ওদালগুড়িতে বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের অধিবেশন
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি :
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সােনােয়াল বাঙালি জাতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, বিশ্বে বাঙালি জাতির পৃথক এক পরিচয় আছে। বৌদ্ধিক, আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাঙালি জাতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ মনিষীরা তাদের শক্তিশালী লেখনির মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে বাঙালিদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আমিও তাদের সেই জীবনাদর্শকে পাথেয় করে বরাক বহ্মপুত্র, পাহাড়-সমতলে বসবাসকারী প্রতিটি জনগােষ্ঠীর সম-উন্নয়ন এবং সম-মর্যাদা প্রদানের লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বাঙালি সম্প্রদায় বৃহত্তম অসমীয়া জাতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বৃহত্তর অসমীয়া জাতিকে শক্তিশালীরূপে উন্নীত করার জন্য বাঙালি সম্প্রদায়কে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
আজ ওদালগুড়ির টংলায় পুজোখােলা ময়দানে সারা অসম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের দ্বিবার্ষিক অধিবেশনে প্রকাশ্য সভায় এই কথা বলেন।
রাজ্যে জুরে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির কাজ চলছে। বংশপঞ্জি পরীক্ষার নামে রাজ্যের ধর্মীয় ভাষিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। নানা ভাবে তাদেরকে প্রশাসনিক হয়রানির শিকারও হতে হচ্ছে। যুব ছাত্র ফেডারেশন ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এক স্মারক পত্র দিয়ে নাগরিকত্ব সংশােধনী বিলটি যাতে কেন্দ্রীয় সরকার পাস করে তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রী আজ আস্বস্ত করে বলেন, “আমি থাকতে বাঙালিদের চিন্তার ও শঙ্কিত হওয়ারও কারণ নেই।
যুব ছাত্র ফেডারেশনের উপদেষ্টা সুকুমার বিশ্বাসের পৌরােহিত্যে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সব সম্প্রদায়ের জীবন সম্পত্তির নিরাপত্তাবিধানে সরকার দায়বদ্ধ। বরাক উপত্যকার সার্বিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, শিলচরে এখন ৮টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করছে। ডিব্ৰুগড় পর্যন্ত তা সম্প্রসারিত হবে। শিলচর থেকে ডিব্ৰুগড় স্পাইসজেট সেবা শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকার শিলচরে স্বামী বিবেকানন্দ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, করিমগঞ্জে মেডিকেল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অচিরেই বরাকে মিনি সচিবালয় স্থাপনের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। অসমীয়া, বাঙালি তথা অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সাতপুরুষের ঐক্য সম্প্রীতি অটুট রাখার জন্য আহ্বান জানান।
পুৰ্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যও মুখ্যমন্ত্রীর মতাে বাঙালিদের আস্বস্ত করে বলেন, তাদের কোনও ভয়ের কারণ নেই। শীঘ্রই ভালাে খবর আসবে। কংগ্রেসের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মাতৃভাষা বাংলার জয়গান করে বলেন— ভালােবাসি মাতৃভাষাকে, মায়ের ভাষা মাতৃভাষা, সে ভাষাকে ভালােবাসি, ভালােবাসি বাংলাভাষা, ভালাবাসি বিশ্বজনের মাতৃভাষা। মুখ্যমন্ত্রীর বাঙালিদের চিন্তার কোনও কারণ নেই বলায় কমলাক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি কমল চৌধুরী নাগরিকত্ব বিল সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশের হিন্দুদের এ রাজ্যে পুনর্বাসনের ব্যবস্থায় যদি আপত্তি থাকে তবে অন্য কোনও রাজ্যে ব্যবস্থা করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। জনস্বাস্থ্য কারিগরী মন্ত্রী রিহণ দৈমারি বৃহত্তর টংলা অঞ্চলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাঙালিদের স্বার্থে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব, সাংসদ রমেন ডেকা বিটিসির কার্যবাহী সদস্য জগদীশ সরকার, বিধায়ক কমলী বসুমতারি, প্রাক্তন বিধায়ক মিশন রঞ্জন দাস, মহেশ্বর বােড়াে প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
0 comments: