বিটিএডির আইন সভায় ৩০টি আসন বড়োড়া, মাত্র ৫টি আসন বৃহতম অবড়ো জনগােষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটী :
অসমের ভূমি রাজস্ব আইনের ১৮৮৬-র ১০নম্বর ধারা অনুযায়ী বিটিএডি স্বায়িত্ব শাসিত। পরিষদ গঠনের সময় কোচ রাজবংশী, নেপালী, নাথ-যােগী এবং সাঁওতাল-আদিবাসী জনগােষ্ঠীকে সংরক্ষিত জনগােষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত করে ভূমিসহ সব অধিকার প্রদান করা হয়। দুই বড়াে চুক্তিতে তা স্বীকারও করে নেওয়া হয়। ২০০৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী এবং তার আগে ১৯৯৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী দু-দুটি বড়াে চুক্তি সম্পাদনের সময় থেকে বিটিএডি এলাকায়। হিন্দু-মুসলিমসহ অন্যান্য জনগােষ্ঠীর যে সব মানুষ স্থায়ীভাবে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে আসছেন তাদের ভূমিসহ অন্যান্য অধিকারকেও স্বীকৃতি জানানাে হয়। রাজ্যে ভূমিনীতি সংক্রান্তে গঠিত হরি শঙ্কর ব্রহ্ম নেতৃত্বাধীন কমিটির পরামর্শের সঙ্গে সাযুজ্য রক্ষা করে এবং ১৯৫১সালকে ভিত্তিবৰ্ষ করে রাজ্যের নাগরিকত্ব বা ‘খিলঞ্জীয়া’ প্রমাণ করার দাবির সঙ্গে বিটিএডি প্রশাসকদের অবড়াে বিরােধী ভূমিনীতির সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছে অবড়াে সংগঠনগুলি।
বিটিএডির অবড়াে সাংসদ নব শরনীয়াও প্রায় একই মনােভাব পােষণ করেছেন। রাজ্যজুড়ে অবড়াে জনগােষ্ঠীর সংগঠনগুলির জোরদার বিটিসি বিরােধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিসি প্রধান হাগ্রামা মহিলারী কিছুটা পিছিয়ে এসে জানিয়ে দিয়েছেন, তারা সংরক্ষিত জনগােষ্ঠীর ভূমির অধিকার কেড়ে নিচ্ছে না। ১২ মার্চ বিধানসভায় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এন আর সির মতাে জলন্ত ইসুর পাশাপাশি বিটিসি প্রশাসকের ভূমিনীতির বিরুদ্ধে এ আই ইউ ডি এফ, কংগ্রেস এমনকি শাসক বিজেপি এবং তাদের শরিকদল অগপও সরব হবে বলে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।
১৯৯৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী অল বড়াে স্টুডেন্ট পিপলস্ এ্যকশন কমিটির সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। তারপর অনেক জল গড়িয়ে গেছে, অনেক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পর ২০০৩ সালের ১০ফেব্রুয়ারী হাগ্রামা মহিলারী নেতৃত্বাধীন বড়াে লিবারেশন টাইগারের সঙ্গে পুনরায় রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। আত্মগােপনকারী জঙ্গি জীবনের নাম পাল্টিয়ে অস্ত্রশস্ত্র পরিত্যাগ করে গণতান্ত্রিক ব্যৱস্থায় ফিরে আসেন হাগ্রামা মহিলারী। তখন থেকেই এন ডি এফ বির মতাে মারাত্মক জঙ্গি সংগঠনের দৌড়াত্বও শুরু হয়। তার ফলে অবড়াে জনগােষ্ঠীর জীবন সম্পত্তির অধিকার কোনও দিনই সুনিশ্চিত হয়নি। ২০০৩ সালের ১০ফেব্রুয়ারী তদানীন্তন দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী লাল কৃষ্ণ আদবানী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর উপস্থিতিতে দিল্লীতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সচিব আর সি জৈন এবং অসম সরকারের পক্ষে তদানীন্তন মুখ্য সচিব পি কে দত্ত ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।
অসমের কোকরাঝাড়, চিরাং, বাক্সা এবং ওদালগুড়িকে নিয়ে বিটিএডির চার জেলা ছাড়াও ধুবড়ি, বঙাইগাঁও, বরপেটা, নলবারী, কামরূপ (গ্রাম্য), দরং এবং শােণিতপুর জেলার বড়াে অধ্যুষিত গ্রামগুলিকেও বিটিএডির অধীনে এনে ৮৮২১.৬৮ বর্গ কিঃমিঃ এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করে বিটিএডি প্রশাসন গঠন করা হয়। তার নেতৃত্বে আছে ১২ জন সদস্য বিশিষ্ট বড়ােল্যাণ্ড টেরিটরিয়াল কাউন্সিল (বিটিসি), মাথায় আছেন হাগ্রামা মহিলারী।
এ ছাড়াও কাৰ্বি আংলং জেলায় বসবাসকারী বড়াে অধ্যুষিত গ্রামগুলিকেও সংবিধানের ষষ্ঠ তপসিলের অন্তর্ভূক্ত করে অবড়াে জনগােষ্ঠীর ভূমিসহ অন্যান্য অধিকার। খর্বের পর্ব শুরু হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য অঞ্চলের বসবাসকারী অনগ্রসর উপজাতি জনগােষ্ঠীর জন্য ষষ্ঠ তপসিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংবিধান সংশােধন করে নিম্ন অসমে সমতলে বসবাসকারী বড়ো জনগােষ্ঠীর মানুষদের জন্যেও ষষ্ঠ তপসিলের সুবিধা দেওয়া হয়। রাজ্যের কাৰ্বি আংলং পার্বত্য জেলা ছাড়াও ১১টি জেলায় এক বৃহৎ সংখ্যক অবড়াে জনগােষ্ঠীর অধিকার খর্ব হয়েছে। বিটিএডি এলাকায় ২০১১-র জনগণনা অনুযায়ী জনসংখ্যা হচ্ছে ৩৫ লক্ষ ১৫ হাজার ৩৫৫ জন। তারমধ্যে অবড়াে জনগােষ্ঠীর সংখ্যা ৬৫ শতাংশের বেশী। এই বৃহত্তর জনগােষ্ঠীর রাজনৈতিক অধিকার অগ্রাহ্য করে বিটিএডিতে আইন সভা গঠন করা হয়। ৪৬ আসন বিশিষ্ট আইন সভার ৩০টি। আসন বড়ােদের জন্য সংরক্ষিত, মাত্র ৫টি আসন অবড়াে জনগােষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত, ৫টি আসন সবার জন্য খােলা এবং ৬টি আসনে প্রার্থীদের মনােনীত করবেন রাজ্যপাল। যে সব জনগােষ্ঠীর আইন সভায় প্রতিনিধি নেই, তাদের মধ্যে থেকেই ৬জনকে মনােনীত করবেন রাজ্যপাল, দুইজন অবশ্যই মহিলা প্রতিনিধি থাকবে। এই আইন সভার গঠন প্রণালী বলে দিচ্ছে চরম বৈষম্যের আধারে তৈরী হয়েছে বড়াে চুক্তি।
বৃহৎ সংখ্যক অবােড়াে জনগােষ্ঠী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে মাত্র ৫টি। আসনে, তবে অবশ্য ৫টি আসন খােলা রাখা আছে। সেখানেও অবড়ােদের সঙ্গে বড়াে জনগােষ্ঠীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। বড়াে চুক্তিতে ৩০৮২ গ্রামকে বিটিএডিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এক-দুই শতাংশ বড়াে মানুষের গ্রামকেও বিটিএডিতে অন্তর্ভূক্ত করে অবড়াে জনগােষ্ঠীর অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলে অবড়াে সংগঠনগুলি প্রথম থেকে অভিযােগ করেই চলেছে। তার কোনও সুরাহা হচ্ছে না। মাত্র ৩৫ শতাংশ জনগােষ্ঠীকে সাংবিধানিক সুবিধার আওতায় আনতে গিয়ে ৬৫ শতাংশ অবড়াে জনগােষ্ঠীকে অবহেলা করা হচ্ছে। তাই অবহেলা, বঞ্চনা, চরম বৈষম্যের অভিযােগে বার বার বিটিএডি জ্বলছে। দু-দুটি বড়াে চুক্তির কুফল ভুগতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ অবড়াে জনগােষ্ঠীকে।
0 comments: