ডিটেনশন ক্যাম্প না কি নো ম্যানস ল্যান্ড : কোথায় হবে অবৈধ নাগরিকদের জায়গা

গুয়াহাটি : জাতীয় নাগরিকপঞ্জী চূড়ান্ত খসড়া তালিকার কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের আগেই তার প্রথম পৰ্য্যায়ের তালিকা প্রকাশ পাবে। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার আশংকা প্ৰকাশ করেছে, এন আর সি তালিকা প্রকাশের অব্যবহিতর পরই রাজ্যে আইন-শৃংখলার পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। সংসদে রাজ্যের রেলওয়ে মন্ত্রী রাজেন গোহাঁই এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু সেই আশংকায় প্রকাশ করেছেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীশ মুখী সেনা বাহিনীর অফিসারদের সঙ্গে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। কেন্দ্রীয় গৃহসচিব রাজীব গাওয়ার শুক্ৰবার অসম সফরে আসছেন। নাগরিকপঞ্জী নবায়নের কাজ ছাড়াও আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। তিনি  রাজের পুলিশ প্রধান মুকেশ সহায় এবং সেনা বাহিনীর পদস্থ অফিসার এবং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। 
বাঙালি হিন্দুদের স্বার্থে কেন্দ্রের প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের তীব্র বিরোধিতা করে আজ অগপর পক্ষ থেকে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত এই প্রস্তাবিত বিলের চরম বিরোধীতা করে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের ইঙ্গিত দিয়েছেন। 
রাজ্যের এক বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী অভিযোগ করেছেন, নাগরিকত্ব বিল পাশ হলে প্রায় ২০ লক্ষ বাঙালি হিন্দু রাজ্যের অসমীয়া ভাষা-সংস্কৃতিকে বিপন্ন করে তুলবে। সেই বুদ্ধিজীবী বরাক উপত্যকার প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করে বলেছেন, সেখানে সবাই বাংলাভাষী। তার ফলে অসমের ভাষা-সংস্কৃতি সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে। 
এদিকে দিল্লী যাওয়ার পথে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবিন্দ্র পুরকায়স্থ বলেছেন, নতুন করে কোনও বাংলাদেশী আর বাংলাদেশ থেকে আসছে না। যারা বর্তমানে আছে, তাদেরকেই নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি ৰঞ্জিৎ দাসের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল দিল্লীতে গিয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করার সপক্ষে ওকালতি করবেন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথের সঙ্গে দেখা করবেন। সেই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবিন্দ্র পুরকায়স্থ, বিধায়ক শিলাদিত্য দেব প্রমুখ। 
নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির এক মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন, অসম চুক্তির ৬নং ধারা মেনে ১৯৭১ সালের ২৪মার্চ নয়, ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকার ওপর ভিত্তি করে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী নবায়নের কাজ চলছে। তিনি বরাক উপত্যকার কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে একই নথি পত্র বারবার ভেরিফিকেশন করে নাগরিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। তার আশংকা— সারা রাজ্যে হিন্দু-মুসলিম মিলিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ বাংলাভাষী মানুষের নাম নাগরিকপঞ্জীতে অন্তর্ভুক্ত হবে না। রাজ্যে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভয় ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। 
জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর পক্ষ থেকে অভয় দিয়ে বলা হয়েছে, প্রথম তালিকায় নাম না থাকলে, দ্বিতীয় তালিকায় নাম থাকবে। তা যদি না থাকে তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিদেশী ট্রাইবুন্যালের দ্বারস্থ হতে হবে। কিন্তু জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর কর্তৃপক্ষ এ কথা বলেন নি।ট্রাইবুনাল যাদের নথি পত্র অবৈধ বলে বিবেচিত হবে তাদের ভাগ্যে কি ঘটবে? রাজ্যের জাতীয়তাবাদী মহলের ব্যাখ্যা, যাদের নথি পত্র বৈধ হবে না, এই রকম লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু মানুষের ভোটদানের মতো রাজনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে শুধুমাত্র কাজের অধিকার স্বীকার করে নিয়ে তাদেরকে অস্থায়ীভাবে এদেশে থাকার ভিসা মঞ্জর করা হবে। 
প্রসঙ্গত দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী শিলচরের একজনসভায় বলে গিয়েছিলেন, অসমের জটিল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে একজনকেও বিতাড়ণ করা সম্ভব নয়। যারা আছে, তাদের কে সাময়িকভাবে ওয়ার্ক পামিট দেওয়া হােক। রাজ্যে কাজ করবে, শ্রম দেবে কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। দিশপুর-দিল্লী যাওয়ার স্বপ্ন অধরায় থেকে যাবে। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে বলেই দিয়েছে, অসমে একজনও বাংলাদেশী নেই। তাই বাংলাদেশীদের গ্রহণ করার প্রশ্নই উঠছে না। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, অবৈধ নাগরিকদের জায়গা কী সারা জীবন ডিটেনশন ক্যাম্পই হবে? না নো ম্যানস ল্যান্ডে গিয়ে দেশহীন, নিরাপত্তাহীন পশুর মতো জীবন যাপন করতে হবে ?

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: