গুয়াহাটি : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্ৰ মোদী অসমে নির্বাচনী প্রচার অভিযানে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এসেই রাজ্যের ডিটেশন ক্যাম্পগুলি গুড়িয়ে দেবেন এবং ডি ভোটার বলে কিছু থাকবে না। সেই প্রতিশ্রুতি কবেই ব্ৰহ্মপুত্রর জলে ভেসে গেছে। ডিটেনশন ক্যাম্পের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে রাজ্যে ছয়টি ডিটেনশন ক্যাম্প আছে। প্রায় ৯ শো বন্দী। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষরা ডিটেনশন ক্যাম্পে বিনা অপরাধে জেল খাটছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের কোনও প্রত্যার্পণ চুক্তি নেই। বছরের পর বছর ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন হতভাগ্য সংখ্যালঘু মানুষগুলো। বাংলাদেশ সরকার অসমের বিভিন্ন জেলে বন্দী সংখ্যালঘু মানুষগুলি খোঁজ খবর শুরু করেছে।
অসমের গুয়াহাটিস্থিত বাংলাদেশের সহকারি হাই কমিশনার কাজী মুস্তাসির মুর্শেদ ইতিমধ্যে তেজপুর জেল ঘুরে এসেছেন। গত ৪ জানুয়ারি গোয়ালপারা এবং ৯ জানুয়ারি কোকরাঝার জেল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে এসে এই প্রতিবেদককে জানান, গোয়ালপারা জেলে ৫২ জন সংখ্যালঘু মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে। গোয়ালপারা জেলে বন্দী ৪০ জনই বাংলাদেশের আদি বাসিন্দা। তারা বাংলাদেশের নির্দিষ্ট ঠিকানার কথা জানিয়েছে। সঙ্গে নথিপত্র না থাকায় তাদেরকে অসমের সীমান্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু তাদের শাস্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর করে নথি-পত্রগুলি বাংলাদেশের গৃহ মন্ত্রনালয়ের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেলে এই মানুষগুলিকে বাংলাদেশে পাঠানাের ব্যবস্থা হবে।
সহকারী হাই কমিশনার মুর্শেদ বলেন— ভারত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যার্পণ চুক্তি সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই। তবে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশী মানুষগুলিকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। এর সঙ্গে অসমের জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর কোনও সম্পর্ক নেই। সহকারী হাই কমিশনার বলেন— গুয়াহাটিতে প্রথম তাদের সহকারী হাই কমিশনার অফিস স্থাপন করার সময় আমরা বুঝতেই পারেনি, অসমের মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে এতটাই আগ্রহী৷ প্রতিদিন শাখানি মানুষ তাদের কার্যালয় এসে বাংলাদেশ সম্পর্কে খোঁজ খবর করছে। গত ৯ মাসে ১০ হাজার মানুষকে ভিসা প্রদান করা হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছে। তাদের কার্যালয় গুয়াহাটিতে স্থাপন করার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে অসমের সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়েছে।
ইতিমধ্যে গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল এসেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের পূর্তি উপলক্ষ্যে গুয়াহাটিতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। অসমের বর্তমান এন আর সি উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে সহকারী হাইকমিশনার বলেন, ভারতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার কোনওভাবেই নাক গলাবে না বা হস্তক্ষেপ করবে না। তারা শুধু পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে।
0 comments: