বর্ষার পরেও ডেঙ্গি–প্রকোপ! তার মধ্যে সোমবার দিনভর ঝিরঝিরে বৃষ্টি হওয়ার ফলে ডেঙ্গির প্রকোপ আগামী কয়েক দিনে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। চরিত্র বদলে আরও ভয়ানক ডেঙ্গিবাহিত মশার লার্ভা। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। উদ্বেগে চিকিৎসকেরা। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। দক্ষিণ দমদমের ডেঙ্গির প্রকোপ দেখে অনেকেই বলেছিলেন, লাগোয়া এই পুর এলাকা মানুষের চিন্তার কারণ হতে পারে। বাস্তবে হলও ঠিক তাই। শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন ডেঙ্গির দাপাদাপি। জেলা থেকে কলকাতার গড়ফা, সেলিমপুর, ঢাকুরিয়া, যাদবপুর, কসবা, রানিকুঠি, নেতাজিনগর এবং বেহালার বেশ কিছু এলাকায় পুজোর সময় থেকে বেড়েছে ডেঙ্গির প্রকোপ।
পুজোর সময় অনেকেরই ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল। ক’দিন হাসপাতালে থেকে আবার ছাড়াও পেয়েছেন। পুজোর সময় অনেকেই বাইরে বেরোতে পারেননি বলে তাঁদের মন খারাপ। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীদের মতে, কোথা থেকে ডেঙ্গি হয়েছে জানি না তবে পুরসভাকে আরও তৎপরতার সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ‘বহু রোগী হাসপাতালে আসছেন জ্বর নিয়ে। এনএস ওয়ান পজিটিভ ধরা পড়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়িও চলে গেছেন। কিন্তু তার পরে ফের বিপত্তি। এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন যে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে। ডেঙ্গি–ভাইরাসের চরিত্র বদলে যাওয়ায় মারাত্মক আকার নিয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গি ধরা পড়ছে না অথচ ডেঙ্গির মতন উপসর্গ। হঠাৎ করে প্লেটলেট কমে যাচ্ছে। এ নিয়ে আরও বিশদে গবেষণার প্রয়োজন।’
বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে ভুগছেন। জ্বর হচ্ছে ডেঙ্গির মতন কিন্তু রক্ত পরীক্ষায় নেগেটিভ রেজাল্ট। কয়েকগুণ চিন্তা বাড়িয়েছে অজানা জ্বর।
শুধু কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকাই নয়, ডেঙ্গি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিধাননগর পুর এলাকাতেও। কেষ্টপুর, বাগুইআটিতে দু–এক জনের মৃত্যু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গিতে ৫,৩৮৯ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। উত্তর চব্বিশ পরগনার হাবড়া, বারাসত–সহ বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর, দমদম— সর্বত্রই ছবিটা প্রায় একরকম। চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি জানিয়েছেন, হঠাৎ করে অবস্থার অবনতি হচ্ছে। সাধারণত জ্বর কমে যাওয়ার পর প্লেটলেট কমে যায়। এখন জ্বরের দ্বিতীয় দিন থেকেই প্লেটলেট কমছে। বৃষ্টির পরে বিভিন্ন ছোট ছোট পরিসরে জল জমে থাকলে পুনরায় ডেঙ্গির মশার লার্ভা বংশবিস্তার করবে। এক নাগাড়ে মুষলধারে বৃষ্টি হলে ডেঙ্গির লার্ভা ধুয়ে চলে যেত। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথি আগেই জানিয়েছিলেন, এ বছর পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গি–২ এবং ডেঙ্গি–৪, এই দু’টি প্রজাতির উপস্থিতি বেশি করে নজরে আসছে।
এক্ষেত্রে দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটিয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। ফলে বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রোগীদের ডেঙ্গি চিহ্নিত হওয়ার ৪ দিনের মধ্যেই দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কিন্তু কেন এত মারাত্মক রূপ ধারণ করছে এই মারণরোগ? নেপথ্যে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণত বর্ষার পর থেকে ডেঙ্গির প্রকোপ কমার কথা, কিন্তু এখন তেমনটা হচ্ছে না। বর্ষাকালের চরিত্র বদল হওয়ায় উল্টে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি। পরজীবী বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই সময়ে সাধারণত ডেঙ্গি কমে যাওয়ার কথা। অথচ এখনও প্রচুর ডেঙ্গি হচ্ছে। কিছুটা প্রকোপ কমার পর ঝিরঝিরে বৃষ্টি আবার তা বাড়িয়ে তুলছে। এখন পুরোপুরি শীতকাল না পড়া পর্যন্ত প্রকোপ কমবে না বলে তাঁরা মনে করছেন। শহরে শুধু ডেঙ্গি নয়, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়াও হচ্ছে।
0 comments: