্রা, পবিত্ৰ নদী আজ অপবিত্র

চিরাং থেকে  ছবি পাঠিয়েছেন আব্দুল মালেক আহমেদ৷

অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : 
বিজেপি শাসন কালে দেশজুড়ে নদী উৎসবের ঢেউ উঠেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে জানা গেছে, দেশের প্রায় ৩০২টি নদী দূষিত হয়ে পরেছে। দেশের প্রধান নদী গঙ্গা, প্রধান নদ ব্ৰহ্মপুত্র, অসমের অন্যতম বরাক নদী আজ দূষণের কবলে। অসমের ২৮ টি নদী দূষিত। নমামি গঙ্গের পর অসমে নমামি ব্ৰহ্মপুত্ৰ, নমামি বরাক উৎসবের পর বিটিএডির নমামি আই (দৈজিং) উৎসবের তোরজোর চলছে। এইসব উৎসব উদযাপন করতে দিয়ে কোটি কোটি সরকারী টাকা ব্যয় হয়েছে। 
কিন্তু নদীগুলির দূষণ মাত্রা একবিন্দুও কমেনি। অসমের মহাবাহু ব্ৰহ্মপুত্র ক্রমশঃ কৰ্দমাক্ত ও দূষিত হয়েই উঠছে। চীনে ব্ৰহ্মপুত্রের উৎস নদী সাংপোতে ভয়ানক ভূমিকম্পর ফলে এক বিশাল জলাধারের সৃষ্টি হয়েছে। ব্ৰহ্মপুত্র নদে যেকোনও সময় অকাল প্লাবনের সম্ভাবনা আছে বলে সরকারী সূত্রে জানা গেছে। অরুণাচলের সিয়াং নদীর জলের নমুনা অসম সরকার সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পাঠিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে প্রমাণ হয়ে গেছে ব্ৰহ্মপুত্র-বরাকসহ রাজ্যের ২৮ টি নদীতে সর্বত্র ক্যালিফর্মের মাত্রা বহুগণে বেড়ে গেছে। জলের বিভিন্ন রোগের জীবাণুর উপস্থিতি ক্ৰমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসমের একমাত্র পক্ষী অভয়ারণ্য গুয়াহাটি মহানগরের উপকণ্ঠে দীপারবিলের জলও দূষিত হয়ে গেছে। 
লোকসভায় বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী মহেশ শৰ্মা পুনরায় জানিয়েছেন, দেশে ৩০২ টি দূষিত। অসমের মরা ভরালি, বরাক, বেঁকী, ভরলু, ভোগদৈ, বগীনদী, বুড়িদিহীং, ধনশিরি, ডিগবৈ, দিসাং, জিয়া-ভরালি, জাঁজী, কলং, কপিলী, কুশিয়ারা, মানস, পাগলাদিয়া, পঞ্চনৈ, রঙানদী, সংকোশ, সোনাই, সুবনশিরি এবং কথাকল নদীসহ মোট ২৮ টি নদী দূষিত। দেশের ১২৭৫ টি স্থানে দূষণ পর্যবেক্ষন করেছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক। তিনি জানান, মূলতঃ পৌরসভা এলেকাগুলির বর্জ্য ও শিল্পাঞ্চলের নিষ্কাষিত বর্জ্য পদার্থের জন্য নদীগুলি দূষিত হয়েছে। মেঘালয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি ঝর্নার জল কোনও দূষণ হয়নি, পবিত্ৰ শুদ্ধ। 
দেশের গঙ্গা নদী পবিত্ৰ শুদ্ধ বলে লোকসমাজ বিশ্বাস, কিন্তু গঙ্গার দূষণ প্রক্রিয়া বহুগুণ বেড়ে গেছে। কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই গঙ্গা পুনরুজ্জীবন ও পরিশুদ্ধ করার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করেছিল। কিন্তু কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেলের প্রতিবেদনে উদ্বেগজন ছবি ধরা পড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গঙ্গা মাত্ৰাধিক দূষণের কবলে পড়েছে। বরাদ্দকৃত পুরো টাকা আজ পর্যন্ত সদ্ব্যবহারও করা যায়নি। গঙ্গার নদী সংলগ্ন শহরগুলির আশ-পাশে শ্মশানের চিতাভষ্ম নদীতে বিসর্জন দেওয়ার ধর্মীয় রীতির ফলে দূষণ বেড়ে গেছে। গঙ্গা তীরবর্তী কল-কারখানা থেকে তরল বর্জ্য, তেল জলে ফেলা হচ্ছে। জল পরিশোধনের জন্য ট্ৰিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হচ্ছে না৷ এইসব বিভিন্ন কারণে দেশের পবিত্ৰ নদী অপবিত্র হয়ে যাচ্ছে। তাই নদী উৎসবের নামে ঢাক-ঢোল না বাজিয়ে প্রকৃতার্থে নদীগুলিকে দূষণ মুক্ত করে মানুষের ব্যবহারযোগ্য করার ওপর জোর দেওয়া উচিত।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: