অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি :
অসমের শদিয়া থেকে ধুবড়ি পর্যন্ত ৮৯১ কিলোমিটার জুড়ে ব্ৰহ্মপুত্র নদ প্রবাহিত। ব্ৰহ্মার পুত্ৰ ব্ৰহ্মপুত্ৰ নদ। দেশের মধ্যে অন্যতম দীর্ঘ নদ, সেই সঙ্গে দূষিতও। ২,৯০০ কিলোমিটার ব্ৰহ্মপুত্র নন্দ চীন-তিব্বতের সাংপো পার্বত্য নদী হয়ে অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং নদীতে গিয়ে মিশেছে। অরুণাচল প্রদেশে সিয়াং, দিবাং এবং লোহিতের সঙ্গে মিশে তিন ধারা একত্রিত হয়ে অসমে ব্ৰহ্মপুত্র নাম নিয়েছে। রাজ্যের ২১ টি জেলাকে স্পর্শ করেছে ব্ৰহ্মপুত্র। অভিযোগ উঠেছে, চীন তিব্বতের সাংপো নদীতে কোনও ধরণের বােরিংএর কাজ করছে এবং প্রচুর পরিমানে সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। তার ফলে গত দুমাস থেকে সিয়াং নদী ক্রমশ কাদা মাটি এবং ঘোলা জলে ভরে যাচ্ছে। দ্রুত গতিতে সিয়াং দূষিত হয়ে পড়ছে। গত দুমাসে কয়েকশো গবাদি পশু সিয়াং-এর দুৰ্গন্ধ জল পান করে মারা গেছে। অসমের বগীবিল অঞ্চলেও ব্ৰহ্মপুত্রের জলে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী কেশব মহন্ত আজ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, সিয়াং নদীর জল যে দূষিত হচ্ছে, সে খবর তারা পেয়েছে। গুয়াহাটিতে ব্ৰহ্মপুত্রর জল সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে এক চিঠি দিয়ে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্ৰদ্যুৎ বরদলৈ ব্ৰহ্মপুত্রর জল দূষণের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে কার্যত চীনকেই দায়ী করেছেন। অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ এব্যাপারে প্রতিবাদ সাব্যস্ত করে সরকারকে চীনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছে।
শুধু শুধু চীনকে দোষারোপ করে লাভ নেই। রাজ্যের পলিউশন কন্ট্রোল বাের্ড যে চিত্র তুলে ধরেছে, তা ভয়াবহ। হচ্ছে। শুধু ডিব্ৰুগড় শহরে প্রতিদিন ৭৫-৮০ মেট্রিক টন আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। একইভাবে গুয়াহাটি মহানগরে ডিব্ৰুগড় থেকে ৩-৪ গুণ বেশি আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। গুয়াহাটি মহানগরের প্রায় ৮০০ নর্দমা সরাসরি ব্ৰহ্মপুত্ৰ নদের সঙ্গে মিশেছে। সারা দেশের মধ্যে গুয়াহাটি মহানগর “ফাষ্ট গ্রোয়িং সিটি অফ ইন্ডিয়া”। এবং অন্য এক তথ্য বলছে সারা দেশের মধ্যে কনষ্ট্রাকশনের মধ্যেও ১৫ তম স্থান হচ্ছে গুয়াহাটির। তাই স্বাভাবিক ভাবেই গুয়াহাটি মহানগরের নদ ব্ৰহ্মপুত্র, ভরলু এবং অন্যান্য শাখা নদীগুলোতে সিমেন্টসহ অন্যান্য আবর্জনা ব্ৰহ্মপুত্র নদে মিশছে। এই তিন শহরের জনসংখ্যা গত দশ বছরে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যের ১০০ টি তেল কুপ থেকে কমপক্ষে ৪,৫০০ লিটার তেল নিৰ্গত হচ্ছে। সেই তেলের একাংশ ব্ৰহ্মপুত্র এবং উপনদী গুলিতে মিশেছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে এবং তেল কর্তৃপক্ষ কয়েকটি জায়গায় জল পরিশোধন প্রকল্প (সিওয়েজ ট্রটমেন্ট প্ল্যান্ট) স্থাপন করেছে। কিন্তু সরকারীভাবে কোনও প্রকল্প না থাকায় ব্ৰহ্মপুত্র জলের দূষণ প্রক্রিয়া দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে।
একইভাবে বেড়ে চলেছে কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়াও । যা বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করছে। সিয়াং নদীর জল ক্রমশঃ ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। সেই সিয়াং নদীর দূষণ প্রক্রিয়া ব্ৰহ্মপুত্রকেও গ্রাস করতে চলেছে। অবিলম্বে যদি উপযুক্ত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তবে অসমের জীবন রেখা স্বরূপ ব্ৰহ্মপুত্র আমাদের কাছে অভিশাপ হয়ে দেখা দেবে।
0 comments: