গুয়াহাটি : কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ময়নুল হক চৌধুরীর একান্ত চেষ্টার ফলে বরাক উপত্যকার একমাত্র বৃহত্তম শিল্পদ্যোগ পাঁচগ্রাম পেপার মিল ৭০দশকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দু'বছর আগে বন্ধের আগে পর্যন্ত মিলটির উৎপাদন ছিল প্রায় ৩০০মেট্রিক টন। মিলটি অত্যন্ত উন্নতমানের কাগজ উৎপাদন করলেও বাঁশ,কয়লা প্রভৃতি কাঁচা মালের অভাবে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। মিলটিকে ঘিরে কংগ্রেস নেতা-মন্ত্রীদের আশীর্বাদধন্য অসাধুচক্র, বাঁশ, কয়লা সিণ্ডিকেটরাজ, নােংরা রাজনীতির শিকার হয়ে বরাক উপত্যকার মানুষ, একমাত্র বৃহৎ পেপার মিলটি বন্ধ হয়ে গেল বলে বরাকের মানুষের অভিযােগ।
বর্তমান বিজেপি সরকার হাজার প্রতিশ্রুতি দিয়েও মিলটি খুলতে পারছেনা। রাজ্যের শিল্প বাণিজ্যমন্ত্রী চন্দ্রমােহন পাটোয়ারী কয়েকদিন আগে জানালেন, যােগীগােপা পেপার মিলটির সঙ্গে পার্চগ্রাম এবং জাগিরােড পেপার মিল দুটি তৃতীয় পার্টির হাতে হস্তান্তর করা হবে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারী পেপার মিলের সি এম ডি এস কে জৈন গুয়াহাটিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পেপার মিল দুটি বেসরকারীকরণের জন্য এপ্রিল মাসের মধ্যে টেণ্ডার কল করা হবে। কাছাড় পেপার প্রজেক্ট ওয়ার্কাস এণ্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (স্বতন্ত্র)নেতা এ আর মজুমদার আজ জানান, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সােনােয়াল গত ৩ এপ্রিল গুয়াহাটিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন খুব শীঘ্রই পেপার মিলটি চালু করা হবে। এতকিছু প্রতিশ্রুতির পরও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশক্রমে পেপার মিলটির জমি বিক্রি করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। গােপনে জমি জরিপকরা হয়েছে। আজ পর্যন্ত বেসরকারীকরণের জন্য টেণ্ডার-ই কল করা হয়নি।
পাঁচগ্রাম পেপার মিলের আ এন টি ইউ সি সভাপতি মানবেন্দ্র চক্রবর্তী অভিযােগ করেন, রাজ্যের শিল্প বাণিজ্যমন্ত্রী চন্দ্রমােহন পাটোয়ারী প্রথম থেকেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। মিলটির ৬০৮ স্থায়ী কর্মচারী ৩ মাসের বেতন পেয়েছে। এখনও ১৭ মাসের বেতন বাকী, ৪৬১ জন চুক্তিবদ্ধ অস্থায়ী কর্মচারী ২০-২৫ বছর ধরে কাজ করছেন। তাদেরকে মাত্র ৯ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে গত ৩১ মার্চে ছাঁটাই-এর নােটিশ ইস্যু করা হয়েছে। সরকার সম্পূর্ণভাবে শ্রমিক বিরােধীনীতি গ্রহণ করে মিলটির একাংশ জমি বিক্রীর যড়যন্ত্র শুরু করেছে। মিলটির স্বতন্ত্র ইউনিয়নের নেতা এ আর মজুমদার অভিযােগ করেছেন মিলটির দু’বছরের বেশি বন্ধ থাকার ফলে বেতনের অভাবে অনাহারে অসুস্থ হয়ে ৫জন মারা গেছেন ৩ জন আত্মহত্যা করেছে। তাদের ইউনিয়নের নেতা দিলীপ শুক্লবৈদ্যর ছেলে কলকাতায় অর্থাভাবে আত্মহত্যা করেছে, এর থেকে লজ্জা ও পরিতাপের কথা কিছু নেই।
মিলটির মেশিন-পত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। ক্র্যাপ হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। মিলটির মধ্যে আজও প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিকটন বাঁশ, প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা, প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন চুন এবং প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন সােপষ্টোন পাউডার জমা আছে। সব কাঁচা মাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মিলটি কবে খুলবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই, অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
0 comments: