প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ৪০-৫০ লক্ষ সংখ্যালঘু মানুষকে এন আর সি থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র : অভিযােগ নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির
গুয়াহাটি : ২০০৪ সালের ১৪ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জয়প্রকাশ জয়সােয়ল সংসদে বলেছিলেন, সারা দেশে ১ কোটি ২০ লক্ষ বাংলাদেশী মানুষ বিভিন্ন রাজ্যে বেআইনিভাবে বসবাস করছে। তার মধ্যে শুধু অসমেই প্রায় ৫০ লক্ষ বাংলাদেশী আছে। অসমের প্রাক্তন রাজ্যপাল এস কে সিনহা তদানীন্তন রাষ্ট্রপতির কাছে ২৪ পৃষ্ঠার এক গােপন প্রতিবেদন পাঠিয়ে অভিযােগ করেছিলেন, অসমে ৪০-৫০ লক্ষ বাংলাদেশী অবস্থান করছে, ভবিষ্যতে অসমের জনবিন্যাস পাল্টিয়ে যাবে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকীয়াও বিধানসভায় বলেছিলেন— অসমে ৩০ লক্ষ বাংলাদেশী আছে। পরে অবশ্য সেই মন্তব্য থেকে সরে আসেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও রাজ্যে বাংলাদেশীদের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করেছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আসাম পাব্লিক ওয়ার্কস্ সুপ্রিমকোটে হলফনামা দাখিল করে অভিযােগ দায়ের করেছে অসমের ১৩-১৪টি জেলায় বাংলাদেশীদের অস্তিত্ব আছে। ভূমিপুত্র বা খিলঞ্জীয়া জনগােষ্ঠীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ইত্যাদি এই সব প্রতিবেদন অভিযােগ ও নানা তথ্যকে সামনে রেখে প্রায় ৪০-৫০ লক্ষ নাগরিকের নাম এন আর সির তালিকা থেকে বাদ পরবে বলে ধরে নিয়ে এন আর সি কর্তৃপক্ষ বংশপঞ্জী তৈরি করছে, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতি আজ এই আশঙ্খ প্রকাশ করেছে।
এন আর সি থেকে বাদ পড়া ৪০-৫০ লক্ষ লােকের ভবিষ্যত কি হবে? প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী, প্রাক্তন রাজ্যপাল এস কে সিনহার পরামর্শ ও প্রতিবেদন মেনেই ৪০-৫০ লক্ষ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে কেবল দীর্ঘ মেয়াদি ভিসার মাধ্যমে এই রাজ্যে রেখে তাদের কাজের অধিকারকে স্বীকৃতি জানানাে হবে, প্রত্যেকের হাতে ওয়ার্ক পারমিট সম্পর্কিত অস্থায়ী নথি-পত্র তুলে দেওয়া হবে। এন আর সি থেকে বাদ পড়া ৪০-৫০ লক্ষ মানুষদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার জন্য সুপ্রিম কোৰ্ট রাজ্যের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে উচ্চ পর্যায়ের এক কমিটি গঠন করবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সে কমিটিতে রাজ্যের বিশিষ্ট কয়েকজন সংখ্যালঘু নেতাকে স্থান দেওয়া হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু এন আর সি থেকে বাদ পড়া মানুষদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলােকপাত করেছেন।
বাদ পড়াদের পৃথকভাবে রেখে তাদের ‘আইডেন্টটিটি’ রক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন। এবং রিজিজু এ কথাও বলেছেন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রয়ােজন নেই। প্রশ্ন উঠছে এন আর সি থেকে বাদ পড়া মানুষগুলির ভাগ্যে কি হবে? তাদের কোথায় পাঠানাে হবে?
রাজ্যের জাতীয়তাবাদী সংগঠন এবং সরকারের একাংশের অনুমােদন ক্রমেই রাজ্যের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলিতে বংশপঞ্জী তৈরির নামে সংখ্যালঘু মানুষদের ব্যাপক হারে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে রাজ্যের সংখ্যালঘু জনগােষ্ঠী সংগঠনগুলাে অভিযােগ করেছে।
একই অভিযােগ করেন নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির উপদেষ্টা তথা গৌহাটি হাইকোটে বিশিষ্ট আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বংশপঞ্জী পরীক্ষার নামে বরাক উপত্যকার মানুষকে। উজান অসমে, নিম্ন অসমে পাঠানাে হচ্ছে। গরীব মানুষগুলাে হয়রানি হচ্ছে চুড়ান্তভাবে। বিশিষ্ট আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমদ চৌধুরী বলেন, এন আর সি থেকে বাদ পড়া লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু মানুষদের রাষ্ট্রহীন করার সব ব্যবস্থায় পাকা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন তাদের সন্তান-সন্তুতিদের ভবিষ্যৎ কি হবে? সরকারী চাকরি পাবেনা, জমি কেনার অধিকার থাকবে না, সরকারী বিদ্যালয়ে পড়াশুনার অধিকার থাকবে না, ভােট দেওয়ার অধিকার তাে থাকবেই না। সেই সব রাষ্ট্রহীন মানুষের অবস্থানের ফলে রাজ্যে ব্যাপক হারে সামাজিক অসন্তুষের সৃষ্টি হবে বলে তার আশংকা।
নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির উপদেষ্টা গােয়ালপাড়া জেলে ডি ভােটারদের অনশন ধর্মঘট সম্পর্কে বলেন ডি ভােটারদের অধিকাংশ ভারতীয় বৈধ নথি-পত্ৰ আছে অনেকের নামও এন আর সি তালিকায় উঠেছে। তাদেরকে জেলের চোর, ডাকাত, ‘ক্রিমিন্যাল’দের সঙ্গে একই কুঠুরীতে আটকে রাখা হচ্ছে যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চুড়ান্ত নিদর্শন। আন্তর্জাতিক মহলে এই চুড়ান্ত অমানবিক ঘটনাগুলাে তুলে ধরা হয় তবে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে।
0 comments: