ইন্ডিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজি, হায়দরাবাদে পাঠানো হলো জলের নমুনা
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি :
জলের শুদ্ধতা, জল কাদার পরিমাণ এবং ব্যবহার যোগ্য কি না, তা পরিমাপ করার জন্য নেফেলোমেট্রিক ট্যারবিডিটি ইউনিট (এন টি ইউ)কে সূচক হিসাবে গণ্য করা হয়। স্বাভাবিক ব্যবহার যোগ্য জলের এন টি ইউ হচ্ছে ০-১০। যোরহাট কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ তেজপুরের ব্ৰহ্মপুত্র ঘাট বগীবিল এবং মাইজাং ঘাটের জল পরীক্ষা করে দেখেছে, তেজপুর ব্ৰহ্মপুত্রের জলে ৪০৪, বগীবিল ঘাটে ১৬২ এবং মাইজাং ঘাটে ২.৯৫ এন টি ইউ। এছাড়াও ধুবড়ি, ডিব্ৰুগড় এবং গুয়াহাটির ব্ৰহ্মপুত্রর জলেও লোহা-কার্বনের মতো পদার্থ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ অঞ্চলে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনােয়াল সিয়াং-এর জল দূষিত হওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্ৰহ্মপুত্রের জলেও লোহা-কার্বনজাতীয় পদার্থ আছে বলে স্বীকার করে নিয়ে রাজ্যের ভিন্ন প্রান্তের ১৫ টি জায়গা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে ইন্ডিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনােলজি, হায়দরাবাদ এবং গুয়াহাটি আই আই টিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
অসমের সঙ্গে সংযোগকারী অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং নদী দুষিত হয়েছে। তা আজ স্বীকার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংও। তিনি নাগালেন্ড সফরের সময় সিয়াং নদীর বিস্তৃত তথ্য জেনে বিষয়টি চীনকে অবগত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু প্রথমে চীন-তিব্বতের সাংপো নদী অঞ্চলে ভূমিকম্পের জন্য ব্ৰহ্মপুত্রর জল কাদায় ঘোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন। এখন তিনি সুর পাল্টিয়ে স্বীকার করে নিয়েছেন প্রকৃতার্থে ব্ৰহ্মপুত্রের জলে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অৰ্জ্জুন রাম মেঘওয়ালও দাবী করেছিলেন, ভূমিকম্পের জন্যেই ব্ৰহ্মপুত্রের জল ঘোলাটে হচ্ছে দূষণ নয়। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী কেশব মহন্ত ব্ৰহ্মপুত্রের জল দূষণের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন, সেক্ষেত্রে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিকরী মন্ত্রী রিহণ দৈমারী বলছেন, উদ্বেগের কিছু নেই। সব ঠিক আছে।
কামরূপ মেট্রোর ডেপুটি কমিশনার এম, অংগমুথু ব্ৰহ্মপুত্রের জল সরবরাহকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পরিশোধন ছাড়া কোনও জল যাতে ব্যবহার করা না হয়। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ দিল্লীতে ব্ৰহ্মপুত্রের জল দূষণ নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে দায়ী করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কেন এখনো চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, গঙ্গা নদী নিয়ে কেন্দ্র এত কিছু চিন্তা ভাবনা করছে, সেক্ষেত্রে অসমের জীবনরেখা ব্ৰহ্মপুত্র নিয়ে কেনচুপ করে আছেন।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে এবং তেল কর্তৃপক্ষ কয়েকটি জায়গায় জল পরিশোধন প্রকল্প (সিওয়েজ ট্রটমেন্ট প্ল্যান্ট) স্থাপন করেছে। কিন্তু সরকারীভাবে কোনও প্রকল্প না থাকায় ব্ৰহ্মপুত্র জলের দূষণ প্রক্রিয়া দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। ৮৯১ কিলোমিটার ব্ৰহ্মপুত্র নদ রাজ্যের ২১ টি জেলাকে স্পর্শ করেছে। লোকসভায় জানানো হয়েছিল, রাজ্যের ২৮ টি নদী দূষণের স্বীকার হয়েছে। যা ব্যবহারের অযোগ্য। এর মধ্যে বরাকের ১২১ কিলোমিটার নদীও আছে। লক্ষীপুর থেকে ভাঙ্গা পৰ্য্যন্ত অনেক জায়গায় এন টি ইউর পরিমান ১০ থেকে বহু বেশি।
0 comments: