# সংশােধনী বিলের মাধ্যমে বিজেপি সরকার জনগণের চোখে ধূলাে দিচ্ছেঃ অর্ধেন্দু # হাজার বিরােধিতা সত্বেও বিলটি আইনে পরিণত হবেঃ শঙ্কর দাস
গুয়াহাটি : বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তানে ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত হিন্দুদের এই দেশে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত সংশােধনী বিল সম্পর্কে মতামত গ্রহণের জন্য সাংসদ রাজেন্দ্র আগরওয়ালার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের যৌথ সংসদীয় কমিটির আজ গুয়াহাটিতে গণ শুনানি নেওয়ার সময় যুদ্ধ সদৃশ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কয়েক হাজার ব্যক্তি, সংগঠন, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সংশােধনী বিলের তীব্র বিরােধিতা করে স্মারক পত্র দাখিল করা হয়। আগামি ৮-৯ মে’ বরাক উপত্যকায় এবং ১০ মে’ মেঘালয়ে গণ শুনানি গ্রহণ করা হবে। বিজেপির সরকার ক্ষমতার আসার সময় প্রচারাভিযান চালাতে গিয়ে ভােটারদের প্রভাবিত করার জন্য বলেছিল এই নির্বাচন শাইঘাটের শেষ জীবন মরণ যুদ্ধ। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আজও এমনই মনােভাব পােষণ করে বলা হলাে বিলটি আইনে পরিণত হলে অসমের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের ১ কোটি ৬০ লক্ষ বাংলাদেশী হিন্দুকে অসমে আসার সুযােগ করে দিচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আজ বাঙালি সংগঠনের পক্ষ থেকে সাড়া অসম বাঙালি পরিষদ’ এবং সাড়া অসম ঐক্য মঞ্চ’ নামে মাত্র ২ টি সংগঠন এই বিলের সমর্থনে স্মারক পত্র দিয়েছে বলে পরিষদের পক্ষে সভাপতি ডাঃ সান্তনু সান্যাল এবং ঐক্য মঞ্চের পক্ষে সভাপতি হরি গােস্বামী দাবি করেন। আর এস এস-র উত্তর পূর্ব প্রান্তের প্রচার প্রমুখ শঙ্কর দাস দাবি করেন—অনেক বাঙালি। সংগঠন বিলটির পক্ষে স্মারক পত্র দাখিল করেছে। তিনি বলেন, হাজার বিরােধিতা সত্বেও এই বিলটি আইনে পরিণত হবেই। বাঙালি হিন্দুদের স্বার্থ সংরক্ষণের তাদের দায়িত্ব আছে। কংগ্রেস দলের স্থিতির বিরুদ্ধে গিয়ে প্রাক্তন কংগ্রেস মন্ত্রী ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আজ বলেন— “২০১৪ সালের ভােটার তালিকার উপর ভিত্তি করে লােকসভা গঠিত হয়েছিল। সেই ২০১৪ সালকে কি ভাবে অস্বীকার করা যাবে? এই সংশােধনী বিলের মাধ্যমে বিজেপি সরকার জনগণের চোখে ধূলাে দিচ্ছে।‘আই ওয়ার্শ ছাড়া কিছুই নয়। বিলটি কোনও দিন আইনে পরিণত হবে না। বাঙালি হিন্দুদের সঙ্গে প্রতারণা করছে বিজেপি। উগ্র-জাতীয়তাবাদের জন্য অসম টুকরাে টুকরাে হয়ে গেছে, আবার টুকরাে হবে। বরাক উপত্যকার বাংলাভাষী মানুষদের বিরুদ্ধে যথেচ্ছার ভাবে অপমানসূচক ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। বরাকের হিন্দুমুসলিম বাংলাভাষী মানুষ যদি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে সরে যায় তবে এর জন্য সর্বোতভাবে দায়ী হবে রাজ্যের উগ্রজাতীয়তাবাদি শক্তি এবং বিজেপি সরকার। উগ্র-জাতীয়তাবাদের বিরােধিতা করে তার নেতৃত্বে গঠিত ‘অসম নাগরিক মঞ্চ আগামি কাল হােজাই শহরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করবে।” ডাঃ দে দাবি করেন, কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেবও তারই মতের সমর্থক। রাকের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, ডাঃ দের মতকে সমর্থন করেছেন। বরাকের কংগ্রেসের নেতা আবু সালেহ নাজমুদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বিলে বিভিন্ন জাতি-গােষ্ঠির মধ্যে বিভাজন আনার চেষ্টা করলেও বরাক উপত্যকার হিন্দু-মুসলিম বাংলাভাষী মানুষের মধ্য বিভাজন আনা সম্ভব নয়। আজকের এই পরিস্থিতির মধ্যে বিজেপির বিধায়ক শিলাদিত্য দেব সাংবাদিকদের কাছে, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈয়ের তীব্র সমালােচনা করে বলেন, অখিল রাজ্যের মুসলিম মৌলবাদীর পক্ষে ওকালতি করছেন। তিনি দাবি করেন, ১৯৭১ সালের পর কোনও বাংলাদেশী হিন্দু অসমে আসে নি। হােজাইয়ের বিধায়ক দেব বলেন—বাঙালি হিন্দুরা বাঙালি হিন্দুদের সাহায্য করে না। কিন্তু, বাংলাদেশী মুসলিমরা তাদের জাতিকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেন, তাদের জাতির জন্য দরজা খােলা রাখে। ১৯৪৭ সালের পর যারা সিলেট থেকে এই রাজ্যে এসেছে তাদেরে প্রায় ১০০ শতাংশের কাছেই নাগরিকত্বের বৈধ নথি পত্র নেই। তাই এন আর সি নবীকরণের বাঙালি হিন্দুদের সব থেকে বেশি বিপদে পড়তে হচ্ছে। সংশােধনী বিলটি আইনে পরিণত হলে সেই সমস্যা থাকবে না। আজকের খানপাড়া ষ্টাফ এ্যাডমিনিষ্ট্রিটিভ কলেজের প্রেক্ষাগৃহে শুনানি চলার সময় বিভিন্ন দল সংগঠন এমনকি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিকদেরও বরাক উপত্যকা বিরােধী বিভিন্ন মন্তব্য করতে দেখা গেল। অনেকে দাবি করলাে, বরাক উপত্যকায় লক্ষ লক্ষ অবৈধ বাংলাদেশী আছে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় মাত্র এক দিন শুনানি, বরাক উপত্যকায় মাত্র তিনটি জেলায় ২দিন শুনানি কেন? সাড়া আসাম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের উপদেষ্টা সুকুমার বিশ্বাস আজ মন্তব্য করেন, রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা যথেচ্ছারভাবে বাঙালি বিরােধী এবং বরাক উপত্যকা বিরােধী মন্তব্য করে প্রমাণ করে দিল তারা নিরপেক্ষ চরিত্র ত্যাগ করেছে।
0 comments: