উত্তপ্ত বড়ােল্যান্ড : বিধানসভাতেও আঁচ পড়বে, লাগাতার বন্ধ, রেল অবরােধের ডাক

২০১৯ র লােকসভা নির্বাচনে নব শরনীয়ার ডানা ছাঁটতে, অবড়ো ভােটারদের ভয় খাওয়াতে হাগ্রামাদের নতুন আইন 
গুয়াহাটী : বড়ােল্যান্ড চুক্তি এবং ২০০৩ সালের ষষ্ঠ তফসিল (সংশােধনী) আইনের সব শর্ত লঙঘন করে গ্রামা মহিলারি নেতৃত্বাধীন বি টি সি কর্তৃপক্ষ বি টি সি ল্যাণ্ড এ্যাণ্ড রেভিনিউ রেগুলেশন ২০০৬’ নামে এক আইন প্রণয়ন করে। অনুমােদনের জন্য তরুণ গগৈ নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের আমলে পাঠিয়ে ছিল। 
সেই আইনটি কার্যকরী হলে বি টি এডি এলাকায় অবড়াে জনগােষ্ঠীর অধিকার খর্ব হবে বলে তা অনুমােদন জানানাে হয়নি। কিন্তু বর্তমান বি পি এফ-বিজেপি জোট সরকার কুট-কৌশল করে আইনটি চাপিয়ে দিতে চাইছে বলে কংগ্রেস অভিযােগ করেছে। বড়ােল্যান্ড চুক্তি অনুযায়ী ষষ্ঠ তফসিল (সংশােধনী)-র প্রথম দফায় বি টি সি এলাকায় ষষ্ঠ তফসিল ভূমি আইন কোনও দিন কার্যকরী হবে না, দ্বিতীয়তঃ এই চুক্তি কার্যকরী হওয়ার সময় থেকে অসমের ভূমি ও রাজস্ব আইন, ১৮৮৬ সালের দশম অধ্যায় অর্থাৎ ট্রাইব্যাল ব্লক, বেল্ট বাতিল হয়ে যাবে। 
তৃতীয়তঃ বি টি সি এলাকায় বসবাসকারী সব জনগােষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। চুক্তি কার্যকরী করার পর বি টি সি কর্তৃপক্ষ নতুন এক ভূমিনীতি কার্যকারী করবে বলে চুক্তিতে বলা হয়েছিল। এখন বি টি সি কর্তৃপক্ষ সেই শর্তকে লংঘন করে বি টি এডি এলাকায় যুগ-যুগ ধরে বসবাসকারী কোঁচ রাজবংশী, সাঁওতাল আদিবাসী, নেপালি ও নাথ-যােগীসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের ভূমির অধিকার বাতিল করতে চাইছে। এছাড়াও, হিন্দু, মুসলিমসহ অন্যান্য অবড়াে জনগােষ্ঠীর ভূমির সব অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। এই আইনটি কার্যকরী হলে বােড়াে জনগােষ্ঠীর কাছ থেকে কেউ জমি কিনতে পারবেনা এবং বিক্রিও করতে পারবে না। অবড়াে জনগােষ্ঠীর মানুষ নিজেদের মধ্যে জমি কেনা-বেচা করতে গেলে । 
বি টি সি কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমতি নিতে হবে। গত ১২ জানুয়ারী বি টি সি কাউনসিলের বৈঠকে পূর্বে গৃহীত আইনটি প্রশাসনিক ভাবে অনুমােদন জানানাে হয়। বি টি সি প্রধান হাগ্রামা মহিলারি আইনটির সপক্ষে বলেছেন—“বড়াে পদবীধারী ব্যক্তির জমি কোনও অবড়াে নাগরিক ক্রয় করলেও তার পক্ষে নামজারি করা যাবে না, বােড়াে পদবীধারী বাক্তির এক্তিয়ারেই জমিটি থাকবে, তবে অবােড়াে নাগরিকের জমি অন্য কোনও অবড়াে মানুষ ক্ৰয় কৰলে নামজারি করা যাবে। বােড়াে জনগােষ্ঠীর পক্ষে জমির অধিকারের কথা বলার পরেও আশ্বাস দিয়েছেন, অবােড়াে জনগােষ্ঠীর অধিকার অক্ষুন্ন থাকবে। কোকারাঝাড়ের অবােড়াে সাংসদ নব শরনীয়া বি টি সি কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরােধিতা করেছেন। বড়াে নেতৃবৃন্দ অসমকে ৫০ঃ৫০ বিভাজনের দাবী তােলার বিপরীতে, সাংসদ শরনীয়া বােড়ােভূমিকে ৭০ঃ৩০ বিভাজনের দাবীতে সরব হয়েছেন। 
বি টি এডির ৪টি জেলা কোকরাঝাড়, বাক্সা, চিরাং ও ওদালগুড়ি সর্বমােট জনসংখ্যা প্রায় ৩৩ লক্ষ। এই জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ অববাড়াে জনগােষ্ঠীর বাস। ২০০৩ সালে তরুণ গগৈর আমলে যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, তাতে ছিল নানা ভুল-বিভ্রান্তি, বি টি সির আইন সভায় ৪০টি আসন আছে, তার মধ্যে ৩৫টি আসনই বড়ােদের জন্য সংরক্ষিত, আজ পর্যন্ত বি টি এডির সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। মাত্র ১-২ শতাংশ বােড়াে জনগােষ্ঠীর গ্রামকে বি টি সিতে অন্তর্ভূক্ত করে। ৯৮-৯৯ শতাংশ অবড়াে জনগােষ্ঠীর অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, আগামি ২০১৯ সালের লােকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে অবােড়াে জনগােষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রনে আনতে চাইছে। গত লােকসভা নির্বাচনে। অবােড়া জনগােষ্ঠীর ভােটে প্রাক্তন আলফা নেতা নব শরনীয়া ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ভােট পেয়ে জয়লাভ করেছিলেন। বি পি এফ প্রার্থী চন্দন ব্রহ্ম পরাজিত হয়েছিলেন। সেই অবােড়াে জনগােষ্ঠীর ভােটারদের ভয় দেখিয়ে, মিথ্যা আইনের আশ্রয় নিয়ে কোকরাঝাড় লােকসভা আসনটির জয়লাভ সু-নিশ্চিত করতে চাইছে বি টি সি নেতৃবৃন্দ। সাংসদ বিশ্বজিৎ দৈমারিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সরাসরি সাংসদ শরনীয়াকে ‘ঘাতক জঙ্গি’ বলে অভিহিত করছেন। অথচ বি টি এডির প্রধান হাগ্রামা মহিলারি বড়ােল্যান্ড লিবারেশন টাইগার’ নামে এক জঙ্গি সংগঠনের নেতা ছিলেন। 
বড়ােল্যান্ডে বাঙালি হিন্দু, মুসলিম, অসমীয়া, সাঁওতাল, কোচ-রাজবংশী, নেপালি, নাথ-যােগী প্রভৃতি সম্প্রদায়ের অবােড়াে মানুষ যুগ-যুগ ধরে পাশাপাশি সভাবের সঙ্গে বসবাস করছেন। বিভিন্ন কায়েমী স্বার্থান্বেষী চক্রের ষড়যন্ত্রের ফলে বােড়াে ভূমি বার বার রক্তাক্ত হয়েছে। আগামি লােকসভা নির্বাচনের আগে বড়ােল্যান্ডে পুনরায় জাতিগত হত্যাকাণ্ডের (এথনিক ক্লিনজিং) নীল নক্সার গন্ধ পাচ্ছে অনেকে। রাজ্য গৃহ দপ্তর বলেছে বিটিএডি বড়ােল্যান্ড চুক্তির পরিপন্থী কোনও আইন প্রণয়ন করতে পারে না, কিন্তু কার কথা কে শােনে! বিরােধীরা প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি সরকারের শরিক বিপিএফ জনবিরােধী, অবড়াে বিরােধী আইন করার। সাহস কোথা থেকে পেল? বিটিএডি ক্রমশঃ অগ্নিগর্ভ হয়েও উঠছে। অববাড়াে জনগােষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠন আগামি ১ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত বিটিএডি বন্ধের ডাক দিয়েছে এবং ২২ মার্চ কোচ-রাজবংশী, মহাসভা রেল অবরােধের ডাক দিয়েছে। বিজেপির সভাপতি রঞ্জিত দাস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বড়ােল্যান্ড অবড়া জনগােষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। 
২০১৯ র লােকসভা নির্বাচনে নব শরনীয়ার ডানা ছাঁটতে এবং অবড়ােদের ভয় খাওয়াতেই হাগ্রামাদের নতুন আইনের হুমকি বলা যেতে পারে। বড়ােল্যান্ড ক্রমশঃ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, বিধানসভাতেও আঁচ পড়বে। সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।


SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: