অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি :
তেজপুরের বালিপাড়ায় রেললাইন পার হতে গিয়ে ছয়টি হাতির করুণ মৃত্যু ঘটেছিল। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্যে সেই দুর্ঘটনা ঘটে। গতকাল শনিবারের বারবেলায় ফের রাত ৯-৫৮ মিনিটে হােজাইয়ের হাওয়াইপুর ষ্টেশন সংলগ্ন রেল লাইন পার হতে গিয়ে চারটি হাতির মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। একটি হাতি মৃত্যু যন্ত্রণায় রাতভর চিৎকার করে। গুরুতর আহত এই হাতিকে কাজিরঙায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে মারা যায়। গুয়াহাটি-শিলচর প্যাসেঞ্জার ট্রেনে ধাক্কা লেগে হাতিগুলাের মৃত্যু হয়, সেই সঙ্গে ট্রেনটিও লাইনচ্যুত হয়। এই ঘটনার পর থেকে রেলের সঙ্গে বন বিভাগের পারস্পরিক আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ শুরু। বনমন্ত্রী প্রমীলারাণী ব্ৰহ্ম ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়েন। হাওয়াইপুরবাসী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযােগ করেছে, একই অঞ্চলে বার বার হাতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত কোনও পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না। বনমন্ত্রী সরাসরি রেলওয়ে বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযােগ করে বলেন, বার বার অনুরােধ করা সত্বেও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলের গতিবেল নিয়ন্ত্রণ করছে না। বন্য হাতিদের করিডরের মধ্য দিয়ে যাওয়া রেলওয়ে লাইন অতিক্রম করার সময় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, ট্রেনের গতিবেগ নূন্যতম ২০ কিলােমিটার/ঘণ্টা এই চালককে সতর্ক করে দেওয়া। গতকালের ঘটনায় বন বিভাগ রেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল প্রায় ১০০র মতাে হাতির ঝাঁক হাওয়াইপুর রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের বনাঞ্চলের অবস্থান করছে। যে কোনও সময় রেল লাইন অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চালককে কোনও সতর্ক করে দেয়নি। বনমন্ত্রী অভিযােগ করেন, বার বার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভুলের মাসুল দিতে হচ্ছে জঙ্গলের নিরীহ প্রাণীগুলিকে। তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযােগ দায়ের করার কথা জানান। হােজাই জেলার ডিসি এবং এস পিকে বিষয়টি অবগত করেন।
কেন্দ্রীয় রেলওয়ে প্রতিমন্ত্রী রাজেন গােহাঁই লংকা-হাওয়াইপুর ষ্টেশনে দুর্ঘটনার জন্য কার্যত বন বিভাগককেই দায়ী করেন। তিনি বন বিভাগকে তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করে দিয়ে বলেন, বন বিভাগ সতর্ক হলেই এই দুর্ঘটনা এড়ানাে যেতাে। দ্রুতবেগী ট্রেন সহজেই গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তিনি কার্যত রেলেওয়ের পক্ষেই সওয়াল করলেন। কিন্তু বনমন্ত্রী ইতিমধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে হাতিদের যাতায়াতের পথ তথা করিডরগুলিতে গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য অনুরােধ করেছিলেন। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ তা মানছে না বলে স্বয়ং বনমন্ত্রীর অভিযােগ।
কৃষক মুক্তি সংগ্ৰাম সমিতির প্রধান অখিল গগৈ অভিযােগ করেন, বিজেপি রাজত্বেই রাজ্যে সবথেকে বেশি হাতির মৃত্যু ঘটলাে। বিজেপি তাদের ইস্তাহারে একশৃঙ্গ বিশিষ্ট গন্ডার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাে। তাদের আমলে গন্ডার হত্যার সংখ্যাও বেড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ৩১ টি গন্ডার মৃত্যু হয়েছে। কাজিরঙা ষষ্ঠ সংযােজন এলাকার বিশ্বনাথ-বাঘমারী এলাকায় একটি মুক্ত গন্ডার গত একমাস থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গন্ডারটিকে কাজিরঙা এলাকার মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বন বিভাগকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। গতকাল মুক্ত বিচরণ করা গুন্ডারটিকে নৃশংসভাবে চোরা চিকারিরা হত্যাকরে খড়গ কেটে নিয়ে যায়। কৃষক নেতা গগৈ হাতি এবং গন্ডার হত্যার ঘটনায় বিভাগটির ব্যর্থতার অভিযােগ এনে বনমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তােলেন। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনােয়াল আজ ‘দীপারবিলের পরিবেশ সংরক্ষণ’এর ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে হাতি মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষর কাছে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানান।
0 comments: