বরাক উপত্যকা অসম থেকে সরে গেলে অসমের মঙ্গল হবে : হােমেন বরগোহাঞি

# বাংলাদেশ সরকার ভারতের কোনও আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না : কাজী মুস্তাসির মুর্শেদ 
# পরবর্তী তালিকা কবে প্রকাশ পাবে তা প্রায় অনিশ্চিত 
# এন, আর, সির প্ৰথম খসড়া তালিকয়া নাম নেই হেভিওয়েট রাজনীতিবিদদের 
  • অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি 

রাজ্যের একাংশ বুদ্ধিজীবী বরাক উপত্যকা সম্পর্কে বরাবরই তাচ্ছিল্যজনক মন্তব্য করে থাকেন। বরাক উপত্যকার একশো শতাংশ হিন্দু-মুসলিম বাংলাভাষায় কথা বলেন। সেইদিকে দৃষ্টিপাত করে অসমের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হােমেন বরগোহাঞি, তারই মুখ্য সম্পাদনায় প্রকাশিত এক অসমীয়া দৈনিক পত্রিকার ‘প্রথম কলম”-এ মঙ্গলবার লিখেছেন— উত্তর পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি রাজ্য এবং বাংলাভাষী বরাক উপত্যক কোনও দিনই অসমের সঙ্গে ছিলনা। যদিও আছে থাকা বা নাথাকার সমান। প্রকৃতার্থে কোনও দিনই অসমের আত্মার সঙ্গে তাদের কোন সংযোগ ছিলনা। ঐসব অঞ্চল অসমের ভৌগলিক অঞ্চল হতে পারে, কিন্তু ইতিহাসগত সম্পর্ক নেই। বাংলাভাষী বরাক উপত্যকা অসম থেকে সরে গেলেই অসমের মঙ্গল হবে। এই বাংলা ভাষার জন্য অসমীয়ারা লজ্জাজনকভাবে সংখ্যালঘুতে পরিণত হতে চলেছে।” 
উল্লেখ্য অসমে ৩ কোটি ২৯ লক্ষ আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ১কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের নাম জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এন আর সি)র প্রথম খসড়া তালিকায় অন্তৰ্ভুক্ত হয়েছে। যা প্রায় ৫৭.৪.১ শতাংশ। ১ কোটি ৩৯ লক্ষ মানুষের নাম অন্তৰ্ভুক্ত হয়নি। যা প্রায় ৪২.৫৯ শতাংশ। রাজ্যের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলিতে বেশি সংখ্যক নাম বাদ পড়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন মন্ত্রী উবাইদুল কাদের ঢাকায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, অসমের এন আর সি চূড়ান্ত তালিকায় প্রায় ৩০ লক্ষ বাংলাদেশীর নাম বাদ পড়বে। বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বেগের মধ্যে আছে। এই সম্পর্কে গুয়াহাটিস্থিত বাংলাদেশের সহকারি হাই কমিশনার কাজী মুস্তাসির মুর্শেদ মঙ্গলবার ‘সংবাদ প্ৰহরী’র কাছে বাংলাদেশের মন্ত্রীর মন্তব্য সম্পর্কে বলেন— “বাংলাদেশের পরিবহন মন্ত্রী অসম সম্পর্কে কোনও রাজনৈতিক মন্তব্য করেন নি। বাংলাদেশ সরকার ভারতের কোনও আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। শুধু তারা এন আর সি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছেন। তার বেশি কিছু নয়।” 
আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সুগ্ৰীম কোর্টে এন আর সি সম্পর্কে শুনানি শুরু হবে। সুপ্ৰীম কোর্টের পাঁচ সদস্যের কনষ্টিটিউশনাল বেঞ্চও বসবে তার পরই। সেখানে এন আর সির। পরবর্তী তালিকা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হবে বলে এন আর সি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কারণ, সুপ্ৰীম কোর্টের তত্বাবধানে এবং রেজিষ্টার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার পথ নির্দেশ মেনে এন আর সির কাজ চলছে। তাই সুপ্ৰীম কোৰ্টই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করতে পারে। রাজ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়া সম্পর্কে এন আর সি-র নোডাল অফিসার প্রতীক হাজেলা আজও রাজ্যবাসীকে আস্বস্ত করে বলেন, নাম বাদ পড়লেও ভয়ের কোনও কারণ নেই। পরবর্তী তালিকায় তা সংশোধন করা হবে। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এন আর সি সেবা কেন্দ্রের অফিসাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভুল-ভ্রান্তি সংশোধনের সাহায্য করবেন। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল এন আর সি কর্তৃপক্ষকে এবং কর্মচারিদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে বলেছেন, তারা ভালভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে তালিকায় এত ভুল-ভ্রান্তির পরও রাজ্যের জল সম্পদ মন্ত্রী কেশব মহন্ত বলেন, তালিকা নিখুঁত হয়েছে। অপরদিকে বিজেপির বিধায়ক শিলাদিত্য দেব, যার নাম তালিকা অন্তর্ভুক্ত হয়নি, তিনি আজ মারাত্মক অভিযোগ করে বলেন, নেহরু-লিয়াকত সমঝোতা চুক্তি মেনে রাজ্যের মুসলিমরা বাংলাদেশে, এবং বাংলাদেশের হিন্দুরা অসমে এসেছিলেন। এক বৃহৎ সংখ্যক বাঙালি মুসলিম বাংলাদেশে গিয়েও পুনরায় অসমে ফিরে আসেন। হিন্দুরা না পারলেও বাঙালি মুসলিমদের বৃহৎ সংখ্যক এন আর সিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন— আপনারা ভারতীয় নাগরিক হলেন, ভারতের সমৃদ্ধিতে আত্ম নিয়ােগ করুণ”। অপরদিকে এপিডব্লিউ প্রধান অভিজিৎ শৰ্মা, যিনি ২০০৬ সালে সুগ্ৰীম কোর্টে নাগরিকত্ব সম্পর্কে হলফনামা দাখিল করে অভিযোগ করেছিলেন, অসমে প্রায় ৪১ লাখ বাংলাদেশী আছে, তাদেরকে বিতাড়ণের দাবী জানিয়েছিলেন। সেই অভিজিৎ ভট্টাচাৰ্য আজও দাবী করেন, এন আর সি তালিকায় লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশীর নাম অন্তৰ্ভুক্ত হয়েছে। 
এদিকে বহু প্রতিক্ষিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর (এন, আর, সি) প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশ পেল। লিঙ্কেজ না থাকায়, বা ১৪টি নথি-পত্রের ত্রুটির জন্য বহু বৈধ নাগরিকের নাম বাদ পড়েছে। এমনকি সাংসদ বিধায়ক দেরও নাম বাদ পড়েছে। একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও কয়েকজনের নাম বাদ গেছে। এক কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের নাম বৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে। এক কোটি ৩৯ লক্ষ মানুষের নথি-পত্রের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। পরবর্তী তালিকা কবে প্রকাশ পাবে তা প্রায় অনিশ্চিত। রেজিষ্টার জেনারেল অফ ইণ্ডিয়ার প্রধান শৈলেশ গুয়াহাটীতে জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের মধ্যে এন, আর, সি, র চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ পাবে। আগামি ২০ ফেব্রুয়ারী সুপ্রিম কোর্ট শুনানির দিন ধাৰ্য্য করা হয়েছে। পরবর্তী তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেবে সুপ্রিম কোর্ট, কারণ সুপ্রিম কোর্টের তত্বাবধানে এন, আর, সি নবায়নের কাজ চলছে। প্রকাশিত তালিকায় সাংসদ বদৰুদ্দিন আজমল, সাংসদ সিরাজুদ্দিন আজমল, বিধায়ক নুরুল হুদা, বিধায়ক নিজানুর রহমান, বিধায়ক শিলাদিত্য দেব, বিধায়ক শুকুর আলী, বিধায়াক সেরমান আলী, বিধায়ক অশ্বিনী রায়, বিধায়িক আঙুরলতা ডেকার নাম নেই, সাংবাদিক সুলতান হুসেন মির্ধাৰ নামও বাদ পড়েছে। কিন্তু বেআইনি জঙ্গি সংগঠন আলফার স্বঘোষিত কমাণ্ডার ইন চিফ পরেশ বরুয়া, মা মিলিকি বরুয়া, এন ডি এফ বির (সং) গোষ্ঠীর অন্যতম কেডার বি, বিদাইর নামও আছে। 
এ সম্পর্কে হােজাইয়ের প্রাক্তন মন্ত্রী ডাঃ অৰ্দ্ধেন্দু কুমার দে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অভিযোগ করেন, এন, আর, সি কৰ্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। আমার পত্নীর নাম আছে আমার নেই৷ তিনি এন, আর, সি কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, রাজ্যজুড়ে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে। আলফার কমাণ্ডার ইন চিফ পরেশ বরুৱা স্থানীয় এক চ্যানেলকে বলেছেন, “তিনি অসমীয়া, অসম কে ভালোবাসেন বলেই তার নাম এন, আর, সিতে এসেছে।” এন, আর, সি, র বিরুদ্ধে বলেন, “আজ পর্যন্ত আসাম চুক্তি বাস্তবায়িত হলো না। তাই এন, আর, সি, র ফলে রাজ্যের মানুষ উপকৃত হবেনা। তিনি প্রশ্ন তোলেন মৰাণ, মটক,আহােম প্রভৃতি খিলঞ্জীয়া মানুষের নাম তালিকায় কেন থাকবে ?” রাজ্যের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলিতে কম সংখ্যক নাম প্রকাশ পেয়েছে। রাজ্যের বৃহত্তম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা নগাঁওের জনসংখ্যা ২৮ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে, ধুবরীর জনসংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষ, কাছাড় জেলার জনসংখ্যা প্রায় ১৮ লক্ষ, বরপেটার প্রায় ১৭ লক্ষ এবং শোণিতপুর জেলার ১৯ লক্ষ এই সংখ্যালঘু অধূষিত জেলাগুলিকে স্পর্শকাতর জেলা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই জেলাগুলিতে বৈধ তালিকা সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম বলে অভিযোগ এসেছে, জেলাগুলির আইন শৃংখলার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেনি, অপ্ৰীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু সংখ্যালঘু মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে দ্বিতীয়, তৃতীয় তালিকায় তাদের নাম অন্তৰ্ভুক্ত হবে তো। ভারতীয় সংবিধানের ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬ (এ) ধারা মেনে ২০০৩ সালের সিটিজেনসিপ (রেজিষ্ট্রেশন অফ সিটিজেনস এণ্ড ইসু' অফ আইডেন্টিটি কার্ড) আইন সংশোধন করে ১৯৮৫ সালের অসম চুক্তির আধারে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে ভিত্তি বছর হিসাবে গণ্য করে ১৯১৫ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী রূপায়নের কাজ শুরু হয়েছে। নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক প্রধান সাধন পুরকায়স্থ প্রশ্ন তুলে বলেছেন সংবিধানের ৬ (এ) ধারা যুক্ত হওয়ায় ২০১৫ সালে জারি করা কেন্দ্রীয় সরকারের জোড়া নোটিফিকেশনের কোন কাজ থাকল না। এই নোটিফিকেশন কার্যকরী হলে ১৯৭১ সালের পরেও অস্থায়ী ভিসা ও অন্যান্য সুবিধা মাধ্যমে বাঙালী হিন্দুদের এই রাজ্যে স্থায়ী পুণরার্বাসনের ব্যৱস্থা করে দেওয়া যেতে পারত।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

4 comments:

  1. বরাকের বি জে পি নেতাদের বক্তব্য জানতে আগ্রহী

    ReplyDelete
  2. Bura oia kota kowa janona barak jdi sorijai Assam value tkboni r plzz bura oia cominual controversy Kio krisa u should take a break

    ReplyDelete
  3. Maap chaw amrar barak manuser kase

    ReplyDelete