এন আর সিঃ বংশবৃক্ষ পুনরীক্ষণে ভুয়া নথি ধরা পড়ছে শয়ে শয়ে, প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ার আশঙ্খ

অমল গুপ্তঃ
কেন্দ্রীয় সরকার, এবং রাজ্য সরকারের হাজার বাধা বিপত্তিকে অগ্রাহ্য করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোট বহু চর্চিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর (এন আর সি) দ্বিতীয় তথা চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কাজ যুদ্ধকালীন গতিতে করা নির্দেশ দিয়েছেন। ৩কোটি ২৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে ইতিমধ্যে গত ৩১ডিসেম্বর মধ্য রাতে ১ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের নাম প্রথম তালিকায় প্রকাশ পেয়েছে। বাকী ১ কোটি ৩৯ লক্ষ মানুষের নামের তালিকা পরীক্ষার কাজ চলছে। গত ১৬ফেব্রুয়ারী থেকে বংশবৃক্ষ (ফ্যামিলি ট্রি) পুনরীক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ৪৭ লক্ষ পরিবারের বংশবৃক্ষ পুনরীক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যের বিদেশী শনাক্তকরণ বিদেশী ট্রাইব্যুনালগুলি প্রায় ১লক্ষ মানুষকে বিদেশী বলে শনাক্ত করেছে। তাছাড়া ১ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষকে ডি ভােটার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দুলক্ষাধিক মানুষের নাম এন আর সির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হবে না বলে স্পষ্টাস্পষ্টি এন আর সি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন। তবে ট্রাইব্যুনালগুলিতে যে সব ডি ভােটারের মামলাগুলি নিস্পত্তি হয়েছে, এবং ভারতীয় নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত হবে, কেবল তাদের নাম এন আর সি তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হবে। গত ১৬ফেব্রুয়ারী থেকে বংশবৃক্ষ (ফ্যামিলি ট্রি) পুনরীক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সময় থেকে অধিকাংশ বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলির বিদেশী ট্রাইব্যুনালগুলিতে নানা জালিয়াতি ধরা পড়ছে। জাল বা ভুয়া নথি দিয়ে বংশবৃক্ষে নাম অন্তর্ভূক্ত করতে গিয়ে ইতিমধ্যে কয়েক শ ভুয়া মামলা ধরা পড়েছে। নগাঁও জেলায় ধিংয়ের ৫নং বিদেশী ট্রাইব্যুনাল, ঐ জেলার জুরিয়ার ৪ নং বিদেশী ট্রাইব্যুনালে ১৮৮ মামলা ধরা পড়েছে। সর্বমােট ২১৯টি ভুয়া মামলা ধরা পড়েছে। এর আগে নলবাড়ী বিদেশী ট্রাইব্যুনালেও বহু কারচুপি ধরা পড়েছিল। নগাঁও জেলায় ভুয়া নথি পত্র। জালিয়াতির ঘটনায় গুয়াহাটী হাইকোট উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রবিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বলে দিসপুরের এক সূত্র জানান। ইতিমধ্যে রাজ্যের ১৯টি বিদেশীট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, এবং ১৪টি বিদেশী ট্রাইব্যুনালের কাজকর্মের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। বিদেশীট্রাইব্যুনালগুলাের কাজ-কর্ম এবং যােগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। প্রায় ৪লক্ষ বিদেশীর মামলা বিদেশীট্রাইব্যুনালগুলােতে নিস্পত্তিহীন অবস্থায় পড়ে আছে, তাদের নামও এন আর সি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে না। ৩০ জুনের মধ্যে এন আর সির চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতেই হবে বলে সুপ্রিমকোটের নির্দেশ অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের নেই। তাই স্বাভাবিক ভাবে পূর্বাভাস দেওয়া যেতে পারে প্রায় ৬-৭ লক্ষ লােকের নাম এন আর সি তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হবে না। তারা যাবে কোথায়? বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে আশাঙ্খ প্রকাশ করেছে অসমে এন আর সি তালিকায় বাদ পড়া লােকগুলেকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানাে হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যার্পণ আজও সম্পাদিত হয়নি। বহিঃরাজ্যের কয়েক লক্ষ মানুষ এই রাজ্যে জীৱন-জীবিকা ও রুজি-রােজগারের স্বার্থে বসবাস করছেন। তাদের নাগরিকত্ব পরীক্ষার জন্য দেশের প্রায় ২৭টি রাজ্যে নথি-পত্র পাঠানাে হয়েছে। তার সিংহ ভাগ আজও ঘুরে আসেনি। তাদের ভাগ্যে কি ঘটবে সে ব্যপারে এন আর সি কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট কোনও নির্দেশ দিতে পারেনি। তাই এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মাঝে দাঁড়িয়ে বরাক উপত্যকা এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সংখ্যালঘু হিন্দু-মুসলিম মানুষের মধ্যে ভয় ও ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এন আর সি কর্তৃপক্ষ ঘরে ঘরে নােটিস পাঠাচ্ছে, অপরদিকে রাজ্যের সীমান্ত পুলিস বিদেশী নােটিশও পাঠাচ্ছে। এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ ধর্মীয় ও ভাষিক সংখ্যালঘু জনগােষ্ঠীর মানুষ। সুবিচারের আশায় দিন গুণছেন।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: