কাজিরঙায় গন্ডার হত্যায় বহিঃশক্তির হাত আছেঃ সন্দেহ বনমন্ত্ৰী প্রমিলার

অসহায় বনমন্ত্রী, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের কথা শুনছে না

  • অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি 

মরিয়ানির নকছারিতে রেলওয়ে লাইন অতিক্রম করার সময় একটি হস্তী শাবক মঙ্গলবার প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়। তার মা শাবকটিকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেও বিফল হয়। বনমন্ত্রী প্রমিলা রাণী ব্ৰহ্ম টিভির পর্দায় শাবকটির যন্ত্রণাকাতর দৃশ্য দেখে খুবই মর্মাহত হন। তিনি তৎক্ষণাৎ বন বিভাগকে শাবকটির উপযুক্ত চিকিৎসার নির্দেশ দেন। রাজ্যে অধিকাংশ দিন রেললাইন চাপা পড়ে হাতির মৃত্যু ঘটেই চলেছে। হাতিদের করিডরের ওপরদিয়ে অধিকাংশ ট্রেন লাইন যাওয়ার জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। বনমন্ত্রী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেন— রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে, হাতিদের করিডর অঞ্চল অতিক্রম করার সময় ট্রেনের গতি অন্তত ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার করার জন্য। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের অনুরোধ গুরুত্বই দিচ্ছে না। ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের নীচে ট্রেন চালাতে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ। সর্বত্র ডবল লাইন হচ্ছে। তার ফলে পাহাড়-জঙ্গল ধ্বংস হচ্ছে। ক্রমশঃ সংকুচিত হচ্ছে বনাঞ্চল। রেলওয়ের রঙিয়া ডিভিশনের ডি আর এম দীপারবিল পক্ষী অভয়ারণ্যে করিডরগুলিতে মৌ মাছির গুঞ্জন শুনিয়ে হাতিদের তাড়াবার প্রস্তাব দেওয়ার কথা শুনে বনমন্ত্রী হাসলেন। বলেন, এ এক অদ্ভূত-অবাস্তব সিদ্ধান্ত। 
কাজিরঙা রাষ্ট্ৰীয় উদ্যানে এক শৃঙ্গ বিশিষ্ট বিপন্ন প্রজাতির গন্ডারের হত্যাকান্ড কিছুটা কমলেও একবারে বন্ধ হয়নি। বনমন্ত্রী প্রমিলা রাণী ব্ৰহ্মা মঙ্গলবার এই সম্পর্কে বলেন, এই গন্ডার হত্যার পিছনে বহিঃশক্তির হাত থাকতে পারে। তিনি আন্তঃর্জাতিক চােরা শিকারির দিকেই আঙুল তুললেন। ইতিমধ্যে চীন, ম্যানমারের এক চক্রের বিরুদ্ধে এই গন্ডার হত্যার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, অত্যাধুনিক চােরা শিকারিদের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার জন্য অসম সরকার ১০ কোটি টাকার অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ক্রয় করেছে। তাদের হাতে এ কে ৪৭সহ অত্যাধুনিক অস্ত্ৰ-শস্ত্ৰ কাজিরঙার বনকৰ্মীদের হাতে শীঘ্রই তুলে দেওয়া হবে। ৪৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকার কাজিরঙা রাষ্ট্ৰীয় উদ্যানের মধ্য দিয়ে ৩৭ নং জাতীয় সড়ক চলে গেছে। এই সড়কে যানবাহন চলাচলের সময় গাড়ীর চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে শয়ে শয়ে বন্যজন্তু মারা যায়। তাই জাতীয় সড়কের বিকল্প হিসাবে ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রাক্তন বনমন্ত্রী প্ৰদ্যুৎ বরদলৈও এর আগেও বিকল্প পথের জন্য ফ্লাই ওভারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। 
কাজিরঙা রাষ্ট্ৰীয় উদ্যানে প্রায় ৩ হাজার গন্ডারসহ অন্যান্য জন্তু-জানোয়াররা প্রতি বছর বন্যার সময় হাজার হাজারে জলে ডুবে মারা যায়। বিগত বন্যায় প্রায় ৫০০ বন্য জন্তু মারা গেছে। তার মধ্যে ৩৩ টি গন্ডার। তাই উদ্যানের মধ্যে হাইল্যান্ড তৈরী করে বন্যা প্লাবিত জন্তুদের বাঁচানাের চেষ্টা করা হয়। হাইল্যান্ড তৈরী নিয়েও আগে ব্যাপক দুৰ্নীতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হাইল্যান্ডগুলি খুবই ছােট। ৬ বিঘার মধ্যে তা তৈরী করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বনমন্ত্রী জানান, পূরণো হাইল্যান্ডগুলি বন্য জন্তুদের পরিচিত। তাই সেই হাইল্যান্ডগুলিকেই উন্নতি করার চেষ্টা হচ্ছে। 
অগপর প্রাক্তন মন্ত্রী কমলা কলিতা অভিযোগ করলেন, বনভোজের নামে জঙ্গলে পিকনিক স্পটগুলিতে ব্যাপক হারে দূষণ ছড়ানো হচ্ছে। প্লাষ্টিক, কাগজ, মদের বটল প্রভৃতি ফেলে দূষণতো ছড়াচ্ছেই, সেই সঙ্গে বিকট শব্দে লাউড স্পীকারে ডি জে বাজিয়ে বন্য জন্তুদের বিরক্ত করা হচ্ছে। সেই কথা শুনে বনমন্ত্রী আক্ষেপের সুরে বলেন— মানুষ যদি সজাগ না হয়, বন্য জন্তুদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ না করে, তবে দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তিনি স্বীকার করেন, রাজ্যে হাজার চেষ্টা করেও জঙ্গল ধ্বংস বন্ধ করতে পারছেন না। তবে কিছুটা কমেছে। 
আমচাং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে সরকারের মধ্যে বিভিন্ন মতের সৃষ্টি হয়েছে। ঘর-বাড়ী, বিদ্যালয় উচ্ছেদ করা হলো। কিন্তু বনাঞ্চলের মধ্যে দু-দুটি সিমেন্ট কারখানা বহাল তবিয়তে চলছে। তা উচ্ছেদ করা হলো না। এই সম্পর্কে বনমন্ত্রী প্রমিলা রাণী ব্ৰহ্ম অসহায় সুরে বলেন— “কি করব বলুন, সরকার বলছে, কারখানা দুটি থেকে বৃহৎ পরিমান রাজস্ব পাওয়া যাচ্ছে। দূষণ ছড়ালেও তাদের হাত-পা বাধা। কিছুই করার নেই।”

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: