বরাকে বাংলাভাষার দাবিতে সােচ্চার কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ

একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি বরাকের বিজেপি এবং এ আই ইউ ডি এফর বিধায়করা 

গুয়াহাটি : এই মুহূর্তে বিশ্বে বাংলা ভাষার স্থান ৭নম্বরে, বিশ্বের ৩০টি দেশের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ আছে। বাংলাদেশ, ভারত, আফ্রিকার সিয়েরা লিওনের পর অষ্ট্রেলিয়ার সংসদেও স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা ভাষা। ৬টি দেশের রাষ্ট্রীয় বেতারে বাংলা ভাষায় চ্যানেল আছে, ব্রিটেনে-৬টি এবং আমেরিকায় ১০টি বাংলা টিভি চ্যানেল আছে, আরব দেশগুলি থেকে ৬টি বাংলা ভাষায় সংবাদ পত্র প্রকাশ পায়। ভারতে বাংলাভাষার স্থান দ্বিতীয়। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে অসম তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১কোটিরও বেশি হিন্দু-মুসলিম বাংলাভাষী মানুষ থাকা সত্বেও বাংলাভাষা ক্রমশ কোনঠাসা, চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। দক্ষিণ অসমের বরাক উপত্যকার তিন জেলায় ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শাস্ত্রী কমিশনের ত্রি-ভাষা সূত্র অনুযায়ী বরাকে সরকারী ভাষা হিসাবে বাংলাভাষাকে স্বীকৃতি জানানাে হয়। সেখানে তদানিন্তন পূর্ব-পাকিস্থানের মতাে ১৯৬১সালে রাকের শিলচর শহরেও বাংলাভাষায় রক্ষায় প্রাণ আহুতি দিয়েছিলেন ১১ জন যুবক-যুবতী। পরবর্তীতে করিমগঞ্জেও আরও তিনজন বাংলাভাষা রক্ষার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। বিষ্ণুপুরী মনিপুরী ভাষা রক্ষায় প্রাণ দানের খবর আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও ভাষা শহিদকে সরকারীভাবে স্বীকৃতি জানানাে হয়নি। অসম আন্দোলনের শহিদদের পাশা-পাশি বােড়াে আন্দোলনের শহিদদের পরিবারকেও ৫লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘােষণা করেছে রাজ্য সরকার। অসম আন্দোলনে যারা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন তাদেরকেও ২ লক্ষ টাকা করে অর্থ সাহায্য দেওয়ার কথাঘােষণা করা হয়েছে বাজেটে। আজ অর্থমন্ত্রী কাবিংআংলংয়ে আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদেরকেও আর্থিক সাহায্য হবে বলে ঘােষণা করেছেন। 
অসম বিধানসভার উপাধ্যক্ষ দিলীপ পাল মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনােয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎকরে শিলচরের ভাষাশহিদদের স্বীকৃতিসহ শিলচর রেল ষ্টেশনকে ভাষা শহিদ ষ্টেশন হিসাবে ঘােষণা করার দাবি জানিয়েছেন।মুখ্যমন্ত্রী বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিধানসভায় উত্তর করিমগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক কমালাক্ষ দে পুরকায়স্থ বরাক উপত্যকায় বাংলাভাষাকে সরকারী ভাষা হিসাবে মানা হচ্ছে না, সরকারী বিজ্ঞপ্তিতে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে অন্য ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, বাংলাভাষাকে সরকার অবহেলা করছে বলে অভিযােগ করেন। 
কংগ্রেস পরিষদীয় দলের ডেপুটি লিডার কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ যখন বরাকের বাংলাভাষার দাবিতে সােচ্চার তখন বরাকের বিজেপি এবং এ আই ইউ ডি এফ-র বিধায়করা একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। আজ বিধানসভায় বিজেপির সদস্য তেরেস গােয়ালা সরকারী ভাষা সম্পর্কীয় দৃষ্টি আকর্ষণ মূলকনােটিশ দিয়ে বলেন, রাজ্যে সরকারী ভাষা অসমীয়া সর্বত্র চালু করা হচ্ছে না। সেই বিতর্কে অংশ গ্রহণ করে কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বরাকবাসীর স্বার্থে বাংলাভাষার অবস্থানের কথা রাজ্য সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, সারা বিশ্বে বাংলাভাষা সপ্তম স্থানে আছে। ভারতে দ্বিতীয় স্থানে, অথচ বরাক উপত্যকায় সরকারী ভাষা বাংলাকে অবহেলা ও অবজ্ঞা করা হচ্ছে। বাংলাভাষা রক্ষায় যারা শহিদ হলেন তাদেরকে আজও স্বীকৃতি জানানাে হলাে না। সেই প্রশ্নের জবাবে সংসদীয় পরিক্রমামন্ত্রী চন্দ্র মােহন পাটোয়ারি বলেন, সারা বিশ্বে অসমীয়া ভাষার স্থান ৬৬। মানুষ যে ভাষায় কথা বলে, স্বপ্ন দেখে তাই মাতৃভাষা। বরাকের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। 
এই বিতর্কের সময় অধ্যক্ষের আসনে ছিলেন উপধ্যক্ষ দিলীপ পাল। তিনি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়াশুনা করছে তা আগে খতিয়ে দেখতে হবে। মাতৃভাষা নিয়ে অহেতুক আলােচনা করে লাভ নেই।বাজেট বিতর্কের জবাবে অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান কাবিং আংলংয়ে আন্দোলনে শহিদদেরও সরকারী আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। তখন উঠে দাঁড়িয়ে কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বরাক উপত্যকার শহিদদের আর্থিক সাহায্য ঘােষণার দাবি জানিয়ে বলেন, এর আগের বাজেট ভাষণে বরাকের ভাষা শহিদদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘােষণা করেছিলেন। অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জবাবে জানান, বরাকের ঘটনা খুব পুরনাে, তখন পুরকায়স্থ চেপে ধরলে হিমন্ত বলেন,শহিদদের তালিকা দেওয়া হওক। সরকার বিবেচনা করে দেখতে পারে। বিধায়ক পুরকায়স্থ অর্থমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেন শিলচরে গিয়ে ভাষা শহিদদের স্বীকৃতি জানানাে এবং আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: