দিসপুর প্রেস ক্লাবের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উৎসব

জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে বিদেশীদের নামই অন্তর্ভূক্ত হবে, বাঙালি হিন্দুদের নাম বাদ পড়বেঃ আশংকা শঙ্কর দাসের 

গুয়াহাটি : সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে ৩১মের মধ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এন আর সি) দ্বিতীয় খসড়া তালিকা প্রকাশ করতে হবে। এখনও ১ কোটিরও বেশি নথি-পত্র পরীক্ষার কাজ বাকী আছে। হাতে আছে মাত্র দু মাস। এই অল্প সময়ের মধ্যে বৃহৎ সংখ্যক নথি-পত্র পরীক্ষা সম্ভব নয়। ৪৮ লক্ষ বংশতালিকার কাজ বাকী আছে, ২৯ লক্ষ পঞ্চায়েত সচিবদের ইস্যু করা সার্টিফিকেট পরীক্ষাও হয়নি। তাই মাত্র দুমাসে ১ কোটিরও বেশিনথি-পত্র পরীক্ষা সম্ভব নয়। সুপ্রিম কোৰ্টের নিদের্শে তড়িঘড়ি করে নথি-পত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রচুর ভুল থেকে যাচ্ছে। যে ভাবে কাজ চলছে তাতে বিদেশীরা লাভবান হবে, তাদের নামই এন আর সিতে অন্তর্ভূক্ত হবে, বাঙালি হিন্দুদের নাম ব্যপক হারে বাদ পড়বে। উত্তর-পূর্ব প্রান্তীয় প্রচার প্রমুখ শঙ্কর দাস আজ দিসপুর প্রেস ক্লাবে এই আশংকার কথায় জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রাজ্য এক ভয়ঙ্কর,জটিল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে, তা থেকে উত্তরণের পথ নেই। 
সুপ্রিম কোৰ্ট এন আর সি প্রস্তুত করার নামে না কেন্দ্রীয় সরকার না রাজ্য সরকার কাউকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে তিনি অভিযােগ করেন। রেজিষ্টার জেনারেল অফ ইণ্ডিয়াকেও (আর জে আই) অপমান করছে। এন আর সির নামে বিভিন্ন ভুল ভ্রান্তির দৃষ্টান্ত হিসাবে তিনি বলেন, এক ব্যক্তির নাম ২০১১ তালিকায় বিদেশী বলে প্রমাণিত হলাে, দেখা যায় ২০১৬ র তালিকায় সেই ব্যক্তির নাম এন আর সিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। উত্তর-পূর্ব প্রান্তীয় প্রচার প্রমুখ শঙ্কর দাস বলেন, যে ভাবে দ্রুতগতিতে সুপ্রিমকোটকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ চলছে তার জন্য রাজ্যে চরম অরাজকতা সৃষ্টি হবে। ৪০-৪৫ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ার সম্ভাবনা আছে। বেশির ভাগ বাঙালি হিন্দুদের নাম বাদ পড়তে পারে, তিনি আশংকা প্রকাশ করেন, আই এম ডি টি আইনের মতাে অবস্থা হবে সব কিছু বুমেরাং হিসাবে দেখা দেবে। 
আজ দিসপুর প্রেস ক্লাবে তৃতীয় বার্ষিক অধিবেশণ উপলক্ষ্যে নিমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখছিলেন শঙ্কর দাস৷ রাজ্যের মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। পুলিশের বিশেষ শাখার ডি জি পি পল্লব ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্যের মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় রাজ্য সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের বিশেষ সেল স্থাপন করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, রাজ্যে এমন অনেক খবর পুলিশের আগে সাংবাদিকরা জানতে পারে। 
মুখ্য অতিথি হিসাবে অসম সাহিত্য সভার সভাপতি ড° পরমানন্দ রাজবংশী মাতৃভাষা শিক্ষার উপর জোর দিয়ে বলেন, রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় অসমীয়া, বরাক উপত্যকায় বাংলা এবং পার্বত্য জেলাগুলিতে ইংরেজী ভাষা প্রচলন আছে। এই ভাষা নীতির আধারে রাজ্যের সরকারী সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন পত্রগুলিতে ৫০শতাংশ মাতৃভাষায় প্রশ্ন রাখার জন্য অসম সাহিত্য সভা রাজ্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে। বাংলা, বােড়াে, অসমীয়া যে কোনও ভাষায় হােক না কেন ৫০শতাংশ মাতৃভাষায় প্রশ্ন রাখতেই হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রাজ্যেগুলিতে অসমীয়া ভাষা প্রচার ও প্রসারের জন্য অসম সাহিত্য সভা এক বিশেষ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। 
দিসপুর প্রেস ক্লাবে তৃতীয় বার্ষিক অধিবেশণ উপলক্ষ্যে ২০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাংবাদিককে সম্বর্ধনা জানানাে হয়— প্রভাত গােস্বামী, সাঁওরমল সাংগানেরীয়া, কানন বরদলৈ, অভিজিৎ শৰ্মা, দিগজ্যোতি লহকর, কুন্তল চক্রবর্তী, হিরেন ডেকা, প্ৰাণজিৎ ডেকা, ধ্রুবজ্যোতি পাঠক, সঞ্জিব কলিতা, উৎপল কুমার ভাগবতী, অরূপজ্যোতি মহন্ত, লুইতনীল ডন, দিগন্ত গােস্বামী, জোনজ্যোতি দত্ত ব্রা, প্রদীপবর্মণ, আফ্রিদা হুসেইন, বিপুল বর্মণ, মহেশ চৌধুরী এবং দেবজিৎ তালুকদার। নিমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে সম্বর্ধনা জানানাে হয় বিশেষ শাখার ডিজিপি পল্লব ভট্টাচার্য্য, দিসপুর প্রেস ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি অমল গুপ্ত, প্রাক্তন সভাপতি বৈকুণ্ঠনাথ গােস্বামী, আপকু কাৰ্যবাহী সভাপতি মৌসম জ্যোতি বৈশ্য এবং সাহিত্যিক গিরিন্দ্ৰ শইকীয়াকে। দিসপুর প্রেস ক্লাবের সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সভাপতি নরেন হাজরিকা, সাধারণ সম্পাদক কুঞ্জ মােহন রায়।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: