ভোটাধিকার নয়, ওয়ার্ক পামিট : বাজপেয়ীর পথকেই অনুসরণ সর্বানন্দর

সংখ্যালঘু আধুষিত ১৩ টি জেলায় এন আর সির ভালোভাবে পুনরীক্ষণ হয়নি : রিপুন বরা 

গুয়াহাটি : এন আর সি সম্পর্কে কড়া মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শুক্ৰবারও রাজ্যজুড়ে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানাৰ্জীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, আন্দোলন অব্যাহত থাকে। গুয়াহাটি হাইকেটে সাংবাদিক বিশ্বজিৎ নাথ মমতার বিরুদ্ধে জনস্বর্থ সম্পর্কিত এক আবেদন পেশ করেন। এদিকে আসুর এক প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিঙের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মমতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। সেইসঙ্গে সংসদে যাতে কোনওভাবেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ না হয়, তার সুনিশ্চয়তা দাবী করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং তাদের প্রতিশ্রুতি দেন, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সংশোধনী বিল এবং অসম চুক্তি নিয়ে আসুর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। 
মমতার বিরুদ্ধে যখন রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ চলছে, এবং রাজ্যের এন আর সি সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা দাবী করছেন, প্রথম তালিকার ১ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের নাম ভালোমতো পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনও ত্রুটি নেই। অথচ অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি তথা ৰাজ্যসভার সদস্য রিপুন বরা আর জি আই প্রধান শৈলেশের কাছে এক স্মারক পত্র দিয়ে অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের সংখ্যালঘু আধুষিত ১৩ টি জেলায় এন আর সির নথি-পত্ৰ ভালোমতো পরীক্ষায় করা হয়নি। তার জন্যে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের নাম উঠেছে। তিনি দরং, মরিগাঁও,নগাঁও, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি, কাছাড়, কোকরাঝার, বরপেটা, মানকাছার, বঙাইগাঁও, ধুবড়ি, গোয়ালপাড়া এবং নলবারী জেলার একাংশের কথা উল্লেখ করেছেন তার স্মারক পত্রে। 
ভারতীয় গণ পরিষদ নামে এক আঞ্চলিক দল রাজ্যে এন আর সির কাজ চালু থাকার সময় রাজ্যের সংখ্যালঘু অঞ্চলে বিদেশি নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি নােটিশ ইস্যু করাটা এন আর সির কাজে জটিলতা নেমে আসবে বলে দলটি দাবী করে। 
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনােয়াল জাতীয় এক সংবাদপত্রে ইঙ্গিত দিয়েছেন, এন আর সির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর যাদের নাম বাদ পড়বে, তাদেরকে বিতাড়ন করার প্রশ্নই উঠছে না। তবে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে। রাজনৈতিক কোনও অধিকার তাদের থাকবে না। শুধু অন্ন, বস্ত্র এবং বাসস্থানের সুযোগ তারা পাবে। 
আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য একই সুরে বলেছেন, এন আর সির তালিকায় নাম থাকলেও তাকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে তাকে খিলঞ্জিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হবে না। বিজেপির এক সূত্র এই প্রসঙ্গে জানান, প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী শিলচরের এক জনসভায় বক্তব্যে বলেছিলেন, অসমের যে জটিল জনবিন্যাস, তাতে কাউকে বিতাড়ণ করা সম্ভব নয়। তবে ওয়ার্ক পামিট দেওয়া যেতে পারে। জীবন-জীবিকার স্বার্তেরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে। কিন্তু রাজনৈতিক কোনও কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারবেন না। আসু প্রথম থেকে দাবী করে আসছে, দিশপুরের ওপরে খিলঞ্জিয়া মানুষের প্রভুত্ব সুরক্ষিত হতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ঐ ইঙ্গিতের তীব্র প্রতিবাদ করেছে বরাক কংগ্রেস। 
বরাক উপত্যকার বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের পক্ষ থেকে শিলচরে এক নাগরিক সভা ডেকে এন আর সির বিভিন্ন ত্রুটি-বিচছুটি নিয়ে অভিযোগ করে বরাক উপত্যকার বাংলাভাষী হিন্দু-মুসলিমের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করার দিকে জোর দেন। 
ভারতীয় গণ পরিষদের এক মুখপাত্র বলেছেন, লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু জানালেন, রাজ্যে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ডি ভোটারের মধ্যে ১৯৬১২ জনকে বিদেশী বলে শনাক্ত করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে এই বিদেশিদের কোথায় পাঠানো হবে? কারণ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও প্রত্যাৰ্পণ চুক্তি নেই। রাজ্যের ছয়টি ডিটেনশন ক্যাম্পে প্রায় ৯০০ জন বন্দী আছে। সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। এই ১৯ হাজার বিদেশির জায়গা কোথায় হবে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্ৰ মোদী নির্বাচনী প্রচারে এসে অসমে হুংকার দিয়ে গিয়েছিলেন, তারা ক্ষমতায় এলে সব ডিটেনশন ক্যাম্প গুড়িয়ে দেওয়া হবে। ডি ভোটার বলে কিছু থাকবে না। আজ বিজেপি সরকারের সেই প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল? রাজ্যের এন আর সি নবায়নের নামে সংখ্যালঘু মানুষদেরই নানা হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: